ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বুধবার গাজার একটি অংশ দখলের ঘোষণা দেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজা উপত্যকার ওই অংশকে তিনি ‘মোরাগ অ্যাক্সিস’ বলে অভিহিত করেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এ খবর জানিয়েছে। গাজা উপত্যকায় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিক বিস্তৃত ভূখণ্ডটি খান ইউনিস এবং রাফাহর মধ্যে অবস্থিত। কথিত এই মোরাগ অ্যাক্সিস মূলত কৃষিজমির সমন্বয়ে গঠিত। এই ভূখণ্ডের কিছু অংশ আবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মানবিক অঞ্চল বলে ঘোষণা করেছিল। তখন এক ঘোষণায়, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের এই অংশে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল তারা। অবশ্য নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক ঘোষণার আগে এই অংশকে অ্যাক্সিস বা করিডর হিসেবে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়নি।
মোরাগ নামটির প্রেক্ষাপটও এই বেলা একটি জানিয়ে রাখা ভালো। ১৯৭২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওই অঞ্চলে একটি ইসরায়েলি বসতি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল। সেই বসতির নাম ছিল মোরাগ।
ইসরায়েলি সেনারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এমনকি চিকিৎসাকর্মীদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে হেঁটে পালিয়ে গেছেন। সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে রাফাহ শহরকে ঘিরে ফেলা। ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার অংশ হিসেবেই খান ইউনিস ও রাফাহকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে সেনাবাহিনী।
এদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজকে এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, মোরাগ অ্যাক্সিস দখলের ঘোষণায় তারা অবাক হয়েছিলেন। কারণ রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়নি। ফলে এমন ঘোষণা বরং তাদের সেনাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। মোরাগ অ্যাক্সিসের দখল নেওয়ার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করে গাজার ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই চাপের মাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা হবে।
‘পাহাড় বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে শিশুদের ওপর’ : গাজা উপত্যকার খান ইউনিস শহরে গতকাল ভোরে একটি আবাসিক ভবনে বোমা হামলা করে দখলদার ইসরায়েল। এতে অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ভবনটির বাসিন্দা জামাল আল-মধৌন।
তিনি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, কীভাবে মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছেন এবং তার চোখের সামনে কীভাবে নারী ও শিশুরা প্রাণ হারিয়েছেন।
জামাল বলেন, আমরা তখন ঘুমাচ্ছিলাম... হঠাৎ সব ঘর গুঁড়িয়ে গেল; ছাদ ধসে পড়ল নিরীহ নারী ও শিশুদের মাথার ওপর। এমন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে, যেগুলো পর্বতকে ছাই করে দিতে পারে তা ছোড়া হচ্ছে শিশুদের ওপর।
জামাল অভিযোগ করেন, তারা (ইসরায়েল) বলছে, তারা নাকি যোদ্ধাদের লক্ষ্য করছে। সব মিথ্যা কথা। তাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিম পরিচয়ধারী যে কোনো মানুষকে হত্যা করা। ওই নিরীহ নারী-শিশুরা সবাই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।