বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি কর জিডিপির অনুপাত বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও স্থিতিশীল করা, বাজেেট ঘাটতি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে।
ঢাকা সফররত সংস্থাটির প্রতিনিধিদল গতকাল সফরের প্রথম দিন ব্যস্ত সময় পার করেছে। এদিন তারা অর্থ উপদেষ্টা, অর্থ সচিব ও অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের সময় তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। বৈঠকের পর এ বিষয়ে উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ভ্যাটের হার সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে ভ্যাট একবারে একক অঙ্কে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। ভ্যাট সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গেল রেটের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করব। তবে আমরা একবারে সিঙ্গেল রেটে পৌঁছাতে পারব না। আইএমএফ ঋণের কিস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, দুই কিস্তির অর্থ একবারে দেবে। ওরা এখন রিভিউ করবে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়াব কীভাবে? মাত্র ৭ শতাংশ আছে। তারপর আমাদের ট্যাক্স কালেকশন কীভাবে করব? বেসিকালি আইএমএফের কনসার্ন হলো রেভিনিউ জেনারেশন, আমাদের বাজেট সাইজ কত হবে, ডেফিসিট (ঘাটতি) কত হবে- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আপাতত কথা হয়েছে।’ তিনি বলেন, এ নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে কথা হবে। লোন রেজুলেশন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা, খেলাপি ঋণ আদায়, এনবিআরের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াব কীভাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়াব- এগুলো নিয়ে আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সবার সঙ্গে ওরা ইন্ডিভিজুয়ালি বসবে। তারপর আপনারা জানতে পারবেন।’
আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে এর আগে আপনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, এখন আপনাদের অবস্থান কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। ওরা বলেছে দেখব। ওরা যাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল আমি যাব। তারপর মে-জুনের দিকে বৈঠক হবে।’ চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণের ক্ষেত্রে উনাদের মূল ফোকাস কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরেকটু স্থিতিশীল করা, তারপর বাজেটে ঘাটতি কমানো এগুলো মেইন ফোকাস।’ বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ওরা কী বলেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওরা বলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মোটামুটি স্থিতিশীল, গতিশীল, সঠিক পথে আছে। ওরা বলেছে, ওরা সন্তুষ্ট। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল আছে। তবে ওরা ডিটেইল জিনিসগুলো দেখবে।’ কোন বিষয়গুলোতে কম্প্রোমাইজ করতে হবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি সোজাসুজি বলেছি আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার আমরা করতে চেষ্টা করছি। অলরেডি আমাদের গুড ইনটেনশন দেখিয়েছি। ওদের দিক থেকে ওদের গুড ইনটেনশন দেখাক। দেন উই এনগেজ। আমরা আলাপ করব। হোপ এগ্রি।’ ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলব।’ রাজস্ব খাতে কী করতে হবে, ওরা কী চায়- এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের জিডিপি নেপালের চেয়ে অনেক বড়, ওরা বলে নেপালের থেকে তোমাদের অনেক কম। ওদের (নেপাল) ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ। ওরা বলছে তোমাদের এটা (ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কম) হওয়ার কারণ- নেট (আওতা) কম। লাখ লাখ লোক আছে যারা জিরো ট্যাক্সে রিটার্ন দেয়, তাদের আয় আছে, কিন্তু তারা রিটার্ন দেয় না।’