দীর্ঘদিন ফুটবল খেলে মারা যাওয়া অনেকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উঠে আসছে ডিমেনশিয়ার নাম। ফলে অনেক ফুটবলারের মনেই ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক।
বুন্ডেসলিগার ইউনিয়ন বার্লিন দলের গোলরক্ষক আন্দ্রেয়াস লুঠে একটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারোর কাছেই পাচ্ছেন না। তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘‘আমার মাথায় কি টাইম-বোমার ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে ঘুরতে শুরু করেছে?” অর্থাৎ, ফুটবল খেলেন বলে তিনি কি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন?
৩৪ বছর বয়সী ফুটবলারের মনে এমন প্রশ্ন জাগার কারণ, সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার ফল। সেসব গবেষণায় দেখা গেছে, ফুটবল খেললে, বিশেষ করে ফুটবল খেলায় মাথায় ঘন ঘন আঘাত পেলে একপর্যায়ে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যসব মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।
জানা গেছে, জার্মানির দুই ফুটবল কিংবদন্তি জার্ড ম্যুলার এবং হর্স্ট-ডিটার হ্যোটগেসের মৃত্যুর কারণ ডিমেনশিয়া। লুঠের ভয়, তারও ডিমেনশিয়া হতে পারে। কারণ, এ পর্যন্ত দুবার মাথায় বড় রকমের আঘাত পেয়েছেন তিনি। অন্য খেলোয়াড়ের মাথার সঙ্গে নিজের মাথা ঠুকে যাওয়ায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন একবার। পরে অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই খেলতে পেরেছেন সেই ম্যাচ। তবে আরেকবার মাথায় আঘাত পাওয়ার পর হাসপাতালে যেতে হয়েছিল তাকে।
কিন্তু জার্ড ম্যুলার এবং হর্স্ট-ডিটার হ্যোটগেসের মতো সাবেক দুই তারকা ফুটবলারের ডিমেনশিয়ায় মৃত্যুর পরও রোগটি নিয়ে জার্মান ফুটবল কর্তৃপক্ষ এখনো সেই অর্থে নড়েচড়ে বসেনি।
ইংল্যান্ডে সতর্কতা
১৯৬৬ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের অন্তত পাঁচজনের ডিমেনশিয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে চারজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ফলে ফুটবলারদের ডিমেনশিয়া থেকে দূরে রাখার উপায় খুঁজতে শুরু করেছে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ), প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ, ইএফএল-এর প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ লিগ কর্তৃপক্ষ এবং খেলোয়াড়দের সংগঠন পিএফএ। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এখন থেকে তারা ডিমেনশিয়া নিয়ে গবেষণা, লেখাপড়া এবং সাবেক পেশাদার ফুটবলারদের সহায়তা দানের বিষয়কে গুরুত্ব দেবে। এ ছাড়া ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের সাশ্রয়ী চিকিৎসা-সেবা দেয়ার জন্য তহবিল গঠনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ইংল্যান্ডে।
সপ্তাহে ১০ হেড
২০২০ সালে ১১ বছরের কম বয়সী শিশুদের হেড প্র্যাকটিস না করানোর নির্দেশ দিয়েছে স্কটিশ এবং নর্দার্ন আইরিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। ১৮ বছরের কম বয়সিদের প্রশিক্ষণ এবং খেলাতেও হেড-এর গুরুত্ব কমানো নির্দেশ দিয়েছে তারা।
গত জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের এফএ, প্রিমিয়ার লিগ এবং অন্যান্য লিগ কর্তৃপক্ষও প্রশিক্ষণে হেড কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। তাদেরও পরামর্শ- সপ্তাহে ১০টির বেশি হেড-এর প্রশিক্ষণ না করানোই ভালো।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