ভর্তুকি কমানো, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে অপচয় রোধ, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও ঘাটতি কমিয়ে আনতে বার্ষিক বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এজন্য আর্থিক খাতের সংস্কার, ব্যাংক খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব খাতের সংস্কার নিয়ে সবচেয়ে বেশি তাগাদা দিয়েছে সংস্থাটির ঢাকা সফররত একটি প্রতিনিধিদল। ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিন গতকালও ব্যস্ত সময় পার করেছে দলটি। সিরিজ বৈঠক করেছে অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায় এবং রাজস্ব খাতের কার্যকর সংস্কার এনে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে। অন্যথায় সরকারের ভিতরের আর্থিক সংকট কাটানো সম্ভব নয়। এমনকি রিজার্ভ বাড়াতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পরামর্শ দিয়েছে। অর্থাৎ ডলারের বিনিময় হারের কোনো উচ্চসীমা বা নিম্নসীমা থাকবে না, তবে মধ্যসীমা থাকবে। যদিও অনেক আগে থেকেই এ পরামর্শ দিয়ে আসছে সংস্থাটি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব শর্তের পরিপালন চায় আইএমএফ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, মাত্র দুই দিন হলো তারা এসেছেন। ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বসবেন। আমরা একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন তাদের জন্য তৈরি করেছি। ঢাকা ত্যাগের আগে নিয়ম অনুযায়ী তারা ব্রিফিং করবেন। তবে এখন যেসব বৈঠক হচ্ছে এগুলোতে শুধু আলোচনা হচ্ছে। তারা বলছেন আমরা শুনছি। আমরাও বলছি তারা শুনছেন। সূত্র জানায়, পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিন আইএমএফ প্রতিনিধিদলটি গতকাল ফিসক্যাল পলিসি নিয়ে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম, আসন্ন বাজেটে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেসব বিষয় পর্যালোচনা করছে প্রতিনিধিদলটি। এসব বিষয়ের অগ্রগতি জেনে আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের পরবর্তী চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে সুপারিশ করবে সদর দপ্তরে। আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবে। বাংলাদেশের রাজস্ব খাত সংস্কারের স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি একটি কৌশলপত্র দেখতে চায় আইএমএফ। এজন্য আগামী জুনের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে প্রশাসন ও নীতি উইং পৃথক করার সুপারিশ করেছে। এর প্রতিফলন আসছে বাজেটেও দেখতে চায় সংস্থাটি। অন্যদিকে জুনের মধ্যে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। যদিও এ রিজার্ভের ওপর চাপ কমে আসায় আইএমএফের ঋণের প্রতি সরকারের ঝোঁক অনেকটাই কমে এসেছে। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, যেসব জায়গায় আইএমএফ অধিক জোর দিচ্ছে সেগুলো হলো-বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা, ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ে স্মার্ট পদ্ধতি প্রচলন করা, আন্তর্জাতিক নিয়মে রিজার্ভের হিসাব সংরক্ষণ করা, কর-জিডিপি বাড়ানো, ভ্যাট আইন-২০১২ (সংশোধিত) পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা। এসব বিষয়ের অগ্রগতির জানার পর ঢাকা সফর শেষে প্রতিনিধিদলটি ওয়াশিংটনে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। যার ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী কিস্তির অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত।