ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ গোছাচ্ছে বিএনপি। ৩০০ আসনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কাজ শুরু করেছে দলটি। প্রার্থী বাছাইয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দল থেকে যাদের প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজধারীদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক আসনে দলের সিনিয়র নেতারা জুনিয়রদের চ্যালেঞ্জেও পড়তে পারেন। নতুন পুরোনোদের সমন্বয়ে আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে এই খসড়া তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
তবে ৫ আগস্ট বিপ্লবোত্তর ‘পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ ও ‘জনগণের পালস’ বিবেচনা করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হবে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পথ চলার নামই হচ্ছে বড় সংস্কার। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। অতীতে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে এ দলটি একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। সুতরাং নির্বাচনের জন্য বিএনপির সব সময় প্রস্তুতি থাকে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামী নির্বাচনে স্বচ্ছ ইমেজধারী প্রার্থীদের গুরুত্ব দেবেন। দুর্নীতিবাজ, হাইব্রিড, নব্য কাউকে মনোনয়ন দেবেন না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তিনি এমন চিন্তা করছেন। বিএনপিতে ত্যাগী পরীক্ষিত নেতার অভাব নেই। জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে দলের বর্ধিত সভা থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী চেয়ারম্যান তারেক রহমান আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছেন। একটি টিমের মাধ্যমে কোনো প্রার্থীর কী কারণে বিজয়ের কিংবা পরাজয়ের সম্ভাবনা বেশি তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আগামী তিন মাস সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হবে। নির্বাচনে গুরুত্ব পাবে ক্লিন ইমেজধারীরা। নির্বাচনে কমপক্ষে ১০০ আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। প্রার্থীরাও মনোনয়ন লাভের জন্য নির্বাচনি এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন, গণসংযোগের মধ্যে রয়েছেন তারা। একই সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে, তাদের কোনো অবস্থাতেই মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ইতোমধ্যে দলের এমন কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এতে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অনেক ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তখনকার বাস্তবতা বিবেচনায় বিএনপি প্রতিটি আসনে প্রাথমিকভাবে তিন-চারজনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। প্রথম প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলে দ্বিতীয়জন নির্বাচন করবেন; দ্বিতীয়জনের প্রার্থিতা বাতিল হলে, পরেরজন নির্বাচন করবেন- এমন চিন্তাভাবনা থেকে দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে তখন এমনটা করা হয়েছিল। এখন প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন লাভে সরব রয়েছেন। দলটির একাধিক নেতা বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিন্তাধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন তারেক রহমান। সে অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এই অবস্থায় শারীরিকভাবে সুস্থ ও রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি রাজনীতিসচেতন, উচ্চশিক্ষিত এবং শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতারা তার পছন্দের তালিকায় আছেন। ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম বলেন, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে ২০০৭ ও ২০১৮ সালে দল থেকে নির্বাচনি মনোনয়ন পেয়েছি। তখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং আন্দোলন করে চলেছি। নির্বাচনি আসনের ১২৫ নির্বাচনি কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। দল থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুধু ক্লিন ইমেজ নয়, যেসব নেতা ছাত্রদল থেকে গড়ে উঠেছেন তারা মনোনয়ন বিবেচনায় অগ্রাধিকার অবস্থানে থাকবেন। তরুণ এ নেতারাই দলের অনেক সিনিয়র নেতার জন্য চ্যালেঞ্জের কারণ হবেন।