প্রবৃত্তির অনুসরণ ও অধিক লোভ মানুষকে আল্লাহভোলা করে দেয়। অধিক পাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের দুনিয়ার পেছনে তাড়া করতে করতে কবর পর্যন্ত নিয়ে যায়। মানুষের অধিক লোভ ও দুনিয়া উপার্জনের অসুস্থ প্রতিযোগিতার কথা পবিত্র কোরআনের সুরা তাকাসুরে উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘(পার্থিব ভোগসামগ্রীতে) একে অন্যের ওপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টা তোমাদের উদাসীন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে পৌঁছ।
কিছুতেই এরূপ সমীচীন নয়। শিগগিরই তোমরা জানতে পারবে। আবারও (শোন), কিছুতেই এরূপ সমীচীন নয়। শিগগিরই তোমরা জানতে পারবে।
কক্ষণও নয়। তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের সঙ্গে যদি এ কথা জানতে (তবে এরূপ করতে না)। তোমরা জাহান্নাম অবশ্যই দেখবে। তোমরা অবশ্যই তা দেখবে চাক্ষুষ প্রত্যয়ে।
অতঃপর সেদিন তোমাদেরকে নিয়ামতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে (তোমরা তার কী হক আদায় করেছ?)।
(সুরা : তাকাসুর,আয়াত : ১-৮)
এই সুরার মাধ্যমে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে দুনিয়ার প্রতি মানুষের এই লোভ, অতৃপ্তি এবং (আল্লাহর নিয়ম-কানুন ভুলে) যেকোনো মূল্যে একে অন্যের ওপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টা অর্থহীন। এর পরিণতি খুবই ভয়ংকর।
তাই দুনিয়ার প্রতি অধিক লোভ করা এবং সর্বদা অতৃপ্ত থাকা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক। যদিও এটি মানুষের স্বভাবজাত বিষয়, তবু মানুষকে এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে এবং মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আদম সন্তান যদি দুটি মাঠভর্তি সম্পদের অধিকারী হয়ে যায় তাহলে সে তৃতীয় মাঠভর্তি সম্পদ খুঁজে বেড়াবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া কোনো কিছুই ভরাতে পারে না। যে ব্যক্তি তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৬)
তা ছাড়া অতৃপ্তি জাহান্নামিদের স্বভাব। জাহান্নামের সঙ্গে এর মিল রয়েছে, কারণ আরো চাই স্বভাবটি জাহান্নামেরও রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই দিন (কিয়ামতের দিন) আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? জাহান্নাম বলবে, আরো আছে কি?’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৩০)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, জাহান্নাম সর্বদাই বলতে থাকবে, আরো কি আছে? এমনকি রাব্বুল ইজ্জত তাতে তাঁর পা রাখবেন। ‘ব্যস, ব্যস’ জাহান্নাম বলবে, তোমার ইজ্জতের কসম! সেদিন তার একাংশ অন্য অংশের সঙ্গে মিলিত হয়ে যাবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৬৬১)
নাউজুবিল্লাহ, তাই আমাদের উচিত মহান আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামতগুলোর শোকর আদায় করা, যা আছে তা নিয়ে তুষ্ট থাকার চেষ্টা করা। সাময়িক দুঃখ-কষ্টে বিচলিত না হওয়া, বরং আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা। কেননা হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাত দুঃখ-কষ্ট ও শ্রমসাধ্য বিষয় দ্বারা ঘেরা এবং জাহান্নাম কুপ্রবৃত্তি ও লোভ-লালসা দ্বারা ঘেরা। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৫৯)
তা ছাড়া অতৃপ্তি মানুষের জীবন থেকে বরকত তুলে নেয়। ফলে মানুষ অনেক পেয়েও হতাশ থাকে। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে যা আসে, তা-ই খুশি মনে গ্রহণ করা এবং তা নিয়ে তুষ্ট থাকা আবশ্যক। হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-এর কাছে কিছু চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। আমি তাঁর কাছে আবার চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। আমি তাঁর কাছে আবার চাইলাম। তিনি দিলেন। এরপর বললেন, ...হে হাকিম! এ মাল সবুজ ও সুমিষ্ট। যে লোক তা খুশি মনে গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি তা লালসা নিয়ে গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না; বরং সে ওই ব্যক্তির মতো যে খায়, কিন্তু তৃপ্ত হয় না। আর ওপরের (দাতার) হাত নিচের (গ্রহীতার) হাত থেকে শ্রেষ্ঠ। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৪১)
মহান আল্লাহ আমাদের লোভ-লালসা ও অতৃপ্তি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন