কলকাতার জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার সিনিয়র ফটোসাংবাদিক অশোক মজুমদার ‘চোখের বালি’ ছবির শুটিং চলাকালে লুকিয়ে গোপনে অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের ছবি তুলে গোল বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। এতে খেপে গিয়ে ওই ছবিতে আর অভিনয় করতে চাননি ঐশ্বরিয়া। তারপর কী হলো, সেই মূল গল্পেই যাই এবার। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৩ সালে ‘চোখের বালি’ উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন। এ উপন্যাসের শততম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে টালিগঞ্জের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ সিদ্ধান্ত নিলেন ‘চোখের বালি’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন এবং ২০০৩ সালেই তিনি ছবিটি মুক্তি দেবেন। সে অনুযায়ী ওই বছরের ২ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল চলচ্চিত্র ‘চোখের বালি’। আর এতে বিনোদিনী চরিত্রে অভিনয় করেন বলিউড অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই। এ সুন্দরী অভিনেত্রীকে নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে নির্মাতা ঋতুপর্ণকে কম ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়নি। এমনই একটি ঘটনার কথা এখানে তুলে ধরা হলো, যেটি লিখেছেন আনন্দবাজার পত্রিকার সিনিয়র ফটোসাংবাদিক অশোক মজুমদার। তাঁর লেখাটি ছিল এমন- ‘ঋতুপর্ণ ঘোষের সিনেমা ‘চোখের বালি’র শুটিংয়ের জন্য ঐশ্বরিয়া রাই কলকাতায়। আমরা সব কাগজের চিত্র সাংবাদিকরা লেগে আছি যদি একটা ছবি তোলা যায়। কিন্তু না, শুটিংয়ে মাছি পর্যন্ত গলতে পারবে না এমন বজ্র আঁটুনি। তখন ঋতুপর্ণ আনন্দলোকের সম্পাদক। অফিসের লিফটে বা আনন্দবাজারের নিচে আমার সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতো। ঋতুপর্ণের সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বললাম, ‘কী গো, ঐশ্বর্য রাই কলকাতায় এলে কিন্তু আমি এক্সক্লুসিভ ছবি তুলব। আমায় ছাড়া তুমি কাউকে বলবে না। আনন্দবাজারে এ ছবি যেন এক্সক্লুসিভ হয়।’ শুটিং চলাকালীন একদিন কোনো কাজে ঋতু আনন্দলোক ডিপার্টমেন্টে এসেছিল। আমি খবর পেয়ে সটান হাজির ঋতুর সামনে। বললাম, ‘কবে যাবো বলো। কে কোথায় ফাঁকতালে তুলে নেবে। ব্যস হয়ে গেল আমার।’ ঋতু জবাব দিল- ‘লক্ষ্মী সোনা। তুই জেনে রাখ তোকেই আমি ছবি তুলতে দেব। আর কেউ পাবে না। আমায় কয়েকদিন কাজটা একটু গুছিয়ে নিতে দে।’ ২০০২ এর জানুয়ারিতে ‘চোখের বালি’র শুটিং শুরু হয়েছিল। বলিউডের নম্বর ওয়ান সুন্দরী ঐশ্বর্য রাই ঋতুপর্ণের ছবিতে কাজ করছেন, তাও কলকাতায়। বুঝতেই পারছেন ফটো জার্নালিস্টদের অবস্থা। যাই হোক যথাসময়ে ঋতুপর্ণ একদিন ফোনে বলল- ‘শোন কালকে দুটোর পর রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবে চলে আয়। কাউকে বলিস না। আর শোন, সঙ্গে কোনো রিপোর্টার যেন না থাকে। আর আমি না বলা অব্দি এসেই তুই কোনো ছবি তুলবি না। জেনে রাখ, বলিউডে ইউনিটের ফটোগ্রাফার ছাড়া কেউ শুটিংয়ে গিয়ে ছবি তুলতে পারে না। আমি তোর সঙ্গে আগে আলাপ করিয়ে দেব, তারপর ছবি তুলিস।’ যথাসময়ে আমি হাজির হই। ঋতুপর্ণ দেখি একটু দূরে বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান অভিকের সঙ্গে কথা বলছে। কাছে যেতেই ঋতু চিৎকার করে বলে উঠল ‘তুই ক্যামেরা বার করে আছিস কেন? ওটাকে আগে ব্যাগে ঢোকা। চুপ করে কোথাও বসে থাক। তোদের নিয়ে এই মুশকিল। বারবার বললাম, অ্যাশ (ঐশ্বরিয়া) আসুক আলাপ করিয়ে দিই। তারপর ছবি তুলিস। এরা কলকাতার বাঙালি স্টার নয়, যা ইচ্ছা করবি চেনাজানা বলে। একবার যদি দেখে আমাদের ইউনিটের অমল কুণ্ডু বাদে তুই ছবি তুলছিস, তাহলেই শুটিং বন্ধ।’ বেশ মজা করে বলল, ‘শোন ওদের মিনিটে না, সেকেন্ডে সেকেন্ডে টাকা দিতে হয়।’ বললাম, ‘ঠিক আছে, ক্যামেরা ব্যাগে ঢুকিয়ে দিচ্ছি।’ গল্ফ ক্লাবের পুকুর পাড়ে একটা গাছের নিচে বসে সিগারেট ধরালাম। হঠাৎ দেখি পুকুরের ওপারে একটা মেকআপ ভ্যান থেকে ঐশ্বর্য রাই একটা ফিনফিনে কাপড় পরে সিকিউরিটি নিয়ে শুটিং স্পটে যাচ্ছে। বেশ সুন্দর লাগছে। একদম অন্যরকম। এরকম একটা ক্যানডিড শট দেখেই আমি ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে বসে বসেই তিন চারটা ছবি তুলে রাখলাম। ছবি তোলাটা কেউ দেখতে পায়নি। ডিজিটাল ক্যামেরায় দেখলাম ছবিটা বেশ লাগছে। শুটিং ছাড়া অন্যরকম ছবি হলো। মনে মনে ভেবেও রাখলাম এটাই পত্রিকার পাতায় দেব। ক্যামেরা ব্যাগে ঢুকিয়ে শুটিং স্পটের দিকে হাঁটা দিলাম। ঋতুপর্ণ হঠাৎ বলল, ‘এই অ্যাশ এখনো আসছে না কেন? ওকে তো টাইম বলা ছিল। উফফ! দেরি হয়ে যাচ্ছে। সূর্যটা পড়ে যাবে। ওর শটগুলো তো শেষ করতে হবে।’ এটা বলতে বলতেই একজন ওর কাছে ওয়াকিটকি দিল। শুনছি সিরিয়াস মুখে ঋতু বলছে- ‘নেহি নেহি হামারা ইধার কোই ফটো নেহি কিয়া।’ কথাটা কানে যেতেই আমি তো ভয়ে চুপ। তারপর শুনছি ঋতু ইয়েস ইয়েস করছে। ওয়াকিটকি রেখেই ঋতু সরাসরি আমাকে বলল...‘অশোক তুই কি পুকুর পাড়ে অ্যাশের কোনো ছবি তুলেছিস?’ আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘হ্যাঁ, মানে উনি আসছিলেন আমি দূর থেকে তিনটে ছবি তুলেছি।’ ঋতুপর্ণ চিৎকার করে বলল, ‘কেন তুলেছিস? বারবার বললাম আমি না বলা অবধি ছবি তুলবি না। অ্যাশ এখন শুটিংয়ে আসবে না। বলছে একটা দাড়িওয়ালা লোক পুকুর পাড় থেকে আমার ছবি তুলেছে। দিলি সব মাটি করে। এ জন্য তোদের ডাকি না। কোনো নিয়মকানুন মানিস না। সব পণ্ড করে দিলি।’ ঋতু প্রায় দৌড়ে ভ্যানের দিকে চলে গেল। শুটিং স্পটে সবাই চুপ। এর ওর মুখের দিকে দেখছে। মিনিট দশেক পর ঋতু ঐশ্বর্যকে নিয়ে ফিরল। এসে প্রথমেই আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে বলল, ‘এই অশোক মজুমদার। ভালো ফটোগ্রাফার। আমরা একসঙ্গেই কাজ করি। আমি ওকে আসতে বলেছি। ও ভুল করে তোর ছবি তুলে ফেলেছে। প্লিজ কিছু মনে করিস না। ওই ছবি ও সব ডিলিট করে দেবে।’ আমি দুবার সরি সরি বললাম। শুটিং শুরু হলো। ঋতুর অনুমতি নিয়ে ক্যামেরা বার করলাম। ঐশ্বর্য শট দেওয়ার পর আমার তোলা ছবি দেখে নিত।’
শিরোনাম
- ফ্যাসিষ্টের দোসর ও নব্য বিএনপি থেকে সাবধান : মজনু
- ঈদের লম্বা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের স্তূপ
- হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি বরদাশত করা হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা
- গলাচিপায় শুভসংঘের উদ্যোগে জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ বিষয়ক সচেতনামূলক সভা
- নিখোঁজ সেই গৃহবধূ পরকীয়া প্রেমিকসহ উদ্ধার
- বাউবিতে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত
- বগুড়ায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নারী নিহত
- কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইমাম গ্রেফতার
- গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির ডাক
- ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ
- জাজিরার সেই ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
- বগুড়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে সাবেক এমপি লালু
- জয়পুরহাটে তুচ্ছ ঘটনায় হোটেল শ্রমিক নিহত, আটক ১
- বাংলাদেশে ব্যবসার অনুমোদন পেয়েছে স্টারলিংক
- ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ : ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুই চিঠি যাবে যুক্তরাষ্ট্রে
- গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ফেনীতে বিক্ষোভ
- পিএসএলের ধারাভাষ্য প্যানেলে আতাহার আলী
- টাউনসভিলে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রাণবন্ত মিলনমেলা
- ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বেড়েছে লেনদেন
- আওয়ামী রাজনীতি ও ভারতের দাদাগিরি চলবে না : জাগপা
কেন খেপেছিলেন ঐশ্বরিয়া...
আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর