গাজায় ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও সিভিল ডিফেন্সের ১৫ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। তারা কেউ যোদ্ধা ছিলেন না, সন্ত্রাসীও ছিলেন না। তারা ছিলেন মানবিক সহায়তাকর্মী। যারা আহতদের পাশে দাঁড়াতে ছুটে গিয়েছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
গত ২৩ মার্চ, দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী একটি অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার গাড়িবহরে হামলা চালায়। এতে ৮ জন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ৬ জন সিভিল ডিফেন্স সদস্য এবং ১ জন জাতিসংঘকর্মী নিহত হন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে, যানবাহনগুলো ‘চিহ্নিত’ ছিল না এবং সন্ত্রাসী পরিবহন করছিল বলে সন্দেহ হয়েছিল।
কিন্তু এটি ছিল একটি ‘মিথ্যা’।
নিহত চিকিৎসাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল থেকে উদ্ধার হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, যানবাহনগুলোতে লাল আলো জ্বলছিল। পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত ছিল এবং কোনো অস্ত্রের অস্তিত্ব ছিল না। রিফাতের মৃতদেহ একটি গণকবরে পাওয়া যায়, সেখানে আরও ১৩টি মরদেহ ছিল, যাদের কারও মাথায়, কারও বুকে গুলির চিহ্ন এবং অনেকের হাত ছিল বাঁধা।
মৃত্যুর পরও তাদের প্রমাণ করতে হয়েছে যে তারা সহায়তাকর্মী ছিলেন।
এতোকিছুর পরেও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর বেশিরভাগই প্রথমে ইসরায়েলের বক্তব্য প্রচার করছে: “ইসরায়েল বলছে...”, “আইডিএফ জানাচ্ছে...”, “একটি সামরিক সূত্র জানিয়েছে...”। বিষয়টা এমন যে, এই মিথ্যা শব্দগুচ্ছগুলো যেন রক্তমাখা চিকিৎসাকর্মীর ইউনিফর্ম থেকেও বেশি ‘প্রমাণস্বরূপ’ হয়ে ওঠে।
তবে এটা কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি সংগঠিত ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার। যে মিথ্যাচার তারা যুগ যুগ ধরে করে আসছে।
পশ্চিমা মিডিয়া আমাদেরকে তাই বিশ্বাস করাতে বাধ্য করে যা ইসরায়েল বলছে। এই অবস্থানে থেকে হাসপাতালকে প্রমাণ করতে হয় যে তারা হাসপাতাল, স্কুলকে প্রমাণ করতে হয় তারা শিশুদের স্কুল, আর শিশুদের প্রমাণ করতে হয় যে তারা সন্ত্রাসীদের ঢাল নয়। পশ্চিমা মিডিয়ার এই ব্যবস্থায় ফিলিস্তিনি অস্তিত্বকেই ‘হুমকি’ হিসেবে দেখা হয়।
এই অবস্থা, এই অবমূল্যায়ন, মানবিকতা ধ্বংসের নামান্তর।
গাজার বাসিন্দা হিসেবে আমি জানি রেড ক্রিসেন্টের ভেস্ট (পোষাক) কী বোঝায়। এই ভেস্ট বোঝায় যখন চারপাশে মৃত্যু আর ধ্বংস, তখনও কেউ সাহায্য করতে আসছে, আসছে জীবন বাঁচাতে। কিন্তু এখন সেই ভেস্ট পরা মানুষদের লাশ গণকবরে পাওয়া যায়।
আমরা শুধু শোক পালন করি না, আমাদের শোককেও প্রমাণ করতে হয়। আমরা শুধু মরদেহ কবর দেই না, বরং তাদের মৃত্যুকেও 'নির্দোষ' প্রমাণ করতে হয়।
এই ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী ও উদ্ধারকর্মীর মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ফিলিস্তিনি হতে গেলে কেবল জীবন বাঁচানোই যথেষ্ট নয় বরং প্রমাণ করতে হয়, তোমরা মানুষ।
লেখক: আহমেদ নাজার
ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সূত্র : আলজাজিরা।
বিডি প্রতিদিন/আশিক