ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমার গানে আবারও মাতলো দর্শক। কয়েক বছর ধরে সিনেমার গানে নতুনত্ব এসেছে। দর্শক এখন যেমন গান পছন্দ করেন তেমন গান বর্তমানে তারা সিনেমায় পাচ্ছেন বলেই মুখে মুখে ফিরছে গানগুলো। এবারের দর্শকনন্দিত সিনেমার গানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘বরবাদ’ সিনেমার ‘চাঁদমামা’ ও ‘জ্বীন থ্রি’ এর ‘কন্যা’ গান দুটি। এসব গান আবার ইউটিউব ট্রেনডিংয়েও শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। প্রথম দিকে ‘কন্যা’ গানটি ট্রেনডিংয়ে এক নম্বর অবস্থান গড়ে নিলেও পরে ওই স্থানে চলে আসে ‘চাঁদমামা’ গানটি। আর ‘কন্যা’ গানটি চলে যায় তিন নম্বর অবস্থানে। এ দেশের সিনেমার গানের জনপ্রিয়তা সেই ষাটের দশক থেকেই ছিল। মধ্যে নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ভর করলে তার প্রভাব পড়ে গানেও। ফলে সিনেমার গান হারিয়েছিল কৌলিন্য। ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে, রাতেরও আঁধারে দোসরও হয়ে তাই সে আমারে টানে...’। ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’ ছবির গান এটি। এই ছবির গানটি এখনো দর্শক-শ্রোতাদের নষ্টালজিকে আক্রান্ত করে। বলা হয়ে থাকে এই গানটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, শুধু গানটি দেখার জন্যই বারবার দর্শক ছুটে গেছেন সিনেমা হলে। ফলশ্রুতিতে ‘রাজধানীর বুকে’ সুপার হিট। গানের ক্যারিশমা ছবির সাফল্যের অন্যতম নিয়ামক বলে খোদ এহতেশামই বলেছিলেন। এক সময় চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনে বলা হতো- ‘আসিতেছে গানের ছবি, প্রাণের ছবি...’, মানে নির্মাতারা ছবি হিট করার জন্য গল্পের পাশাপাশি গানকে প্রাধান্য দিতেন আর সুফলও পেতেন। মানে গানের জোরেই ছবি হিট হয়ে যেত। এমন উদাহরণ প্রচুর রয়েছে। কমপক্ষে আশির দশক পর্যন্ত গানের কারণে সিনেমা হিটের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, নব্বই দশকের প্রায় শেষ ভাগে এ দেশে অশ্লীল সিনেমার জোয়ার শুরু হলে সিনেমার গানও বিকৃত রুচির কবলে পড়ে। এ সময় থেকে সিনেমার মনকাড়া গান আর পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘ সময় পর ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গিয়াসউদ্দীন সেলিমের ‘মনপুরা’ সিনেমার গান আবার দর্শক-শ্রোতার মুখে মুখে ফিরতে থাকে। গানের জন্যই এই সিনেমা বেশিসংখ্যক দর্শক সিনেমা হলে টেনে আনে। এরপর মাঝেমধ্যে সিনেমার হিট গান পাওয়া যেতে থাকে। এর মধ্যে এস এ হক অলিকের ‘হৃদয়ের কথা’ এবং ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ এবং সালাউদ্দীন লাভলুর ‘মোল্লা বাড়ীর বউ’ সিনেমার গানের জনপ্রিয়তার কথা না বললেই নয়। যাই হোক, বর্তমানে আবার কয়েক বছর ধরে গানের কারণেই সিনেমা হিট হতে শুরু করেছে। যেমন ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবির ‘রাতের সব তারা আছে দিনের গভীরে’ গানটি ব্যাপক সাড়া জাগায়। ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ ছবির ‘সুরমা সুরমা’ গানটি সুপারহিট হয়। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন তপু খান। একই বছরের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমার গান হচ্ছে ‘ও প্রিয়তমা’। ‘প্রিয়তমা’ ছবির এই গানটি রেডিও টেলিভিশনেও শ্রোতাদের পছন্দের শীর্ষে ছিল। ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন হিমেল আশরাফ। প্রিয়তমা সিনেমার আরও একটি গান শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করে। গানটির শিরোনাম ‘ঈশ্বর’। নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘প্রহেলিকা’ সিনেমার ‘মেঘের নৌকা’ গানটি ২০২৩ সালে শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় ছিল। এর আগে ২০২২ সালের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমার গানের তালিকায় রয়েছে ‘হাওয়া’র ‘সাদা সাদা কালা কালা’। সর্বশেষ গত বছর রায়হান রাফির ‘তুফান’ সিনেমার গানের কথা যদি বলতে হয় তাহলে বলব ‘লাগে উরাধুরা’ এবং ‘দুষ্টু কোকিল’ গানেই ‘তুফান’ বয়ে গেছে চারদিক। যদিও এগুলো আইটেম ঘরানার এবং একটি শ্রেণির পছন্দের তালিকায় সীমাবদ্ধ তবুও আশার কথা দীর্ঘদিন পর চলচ্চিত্রের গান আবার দর্শকের পছন্দের খাতায় যোগ হচ্ছে। এ ছাড়াও গত কয়েক বছরে ‘পরাণ’ ছবির ‘ধীরে ধীরে’। গুণিন ছবির ‘ঘোমটা তুলে বদন খুলে’, ‘দুই দিনের দুনিয়া’ ছবির ‘ট্যাকা পাখি’, ‘জীবন রোড’, ‘পাপ পুণ্য’ ছবির ‘তোর সঙ্গে নামলাম রে পথে’, ‘চোখ গেল পাখি,’ ‘তালাশ’ ছবির রওনক ইকরামের লেখা ‘মায়া মাখা’, ‘পরাণ’ ছবির জনি হকের লেখা ‘চল নিরালায়’ মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে বলেই এগুলো দর্শক-শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরেছে। আর একটি সিনেমা হিট হওয়ার পেছনে গান অবদান রেখে আসছে অনেকাংশে।