চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশার ডজনখানেক নারীনেত্রী। ইতিমধ্যে তারা দলীয় প্রধানের ঘনিষ্ঠভাজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎসহ স্থানীয় এমপি ও সিনিয়র নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন।
মনোনয়ন দৌড়ে থাকা নেত্রীদের মধ্যে সাবেক এমপিদের কন্যারাও আছেন। আছেন বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত নারীরা। পাশাপাশি সাবেক এক এমপির স্ত্রী বিতর্কিত নেত্রীও এই দৌড়ে আছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণত সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার পর পরই নির্বাচন কমিশন সংরক্ষিত আসনের এমপি পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। জাতীয় সংসদের তিনশটি আসনের বিপরীতে সংরক্ষিত নারী আসন আছে ৫০টি।
নতুন অধিবেশন শুরুর ঘোষণার পর থেকেই মূলত সংরক্ষিত পদে নির্বাচন করতে আগ্রহীরা দলের বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। স্থানীয় রাজনীতিতেও বিষয়টি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। চট্টগ্রাম থেকে এই দৌড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন সদ্য সাবেক হওয়া সংরক্ষিত আসনের এমপি আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান। মন্ত্রিসভা গঠনের আগেও তার নাম আলোচনায় ছিল।
জানতে চাইলে ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী এর আগে আমাকে যেসব দায়িত্ব দিয়েছেন সব সময় সততার সাথে পালনের চেষ্টা করেছি। সুযোগ পেলে আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। তবে দিনশেষে সভানেত্রী যা ভালো করবেন তাই হবে।’
এর বাইরে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব, সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুণ লুবনা, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক বাসন্তী পালিত, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা জোবাইরা নার্গিস খান, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দীন আহমদের কন্যা দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদিকা কাজী শারমিন সুমি, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আফসারুল আমীনের স্ত্রী কামরুন্নেচা, সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী ও আঞ্জুমান আরা বেগমের নাম বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে।
মনোনয়ন দৌড়ে থাকা নারী নেত্রীদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীও। স্বামীর নির্বাচনে পরাজয়ের পর সংরক্ষিত এমপি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে স্ত্রী রিজিয়া। তিনি জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরের আমির মাওলানা মমিনুল হক চৌধুরী মেয়ে। তাকে দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুমিন রাজাকার নামেই চেনেন।
রিজিয়া জামায়াতের আদর্শ বাস্তবায়নকারী সংগঠন ছাত্রীসংস্থার চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভানেত্রীও ছিলেন। মহানগর ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় জামায়াতের আদর্শ প্রচারে তিনি এক সময় বেশ সক্রিয় ছিলেন। তার এমপি হওয়ার দৌড়ঝাঁপ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে চলছে সমালোচনা।
এদিকে, মনোনয়নের জন্য সক্রিয় নেত্রীদের মধ্যে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব বলেন, ‘সব সময় নেত্রীর নির্দেশ মেনে কাজ করার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হবে না। উনি যেভাবে চাইবেন সেভাবে হবে।’
সুচিন্তা ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন ও প্রধামন্ত্রীর নির্দেশে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুযোগ দিলে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারবো। তবে উনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদিকা কাজী শারমিন সুমি বলেন, ‘আমার বাবা আমৃত্যু রাজনীতির জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। আমি সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই। প্রধানমন্ত্রী সুযোগ দিলে আমিও মানুষের কল্যাণে নিজেকে আরও বেশি নিয়োজিত করতে চাই।’
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত