ফিরোজ শাহ কোটলা দুর্গ থেকে পায়ে হাঁটা দূরে অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। মূল ফটক ধরে স্টেডিয়ামে প্রবেশমুখের দেয়ালে মনসুর আলী খান পাতৌদি, কপিল দেব, শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দর শেভাগ, মহিন্দার অমরনাথ, গৌতম গম্ভীরদের মতো তারকা ক্রিকেটারের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে রমন লাম্বার হাস্যোজ্জ্ব¡ল ছবি। ভারতের পক্ষে মাত্র চার টেস্ট ও ৩২টি ওয়ানডে খেলেছেন। হাইপ্রোফাইল ক্রিকেটার নন। তারপরও তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে স্টেডিয়ামের একটি অংশের নাম তার নামে রেখে। অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী লাম্বার কোনো ছবি নেই ঢাকা কিংবা মিরপুর স্টেডিয়ামে। আয়ারল্যান্ডের অখ্যাত নর্থ ডাউন ক্রিকেট ক্লাব তাকে স্মরণ রেখেছে ক্লাবঘরের দেয়ালে ছবি টাঙিয়ে। ২৭ বছর আগে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে মাথায় আঘাত পান। তার দুই দিন পর অকালমৃত্যু হয় লাম্বার। সেই ম্যাচটির কথা স্মরণ করতে গিয়ে মেহরাব হোসেন অপির চোখে পানি চলে আসে। অনেকক্ষণ পর চোখ মুছে বলেন, ‘সেই মুহূর্তটি কি ভোলা যায়? সারাজীবন মনে থাকবে। ক্রিকেটে যেন এমন করুণ মৃত্যু আর কারও না হয়।’ আজ আবহনী-মোহামেডান ম্যাচ। দুই দলের মুখোমুখিতে লাম্বার কথা পড়ে যায়।
১৯৯৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা স্টেডিয়ামে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি আবাহনী ও মোহামেডান। ১২ ওভারে মোহামেডানের স্কোর তখন ৫১। অপি আগ্রাসি মেজাজে ৫ চারে ২১ রানে ব্যাটিং করছিলেন। বোলিং করছিলেন বাঁহাতি স্পিনার সাইফুল্লাহ খান জেম। ওভারের শেষ বল। লাম্বা শর্ট লেগে ফিল্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন হেলমেট ছাড়া। উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট তাকে অনুরোধ করেছিলেন হেলমেট পরে নিতে। ওভারের শেষ বল বলেই হয়তো আগ্রহ দেখাননি লাম্বা। এরপরই লেখা হয় ঢাকার ক্রিকেটের সবচেয়ে করুণ ইতিহাস! জেমের শর্ট বলে পুল খেলেন অপি। বল লাম্বার কপালের বাঁ-দিকে লেগে উইকেটের পেছনে চলে যায়। পাইলট বলটি গ্লাভসবন্দি করে আউটের আবেদন করেন। আম্পায়ার আউট দেন। আবাহনীর ক্রিকেটাররা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে গিয়েও ছুটে যান লাম্বার দিকে। বলের আঘাতে মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়েন লাম্বা। এরপর ডাক্তারের সঙ্গে হেঁটে ড্রেসিংরুমে যান। সেখানে বমি করেন দুই-তিনবার। দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হলে পরবর্তীতে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি মারা যান ঢাকার ক্রিকেটে খেলে যাওয়া প্রথম ভিনদেশি ‘সুপারস্টার’ রমন লাম্বা। ওই মুহূর্তটি নিয়ে অপি বলেন, ‘পুরো স্টেডিয়াম দর্শকে ভরপুর। আমি ব্যাটিং করছিলাম ২১ রানে। ৫টি চারও ছিল। বোলিং করছিলেন জেম ভাই। সম্ভবত ওভারের শেষ বল করছিলেন তিনি। বলটি ছিল শর্ট। যে কেউ পুল খেলবেন। আমিও খেলেছিলাম। বল সোজা মাথায় (কপালে) আঘাত করে লাম্বার। টক করে আওয়াজ হয়। পাইলট ভাই ক্যাচ ধরেন। আউট হয়ে যাই। কিন্তু ওই বলেই যে এমন দুঃস্বপ্নের জন্ম দেবে, ভাবতেই পারিনি। অথচ শর্ট লেগে ফিল্ডিংয়ের সময় পাইলট ভাই লাম্বাকে হেলমেট পরে নিতে বলেছিলেন।’
অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ওয়াসিম আকরাম, সনৎ জয়সুরিয়া, অজয় জাদেজা, নেইল ফেয়ারব্রাদারদের মতো তারকা ক্রিকেটার খেলেছেন। কিন্তু ঢাকার ক্রিকেটে খেলে যাওয়া প্রথম বিদেশি ‘সুপারস্টার’ রমন লাম্বা।
তিনিই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি দর্শক টানতেন ক্রিকেট মাঠে।