চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় দৈনিক তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য ২৪৯ টন, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। যার মধ্যে ৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ রিসাইক্লিং যোগ্য। কিন্তু এসব প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যরে মধ্যে সংগ্রহ হয় ১০৯ টন এবং অসংগৃহীত থেকে যায় ১৪০ টন। এই অসংগৃহীত প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যরে কারণেই নগরের জলাবদ্ধতার বাড়ছে। প্লাস্টিক-পলিথিনের কারণই চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ, কর্ণফুলী নদীতে প্লাস্টিক-পলিথিনের স্তর পড়ে যাচ্ছে। অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে চট্টগ্রামের খাল-নদী। প্লাস্টিকের অনুকণা ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ, মাছসহ বিভিন্ন প্রাণীর দেহে।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘২৪৯ টন প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যে পরিবেশ প্রতিবেশের ক্ষতি’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়াল বড়ুয়া ও আল আমিন। গবেষণা তত্ত্বাবধান করেছেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত। বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সভাপতি ও চুয়েট ভিসি (প্রাক্তন) প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সিনিয়র সহ সভাপতি গবেষণা প্রবন্ধের মডারেটর চুয়েট প্র্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত, সিনিয়র সহ সভাপতি প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, সহ-সভাপতি লোকমান দয়াল, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলীউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, অধ্যাপক মনোজ কুমার দেব, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম পেয়ার আলী ও সদস্য জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী গত এক বছর ধরে নগরীর বাকলিয়া, চান্দঁগাও, মুরাদপুর, চকবাজার, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ, সিইপিজেডসহ ১৫ ওয়ার্ডে এই গবেষণা কাজ পরিচালনা করেন। গবেষণায় সহযোগিতা করে বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম।
গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, যত্রতত্র প্লাস্টিক ছুড়ে ফেলা, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকা, প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের অভাব, প্লাস্টিক পোড়ানো, প্লাস্টিক দূষণের কারণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, অপচনশীলতা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্লাস্টিক বর্জ্যে দূষণ দিন দিন বাড়ছে। এ প্লাস্টিক দূষণের কারণে খাবার, পানি পান, নিঃশ্বাসের সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের দেহে প্রবেশ করছে। প্লাস্টিক পলিথিনের সাথে থাকা ক্যামিক্যাল এডিটিবস মানুষের শরীরে ঢুকে ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব এবং অটিজমের মত রোগ সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিক পলিথিন বর্জ্য পরিবেশ এসে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার (প্যাথোজেন) মত অনুজীবকে আকর্ষণ করে, যা পরবর্তীতে প্যাথেজেন ধারণকারী মাইক্রোপ্লাস্টিককনা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। ২০৫১ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়ে ৪২৮ টনে দাঁড়াবে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, ৩০ শতাংশ মানুষ প্লাস্টিক পলিথিনের পুর্নব্যবহার করে, ৪৬ শতাংশ মানুষ কখনও প্লাস্টিকের পুর্নব্যবহার করে না, ১১ শতাংশ মানুষ কখনো কখনো পুর্নব্যবহার করে এবং ১৩ শতাংশ মানুষ মোটেও সচেতন নয়।
বিডি প্রতিদিন/এএম