রাজধানীর উত্তরা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল রাত সোয়া ১১টার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান। তিনি গভীর রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের থানাতেই তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। এ মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আমরা তার বাসায় এখনো তল্লাশি চালাচ্ছি। পুলিশসহ একাধিক সূত্র বলছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তুরিন আফরোজের ছাত্র-জনতার বিপক্ষে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
নিজের গর্ভধারিণী মা এবং ভাইকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তুরিনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়টি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন তার মা শামসুন্নাহার বেগম এবং ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ।
জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরার রেসিডেনন্সিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর প্লটের পাঁচ তলা বাড়িতে ২০০২ সাল থেকে বসবাস করে আসছিলেন শামসুন্নাহার বেগম এবং তার ছেলে শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ। তবে নিজের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ২০১৭ সালে শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজকে ওই বাড়ি থেকে বের করে দেন তুরিন আফরোজ। পরে ওই বাড়ির ভোগ দখল ও মালিকানা দাবি করে শাহনেওয়াজ ও তুরিন আফরোজ ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দুটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর দুই পক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই বাড়ি ভোগদখলের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা জারি করেন ঢাকার পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। এরপর যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আবেদন করেন শাহনেওয়াজ। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আদেশ বহাল রাখেন জেলা জজ আদালত।
পরে ২০২৩ সালের মার্চে জেলা জজ আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে সিভিল রিভিশন দায়ের করেন শাহনেওয়াজ। ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ উত্তরায় ওই বাড়ি ভোগদখলের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থার আদেশ কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরবর্তী সময়ে আদালত পরিবর্তিত হয়ে মামলাটি বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাই কোর্ট বেঞ্চে আসে। গত ১২ মার্চ ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ রুল যথাযথ (অ্যাবসুলেট) ঘোষণা করে স্থিতাবস্থা বাতিল করে রায় দেন।
ওই দিন আপিল বিভাগে বাড়ি সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেছিলেন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর থাকা অবস্থায় ক্ষমতার সব রকম অপব্যবহার করেছেন। তখন তিনি ছিলেন পরাক্রমশালী। এক মুহূর্তের মধ্যে তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।