ক্রিস গেইল তার ক্রিকেট আইডল। ব্যাটিং স্টাইলে ভিন্নতা থাকলেও ক্যারিবীয় তারকার মতোই মারকুটে ব্যাটিং তার পছন্দ। ঝুঁলিতে আছে, এক ওভারে ছয় ছক্কা হাঁকানোর বিরল রেকর্ড। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬২ বলে ১৬২ রানের ইনিংসের জন্য ক্রিকেট বিশ্বের তিনি পরিচিত ‘আফগান গেইল’ নামে।
বলা হচ্ছে রাজশাহী রয়্যালসের আফগান তারকা হযরতুল্লাহ জাজাইয়ের কথা। রবিবার পড়ন্ত বিকালে সাগরিকায় নেওয়া তার একান্ত সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন : অনেকে আপনাকে ‘আফগান গেইল’ বলে। কেমন মজা লাগে তা শুনে?
হজরতুল্লাহ জাজাই: হ্যাঁ, অনেকে আমাকে আফগান গেইল বলে। ‘আফগান গেইল’ নামটা ভালোই লাগে। ক্রিস গেইল আমার আইডল বলে অনেকে এই নামে ডাকে। তবে এটা আমার ব্যাটিং স্টাইল কিন্তু গেইলের মতো না। আপনারা দেখেছেন, আমার ব্যাটিং স্টাইল একেবারে ভিন্ন। গেইলের মতো আমিও মারকুটে ব্যাটিং করতে পছন্দ করি বলে লোকে ডাকে ‘আফগান গেইল’ বলে।
প্রশ্ন : আপনি গেইলকে আইডল হিসেবে মানেন। কিন্তু অনেক তরুণ ক্রিকেটার এখন আপনাকে অনুসরণ করছেন। আপনার কি মনে হয় না একদিন গেইলকেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন আপনি?
হজরতুল্লাহ জাজাই: ক্রিস গেইল আমার আইডল। সবসময় তিনিই থাকবেন। আমি আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তার খেলা দেখি। তাকে দেখেই আমি বড় বড় ছক্কা মারা শুরু করি। তবে আমার চেষ্টা থাকবে গেইলকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। বছর খানেক হলো আমি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় লিগে খেলছি। আমি যেখানেই খেলি না কেন নিজের দলের হয়ে বড় স্কোর গড়তে চাই। রানের ক্ষুধা সব সময় আছে এবং থাকবে।
প্রশ্ন : আফগান প্রিমিয়ার লিগে ২০১৮ সালে এক ওভারে ছয় ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন আপনি। ওই ম্যাচে অভিষিক্ত বোলার আবদুল্লাহ মাজারির ওই ওভার থেকে ৩৭ রান নিয়েছিলেন। কাবুল জাওয়ানের হয়ে বালখ্ লিজেন্ডসের বিরুদ্ধে মাত্র ১২ বলে বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। টি-২০তে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড। ৬ বলে ৬ ছক্কা কিভাবে মেরে দিলেন?
হজরতুল্লাহ জাজাই: (হাসি) ক্রিকেটে নিজের দিনে এমন হয়। ওই দিনটা আমার ছিল। আমাদের ২৪৪ রানের টার্গেট দিয়েছিল প্রতিপক্ষ। রানের পাহাড় তাড়া করতে গিয়ে প্রথম ওভারে পেসারের কাছ থেকে ২০ নিলাম। পরের ওভারে স্পিনার আসায় বেশ সুবিধা হলো। তাকে ৬ বলে ৬ ছক্কা মেরে দিলাম।
প্রশ্ন : গতবছর আপনি টি-২০ আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬২ রানের ইনিংস খেলেছেন। সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস অ্যারোন ফিঞ্চের ১৭২। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ডটাও ভেঙে ফেলার স্বপ্ন দেখেন কি?
হজরতুল্লাহ জাজাই: আমি যে ম্যাচে ১৬২ রানের ইনিংস খেলেছিলাম সেই দিনটি ছিল আমার। টি-২০ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের খেলা। এখানে কিছু কিছু এমন দিন আসবে সেদিন আপনি যা করবেন, যেভাবে শট খেলবে তাতেই ক্লিক করবে। ওই দিন আমি সবদিকে শট খেলতে পারছিলাম। ব্যাটের মাঝে বল লাগছিল। আবার কখনো এমন দিন এলে ইনশাল্লাহ ১৭২ এর বেশিও করে ফেলব।
প্রশ্ন : আপনার টার্গেট কি তাহলেও ফিঞ্চের ১৭২ রানের বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে ফেলা?
হজরতুল্লাহ জাজাই: হ্যাঁ। টি-২০ এটাই আমার টার্গেট। আমার বিশ্বাস, টি-২০র এই রেকর্ডটি একটি আমি নিজের করে নিতে পারবো।
প্রশ্ন : এরই মধ্যে আপনি টি-২০র অনেক রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। রেকর্ড ভাঙতে কেমন লাগে?
