১২ বছর পর ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন কারামুক্তি পেয়েছেন।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির।
এর আগে, গতকাল এমডি রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদন্ড দেন আদালত। কারাদন্ডের পাশাপাশি ৪ হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা অর্থদন্ডও দেওয়া হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
তবে রফিকুল আমীন ১২ বছর ধরে কারাগারে আছেন। রায়ে আদালত বলেছেন, কারাগারে থাকার বয়স সাজা থেকে বাদ যাবে। সেক্ষেত্রে এমডি রফিকুল আমীনের সাজা হয়ে গেছে। তার মুক্তিতে বাধা আর নেই। রায় ঘোষণার সময় কারাগার থেকে আদালতে উপস্থিত করা হয় রফিকুল আমীন, তাঁর স্ত্রী ফারহা দিবা ও ডেসটিনির প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান মো. হোসেনকে। জামিনে থাকা আসামি ডেসটিনির পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণা শেষে সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন। এজন্য তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির মধ্যে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মো. সাইদ-উর রহমান, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস; পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনের অন্য স্ত্রী জামসেদ আরা চৌধুরী, প্রফিট শেয়ারিং ডিস্ট্রিবিউটর মো. জসিম উদ্দীন ভূইয়া, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব, জোবায়ের সোহেল ও আবদুল মান্নান এবং ক্রাউন এক্সিকিউটিভ মোসাদ্দেক আলী খান। জানা যায়, গ্রাহকের ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আমীনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে দুদকের উপপরিচালক মো. মোজাহার আলী সরকার ঢাকার কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ২০ মার্চ মামলাটি তদন্ত শেষে আরও সাতজনের নাম আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটির অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত। এ মামলায় বিচার চলাকালে ১৪০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (ডিএমসিএসএল)-এর আসামিরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৮ লাখের বেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ সময় ঋণ প্রদান, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, নতুন প্রতিষ্ঠান খোলার নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে; যা পরবর্তী সময়ে আসামিরা লভ্যাংশ, সম্মানি ও বেতন-ভাতার নামে সরিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে গাছ বিক্রির নামে ডেসটিনি ট্রি-প্লান্টেশন লিমিটেড (ডিটিপিএল)-এর জন্য ২ হাজার কোটির বেশি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে; যা পরবর্তী সময়ে অসামিরা বেতন-ভাতা, সম্মানি, লভ্যাংশ, বিশেষ ভাতা বা কমিশনের আকারে আত্মসাৎ করেছেন।