হাবশার সম্রাট নাজ্জাশি নিযুক্ত ইয়েমেনের গভর্নর ছিলেন আবরাহা সাবাহ হাবশি। তিনি মক্কা নগরী ও পবিত্র কাবাঘরের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ দেখে ঈর্ষান্বিত হন। ফলে তিনি সানআয় একটি বিরাট গির্জা নির্মাণ করলেন এবং আরববাসীকে আহ্বান করলে যেন তারা এই ঘরের তাওয়াফ করে। এই আহ্বানে আরবরা ক্ষুব্ধ হলো।
বনু কেনানার লোকজন এক রাতে গোপনে গির্জায় প্রবেশ করে তাতে মল ত্যাগ করল এবং সামনের দিকে মলের প্রলেপন দিয়ে পালিয়ে এলো। এ ঘটনায় আবরাহা ভয়ানক ক্রোধান্বিত হন এবং প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কাবাঘর ধ্বংসের সংকল্প করেন। তিনি ৬০ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীসহ মক্কা অভিমুখে অগ্রসর হন। তিনি নিজে একটি শক্তিশালী হাতির পিঠে আরোহণ করেন।
এ ছাড়া তার বাহিনীতে ৯ থেকে ১৩টি হাতি ছিল।
পথিমধ্যে জুনফর ও নুফাইল নামের দুই নেতা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাদের বাহিনী পরাজিত হয়। বাহিনী মিনা ও মুজদালিফার মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছালে হাতিগুলো বসে যায়; কিন্তু আবরাহা যেকোনো মূল্যে মক্কায় পৌঁছাতে চাইলেন। আবরাহা মক্কার নিকটবর্তী ওয়াদিয়ে মুহাসসারে পৌঁছালেন, তখন তার হাতি মাটিতে বসে পড়ল।
তাকে কোনোভাবে কাবাঘরের দিকে অগ্রসর করানো সম্ভব হলো না; কিন্তু বিপরীত দিকে ঠিকই দৌড়াতে লাগল।
এমন সময়ে আল্লাহ তাআলা এক ঝাঁক ছোট পাখি পাঠালেন। সেই পাখিগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে পাথরের ছোট ছোট টুকরা সৈন্যদের ওপর নিক্ষেপ করতে লাগল। প্রতিটি পাখি তিনটি করে পাথরের টুকরা বা কঙ্কর নিয়ে এলো। একটি ঠোঁটে, দুইটি দুই পায়ে।
কঙ্করগুলোর আকার ছিল ছোলার মতো। কিন্তু কঙ্করগুলো যার যে অঙ্গে লাগত সেই অঙ্গ ফেটে গিয়ে সেখান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে হতে সে মরে যেত। পাখির বহন করে আনা কঙ্কর দ্বারা সবাই আঘাতপ্রাপ্ত হলেছিল তা নয়, কিন্তু এই অলৌকিক ঘটনায় সবাই ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল এবং প্রাণভয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করল, তখন পদতলে পিষ্ট হয়ে অনেকেই প্রাণত্যাগ করল। আবরাহার তার আঙুলগুলোর জোড় খুলে গেল এবং সানা নামক স্থানে যেতে না যেতেই তিনি পাখির বাচ্চার মতো হয়ে পড়লেন। তারপর তার বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে হৃৎপিণ্ড বেরিয়ে এলো এবং তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। পবিত্র কোরআনের সুরা ফিলে এই ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে।
আবরাহা বাহিনীর আগমনের কথা শুনে মক্কাবাসীরা প্রাণ বাঁচাতে পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। আবরাহার ধ্বংসের সংবাদ শুনে তারা ঘরে ফিরে আসে। মহানবী (সা.)-এর জন্মের ৫০ থেকে ৫৫ দিন আগে হস্তিবাহিনী ধ্বংস হওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা ছিল পবিত্র কাবাঘরের মর্যাদার সাক্ষ্য এবং মহানবী (সা.)-এর আগমনের পূর্বাভাস। পাশাপাশি তা দ্বিন ইসলামের স্থায়িত্বের প্রতি ইঙ্গিতও প্রদান করে। কেননা পূর্ববর্তী নবিদের কিবলা ও প্রার্থনাস্থল মসজিদুল আকসাকে আল্লাহ বুখতে নাসর ও রোমানদের হামলা থেকে রক্ষা করেননি।
হস্তিবাহিনী ধ্বংসের ঘটনা সমগ্র আরবে এবং আরবের নিকটতম প্রতিবেশীদের ভেতরে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পবিত্র মক্কা নগরী ও কাবাঘরের মর্যাদার ব্যাপারে তাদের সব সংশয় কেটে যায়। যারা পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ ও জ্যোতিষবিদ্যা চর্চা করত তারা স্পষ্টত বুঝতে পারল প্রতিশ্রুত শেষ নবীর আগমনের সময় অতি সন্নিকটে। আর তিনি পবিত্র নগরী মক্কায়ই আগমন করবেন। তাদের ভেতর যারা সত্যান্বেষী ছিল তাদের অনেকেই মক্কায় এসে অবস্থান করতে লাগল। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা-৬৬; সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা-২৬)
বিডি প্রতিদিন/কেএ