সৌদি আরবের ভিসার জন্য এসেছিলেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা রাজিব হাসান (২০)। ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে গেলে দেখা যায় মেশিনে তার আঙুলের ছাপ উঠছে না। রাজিব বলেন, অনেকক্ষণ চেষ্টার পরেও আঙুলের ছাপ না উঠলে তারা আমাকে ফিরিয়ে দেন। এভাবে তিনবার ভিসা আবেদন করে আঙুলের ছাপ না আসায় ফিরে এসেছি। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়ে তারা ফিরিয়ে দিয়েছেন। শুধু ভিসা নয় জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট করতে গিয়েও আমি একই রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি।
রাজিবের মতো আঙুলের ছাপ কাজ না করায় ভোগান্তিতে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ। জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ভিসা, ব্যাংকিং কার্যক্রম, মোবাইলের সিম কেনা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিন উপস্থিতি এমনকি মোবাইলের মতো বিভিন্ন ডিভাইস চালু করতেও আঙুলের ছাপ প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাতের ছাপ কাজ না করায় অসুবিধায় পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, পুরো শরীরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাত। পেশাজনিত কারণে কিংবা দৈনন্দিন কাজে হাতে সব সময় ঘর্ষণ লাগছে। যারা দীর্ঘ সময় গাড়ি চালান, কারখানায় কাজ করেন, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, বাসাবাড়ির কাজ করেন তাদের হাতের চামড়া স্বাভাবিক থাকা খুব মুশকিল। এ ছাড়া বিভিন্ন জন্মগত রোগের কারণে হাতের ছাপ কাজ করে না। হাতের বিভিন্ন চর্মরোগের কারণেও চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাত কেটে যাওয়া কিংবা পোড়ার মতো দুর্ঘটনার রোগীরাও এ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আহাম্মদ আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাতের ছাপ পাওয়া যায় না এমন অসংখ্য রোগী আমাদের কাছে প্রায়ই আসেন। পেশাজনিত কারণে হাতের ব্যবহার, হাতের বিভিন্ন চর্মরোগের কারণেও এটা হয়ে থাকে। খুব অল্প কিছু মানুষের জন্মগত ত্রুটিও থাকে। এই সমস্যা একটা ট্যাবলেট বা মলম ব্যবহার করলে সমাধান হয়ে যাবে এমন না। সমাধান হতে কোন রোগীর কতদিন সময় লাগবে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। এজন্য আমরা জীবনযাপন পরিবর্তন, ওষুধসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিই।’ তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষের হাত ধোয়া অভ্যাস গড়ে ওঠেছে। অতিরিক্ত হাত ধোয়া এবং কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণেও অনেকের হাতের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না। ইদানীং এ সমস্যার রোগী অনেক বেড়েছে। কিন্তু হাতের ছাপের বিকল্প চোখের আইরিশ কিংবা এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ভোগান্তি কমছে না।’ মাস তিনেক আগে জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন সাভারের বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন (২৩)। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র করার জন্য আমি সব কাগজপত্র নিয়ে যাই। কিন্তু আমার যাবতীয় কাগজ ঠিক থাকলেও হাতের ছাপ নিতে বাধে বিপত্তি। অনেক চেষ্টার পরেও হাতের ছাপ না আসায় তারা আমাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলে ফিরিয়ে দেন। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমার এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি। একই সমস্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা মার্জিয়া বেগমের (৬০) ওমরাহ করতে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তার স্বামী আরমান হোসেন বলেন, ভিসা করার সময়ও আমার স্ত্রীর আঙুলের ছাপজনিত সমস্যা হয়েছিল। ফ্লাইটের আগের দিন আমাদের ভিসা এজেন্ট জানান আঙুলের ছাপ না পাওয়া গেলে দুই দেশের বিমানবন্দরে সমস্যায় পড়তে হবে। পরে তার পরামর্শে আমরা একজন সিনিয়র চিকিৎসকের সনদ নিয়ে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পেরেছি।