অযত্ন, অবহেলা আর পার্ক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় জৌলুস হারিয়েছে গাজীপুর সাফারি পার্ক। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে পার্কের শিশু পার্ক, ফেন্সি কার্প গার্ডেন। শিশু পার্কের টয় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে আছে দীর্ঘদিন। বন্ধ রয়েছে ডার্ক সোয়ান, হোয়াইট সোয়ান ও লেকের নৌকা। গ্যারেজে পড়ে রয়েছে দুইটি সাফারি জিপসহ কয়েকটি গাড়ি। পার্কের গাড়ি রাখার পার্কিং, প্রধান গেট ও উন্মুক্ত পরিবেশে বাঘ, সিংহ, ভালুকসহ প্রাণীদের অবাধ বিচরণের ক্ষেত্র কোর সাফারি পরিদর্শনের জন্য ইজারাদার পাচ্ছে না পার্ক কর্র্তৃপক্ষ। ইজারাদার না পাওয়ায় বন্ধ রয়েছে পার্কের ভিতরে থাকা লায়ন ও সিংহ রেস্টুরেন্ট। এসব নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ক্ষোভ দেখার কেউ নেই। কর্তৃপক্ষ জানায় বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও পাচ্ছে না গেট, পার্কিং, কোর সাফারি, টাইগার ও লায়ন রেস্টুরেন্টের ইজারাদার। অপর দিকে একের পর এক প্রাণীর মৃত্যু ও চরম অব্যবস্থাপনার কারণে ক্রমেই জৌলুস হারিয়েছে পার্কটি।
জানা যায়, ২০১৩ সালে পার্কটি উদ্বোধন করা হয়। সাফারি পার্কের ধারণা চিড়িয়াখানা হতে ভিন্নতর। তাই এই পার্কে দেশিবিদেশি বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে- যাতে পর্যটকরা চলমান যানবাহনে অথবা পায়ে হেঁটে চিত্তবিনোদনের সুযোগ পান। কিন্তু বর্তমানে এসব বিনোদন থেকে বঞ্চিত সাধারণ দর্শনার্থীরা। উন্মুক্ত পরিবেশে বাঘ, সিংহ, ভালুকসহ প্রাণীদের অবাধ বিচরণের ক্ষেত্র কোর সাফারি বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে পার্কের ভিতরে থাকা লায়ন ও সিংহ রেস্টুরেন্ট। বন্ধ রয়েছে রঙিন মাছের ইভেন্ট পার্কের ফেন্সি কার্প গার্ডেন। শিশু পার্কের টয় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে আছে দীর্ঘদিন, বগি উদ্ধারে কার্যত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে ঘূর্ণি চড়ার যন্ত্র, অ্যারোপ্লেন। অর্থাৎ শিশু পার্কের সব ধরনের রাইড বন্ধ। এ ছাড়া রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে দর্শনার্থীদের জন্য নির্মিত শেডের ছাউনি নষ্ট হয়ে জং ধরা লোহা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধ রয়েছে ডার্ক সোয়ান, হোয়াইট সোয়ান ও লেকের নৌকা। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গ্যারেজে পড়ে রয়েছে দুটি সাফারি জিপসহ কয়েকটি গাড়ি। অপরদিকে আটটি ট্যুরিস্ট বাসের মধ্যে সাতটি বাস সচল থাকলেও সব বাসে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বিকল হয়ে গেছে। পার্ক প্রতিষ্ঠার পর গত এক যুগে হয়নি কোর সাফারির ভিতরের সড়ক সংস্কার। এতে খানাখন্দ সৃষ্ট হয়েছে রাস্তায়। ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট পাচারকালে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ও ঢাকা কাস্টম হাউস লাভবার্ড, কাকাতুয়া, ম্যাকাও, ময়ূর, দুইটি রিংটেইল লেমুরসহ ২০২ জোড়া বিপন্ন পাখি ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে গাজীপুর সাফারি পার্কে পাঠায়। সেখানে রিংটেইল লেমুর বাচ্চা দেয়। এর কিছুদিন পর একটি লেমুরের মৃত্যু হয়। পার্কের বেষ্টনীর নেট কেটে তিনটি রিংটেইল লেমুর চুরির ঘটনা ঘটে। মাস কয়েক আগে দুটি ম্যাকাও পাখিও চুরি হয়। সম্প্রতি তিনটি আফ্রিকান রিংটেইল লেমুর চুরির ঘটনায় পার্কের নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এসব ঘটনায় বিতর্কিত হয়ে পার্কের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন জনবল সংকট, সরকারি বরাদ্দের অভাবের কথা। এ বিষয়ে সাফারি পার্ক গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বনসংরক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, যেখানে প্রায় ২০০-এর মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা সেখানে ৬০-৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এসব কারণে পার্কের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।