মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আবাসন এবং খাবারের নিশ্চয়তা নিয়েই রাখাইনে প্রত্যাবাসন করতে চান। একই সঙ্গে তারা ‘সেইফ’ এবং ‘নো ফ্লাই জোন’-এর বাস্তবায়নও চান। এ তিন দাবির নিশ্চয়তা দেওয়া না গেলে রাখাইনে প্রত্যাবাসন সফল না হওয়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাবেক কূটনীতিক ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের মতে ‘মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা বললেও এখনো রূপরেখা ঘোষণা করেনি। দেওয়া হয়নি রোহিঙ্গাদের আবাসন এবং খাবারের নিশ্চয়তা। রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পরে তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। তাদের জমি দীর্ঘদিন ধরে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। তাই প্রত্যাবাসানের আগে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে দুটি ইস্যুর নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ ছাড়া তাদের নিরাপত্তার ইস্যুও গুরুত্বপূর্ণ। এ তিন বিষয়ে রূপরেখা চূড়ান্ত না করলেও প্রত্যাবাসান ইস্যু কর্মসূচি সফল হবে না।’
রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী ‘সেইফ’ ও ‘নো ফ্লাই জোন’ বাস্তবায়িত হলে রোহিঙ্গারা চলে যাওয়ার জন্য রাজি। একই সঙ্গে আমাদের বসতভিটায় নিরাপদে ফেরা ও এক বছরের খাবারের জন্য যা দরকার শুধু ততটুকু করলেই আমরা চলে যাব। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এখন একটাই আওয়াজ-ক্যাম্পজীবন থেকে মুক্তি চাই।
গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধামন্ত্রী ইউ থান শিউ ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার কথা জানান। নিজেদের পুরোনো আবাসস্থল আরাকান আর্মির দখলকৃত ভূমিতে হলেও ফিরতে চান রোহিঙ্গারা। তবে ফেরার আগে আবাসস্থল, অন্তত এক বছরের খাবারের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা চান সাধারণ রোহিঙ্গারা।
উখিয়া কুতুপালং ১৪ নম্বর ক্যাম্পের ক্যাম্পের মাঝি হামিদ হোছন বলেন, ‘আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না। আমরা আমাদের দেশে ফিরতে চাই। তবে রাখাইনে যাওয়ার আগে আমাদের খাদ্য ও আবাসস্থলের নিশ্চয়তা চাই।’
উখিয়া বালুখালী ১১ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল আলম বলেন, ‘আমাদের পরিবারে ১২ জন সদস্য আছে। পুরো পরিবার নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে চাই।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতি ছিল। গত ছয় বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে জন্ম হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার শিশু। এ ছাড়া ২০২৪ সালের আগস্ট-পরবর্তী আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধের জেরে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসে আরও ১ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে বর্তমানে সাড়ে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।