রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সদস্য থাকেন। পুলিশের যত ইউনিট রয়েছে, সব ইউনিটের ফোর্স রাজারবাগে থাকছে। এর মধ্যে কল্যাণ ও ফোর্স বিভাগের সদস্য রয়েছে ২ হাজার ৭১৮ জন। তাদের বাসস্থান অপ্রতুল ও ডিউটির চাপ বেশি থাকে। ঠাসাঠাসি করে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। ব্যারাকে জায়গা না হওয়ায় অনেকে তাঁবু টাঙিয়ে থাকছেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। বর্তমানে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত ফোর্সদের নির্ধারিত ঝুঁকিভাতা থাকলেও ইন্সপেক্টরদের সেটি নেই। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে অনেকেই আহত হচ্ছেন। ফলে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সবাই ৩০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা দাবি করছেন। এতে ফোর্সদের মনোবল চাঙা হবে অন্যদিকে আন্দোলন-সংগ্রামে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। কয়েকজন ফোর্সের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে ডিউটির কর্মঘণ্টা কমে এসেছে। তবে ডিউটি বেড়েছে। মাসে ২৬/২৭ দিন ডিউটি করতে হচ্ছে। আগে দুই শিফটে ডিউটি ছিল। বর্তমানে তিন শিফটে ডিউটি চালু রয়েছে। খাবার ব্যবস্থা অনেক ভালো। দুই মাস পরপর ছুটিও মিলছে। থাকার ব্যবস্থা অপ্রতুল। ব্যারাকে গাদাগাদি করে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। ব্যারাক ছাড়াও তাঁবুতে ফোর্সদের রাখা হচ্ছে। চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের পর একের পর এক আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে ডিউটি বেড়েছে। আট ঘণ্টা ডিউটি থাকলেও অনেক ডিউটি বা অনেক সময় ১৪/১৫ ঘণ্টা ডিউটিতে কেটে যাচ্ছে। একই স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে চেকপোস্টে ডিউটি করায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় ফোর্সদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজারবাগের কয়েকটা ব্যারাকের পুলিশ লাইনস মেসে ডিএমপির কল্যাণ ও ফোর্স বিভাগের সদস্যদের রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি চারটি তাঁবুতেও তারা থাকছেন। সবমিলিয়ে ১১টি মেসে কল্যাণ ও ফোর্স বিভাগের সদস্যদের থাকতে হচ্ছে। তাদের পরিচালনার জন্য রয়েছে ১০টি কোম্পানি। এসব কোম্পানি প্রধান একজন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
মেসগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ঠাসাঠাসি করে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ফোর্সের সদস্যরা থাকছেন। প্রতিটি রুমে চৌকিগুলো (খাট) গাদাগাদি করে বসানো হয়েছে। নতুন করে চৌকি বসানোর জায়গা নেই। নেই হাঁটা বা কাপড় রাখার জায়গাও। ফোর্সদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার ট্রাঙ্কও বারান্দায় রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র রাখার জন্য প্রত্যেক রুমে ফোর্সদের জন্য লকার রয়েছে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না থাকায় বাসস্থানের পরিবেশ হয়ে উঠেছে স্যাঁতসেঁতে ও গুমোট। মশারি টাঙানোও কষ্টের। তাঁবুতে অবস্থানকারীদের বিছানা, জামা-কাপড় ও মশারি মিলেমিশে একাকার। রুমের মধ্যে সমান্তরালভাবে চৌকি রাখায় হাঁটাচলাও কষ্ট হয়। তবে, ফোর্সদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য রয়েছে পুলিশ শপিং মল। রয়েছে সেলুন, লন্ড্রি, এটিএম বুথ, বিকাশ ও নগদ পয়েন্ট, ক্লোথ স্টোরসহ অন্যান্য সুবিধা। এ বিষয়ে ডিএমপির কল্যাণ ও ফোর্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রওনক আলম বলেন, আমি যোগ দেওয়ার পর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের ফোর্সদের ডাটাবেজ তৈরি করে সবার আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। ব্যারাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি প্রত্যেক রুমের লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুষ্টিবিদের পরামর্শে ফোর্সদের খাবারের জন্য মেন্যু তৈরি এবং সে অনুযায়ী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। ফোর্সদের মনোবল চাঙা রাখতে ভালো কাজের স্বীকৃতিসহ নিজেদের মধ্যে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন থাকছে। ঠান্ডা পানির জন্য প্রতিটি মেসে বড় ফ্রিজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো ব্যারাক এখন সিসিটিভির আওতায়। ফোর্সদের ছুটিসহ যেন অতিরিক্ত ডিউটি করতে না হয়, সেজন্য কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে ডিউটি বণ্টন করা হচ্ছে। কাজের গতি আনতে ফোর্সদের কল্যাণে পুলিশ লাইনসের ভিতর অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।