হজরতুল্লাহ জাজাই: এটা তো খুবই আনন্দের। সব খেলোয়াড়ই রেকর্ড গড়াকে খুব উপভোগ করেন। আমি ১২ বলে ফিফটি করেছি, ৬ বলে ৬ ছক্কা মেরেছি, ১৬২ রানের ইনিংস খেলেছি। আমার জন্য এর প্রতিটি উপভোগের।
প্রশ্ন : প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আপনার গড় ৪০ এর মতো (৩৮.৯৩)। নিশ্চয়ই আফগানিস্তানের হয়ে টেস্টও খেলতে চান!
হজরতুল্লাহ জাজাই: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চারদিনের ম্যাচ। ওখানে লম্বা সময় খেলতে হয়। কিন্তু আমি আমার প্রথম চারদিনের ম্যাচের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দিয়েছিলাম। (হাসি)...চার দিনের ক্রিকেটে...। ওই ম্যাচে খুব দ্রুত ফিফটি করেছিলাম। ২২/২৪ বল লেগেছিল। তবে ওই যে আমি প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছিলাম আসলে ওটাই আমার খেলার ধরণ। মারার বল পেলে আমি মারবোই। সেটা যে কোনো ধরনের ক্রিকেটেই হোক না কেন? কিংবা ওভারের প্রথম বল হোক বা শেষ বল হোক!
প্রশ্ন : আধুনিক ক্রিকেটে অনেক ব্যাটসম্যানই আছেন যারা সাদা পোশাকেও মারকুটে ব্যাটিং করে থাকেন। ডেভিড ওয়ার্নারদের মতো খেলোয়াড়রা তো এভাবে সাফল্য পাচ্ছেন। আরও অনেকেই আছেন। টেস্টে সুযোগ পেলে আপনিও কি একইভাবে খেলবেন?
হজরতুল্লাহ জাজাই: হ্যাঁ, আমিও এভাবে খেলার চেষ্টা করবো। প্রথমে কেবল টি-২০তে সুযোগ পেয়েছি। এখন ওয়ানডেও খেলছি। আমি টেস্টে সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি পাবও। এই সংস্করণেও দীর্ঘ সময় খেলতে চাই। বড় বড় স্কোর গড়তে চাই।
প্রশ্ন : বিপিএলে আপনার সেরা স্মৃতি কোনটি?
হজরতুল্লাহ জাজাই: বিপিএলের গত আসরে প্রথম খেলেছি। ঢাকা ডায়নামাইটসের পক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ খেলতে নেমে দুটিতেই আমি ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলাম। এটাই বিপিএলে আমার সেরা স্মৃতি।
প্রশ্ন : এবারের বিপিএলে ৩ ম্যাচ খেললেন, কিন্তু সত্যিকারের জাজাইয়ের দেখা মেলেনি এখনো...!
হজরতুল্লাহ জাজাই: (হাসি) টুর্নামেন্টটা লম্বা। আরও সময় আছে। ইনশা আল্লাহ খুব দ্রুতই বিপিএলে দেখতে পাবেন সত্যিকারের জাজাইকে।
প্রশ্ন : আপনার কাছে দলের প্রত্যাশা অনেক। দর্শক হয়তো জাজাইয়ের সেঞ্চুরি দেখতে চাচ্ছেন! আপনি কি ভাবছেন?
হজরতুল্লাহ জাজাই: প্রথম ম্যাচে ফিফটি করেছি। ক্রিকেটে কোনো কিছুর গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি নেই। কখনো স্কোর হবে, কখনো না। চেষ্টা করে যেতে হবে। কেবল তো মাত্র ৩ ম্যাচ খেললাম। আরও অনেক সময় বাকি আছে। হয়তো দেখবেন পরের যে কোনো ম্যাচে সেঞ্চুরি করে ফেলেছি।
প্রশ্ন: এবারের বিপিএলে অনেক রান হচ্ছে। এটাও কি বড় স্কোর গড়ার প্রেরণা দিচ্ছে না?
হজরতুল্লাহ জাজাই: আপনি যেমন বললেন যে ব্যাটিং পিচ পাচ্ছি আমরা। যখন অন্য দলকে দুইশোর বেশি করে ফেলতে দেখি তখন প্রেরণা তো পাই। দেখা যাক পরের ম্যাচে কি হয়!
প্রশ্ন: আইপিএল, বিগ ব্যাশে বেশ কয়েকজন আফগান ক্রিকেটার খেলেন। আপনিও নিশ্চয় খেলতে চান?
হজরতুল্লাহ জাজাই: আসলে এসব লিগে আপনি তখন সুযোগ পাবেন যখন আপনি আরও ভালো করবেন। এবার বিগ ব্যাশেও খেলতে পারতাম। তবে হলো কি, বিপিএলে তার আগেই চুক্তি হয়ে গিয়েছিল। এটা আমার প্রথম (বিদেশি) লিগ বলে বিপিএলেই খেলতে এসেছি।
প্রশ্ন : এবার তাহলে বিপিএলে খেলার জন্য বিগ ব্যাশকে ‘না’ করে দিলেন?
হজরতুল্লাহ জাজাই: হ্যাঁ। ঠিক তাই। আমি (বিদেশি) লিগ যে বিপিএল দিয়ে শুরু করেছি।
ধন্যবাদ!
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন