ভারতের বেঙ্গালুরুতে সদ্য অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২০ এর আইপিএলের নিলাম। ১১তম মোট ৮টি দলই তাদের পছন্দ মতো খেলোয়াড়কে দলে নিয়েছে। নিলাম প্রতিটি দলই তাদের হাতে থাকা টাকার সদ্ব্যবহার করেছে। কোনো কোনো খেলোয়াড়কে দলে নিতে তো রীতিমতো টক্কর দিয়েছে দু’-তিনটি ফ্রাঞ্চাইজি।
বেস প্রাইসের চেয়ে প্রায় ১০-১২ গুণ বেশি দামেও বিভিন্ন খেলোয়াড়কে কিনেছে নানা দল। তবু এ বারের নিলামে অবিক্রিত থেকে গিয়েছেন টি-২০ এর অনেক নাম-দামি খেলোয়াড়ই।
অবিক্রিত খেলোয়াড়দের তালিকা দেখলে অবাক হতেই হয়! বিক্রি না হওয়া খেলোয়াড়দের নিয়েও রীতিমতো একটি একাদশ তৈরি করা যায়। শুধু তাই নয়, এমনই এই একাদশের ফর্ম যে, অন্য যে কোনো দলকে কড়া টক্কর দিতে পারেন তারা। দল না পাওয়া ক্রিকেটারদের এই একাদশ দেখলে চমকে যাবেন আপনিও!
নমন ওঝা
২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় ভারতীয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ও উইকেট কিপার নমন ওঝা। তার নেতৃত্বে ভারতীয় ‘এ’ দল দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স দেখায়। নমন নিজে এ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ডাবল সেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরিও করেন। এই একাদশে ব্যাটিং অর্ডারকে শক্তিশালী করতে যেমন তাকে প্রয়োজন, তেমনই কে এস ভরতের মতোই উইকেটও সামলে দিতে সক্ষম তিনি।
হনুমা বিহারী
হনুমা বিহারী বড় কোনো ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব তিনি এখনও অর্জন করেননি। তবে মাঝে মাঝেই তার ব্যাট থেকে ঝলসে ওঠে নয়নাভিরাম কিছু ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ। টি-২০-তে ভারতীয় ডান হাতি এই ব্যাটসম্যানের অবদান কিন্তু একেবারে হেলাফেলার নয়। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলেরও তিনি সদস্য ছিলেন। তাই অভিজ্ঞতার ভাঁড়ারও শূন্য নয়। তাকেও এই একাদশে রাখা যেতে পারে মিডল অর্ডারে।
কলিন দে
নিউজিল্যান্ডের কলিন দে গ্র্যান্ডহোম। দলে ব্যাট-বলের চালিকাশক্তিটি আরও মজবুত করে তুলতে তাকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবাই যায় না। বিশ্বের তাবড় টি-২০ অলরাউন্ডারদের মধ্যে তিনি অন্যতম সেরা! জাতীয় দলের টি-২০-তে বিশেষজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবেই জায়গা পেয়ে থাকেন এই নিউজিল্যান্ডের তারকা। অথচ ২০২০-র আইপিএলে কোনো দল পাননি তিনি। তাকেও আমাদের এই একাদশে ঠাঁই দিলে তা মন্দ হবে না মোটেই।
ইউসুফ পাঠান
ইউসুফ পাঠানের বয়স বেড়েছে ঠিকই। তবে বুড়ো হাড়েও যখন তখন ভেল্কি দেখাতে পারেন ইউসুফ পাঠান। যেখানে ৪৮ বছর বয়সী তাম্বে দল পেলেন, সেখানে কোন অঙ্কে ইউসুফ দল পেলেন না, তা নিয়ে বিস্মিত বিশেষজ্ঞরাও। অতীত আইপিএলের রেকর্ডও তার বেশ উজ্জ্বল। গণ্য হয়েছেন ‘বিগেস্ট ম্যাচ উইনার’ হিসেবেও। এর আগে কলকাতা, হায়দরাবাদ, রাজস্থানের হয়ে খেলেছেন তিনি। কে বলতে পারে এই আইপিএলে ঝলসে উঠতেন না তিনি!
কার্লোস ব্রেথওয়েট
কার্লোস ব্রেথওয়েট ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-২০ দলেও তার গুরুত্ব যথেষ্ট। এমনকি টি-২০ ফরম্যাটে জাতীয় দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন অতীতে। চার বছর ধরে তিনি তিনটি ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে খেললেও ২০২০-র জন্য কোনো দলই কেনেনি ব্রেথওয়েটকে। এমন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা কিন্তু একটি বড় মঞ্চে যখন তখন জ্বলে উঠতে পারেন। তাই আমাদের এই একাদশেও ব্রেথওয়েট থাকবেন যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারেই।
বেন কাটিং
বেন কাটিং নিজেকে টি-২০-র ধাঁচেই গড়ে তুলেছেন একটু একটু করে। ২০১৬ সালে হায়দরাবাদের হয়ে টি-২০ খেলা শুরু করেন অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার বেন কাটিং। তার পর থেকেই নিজের খেলার ধরন বদলেছেন। টি-২০-র ফরম্যাটে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিলেও এ বছর কোনো দলই কেনেনি তাকে। আমাদের এই একাদশে কাটিংকে অন্যতম অলরাউন্ডার হিসেবে দলে রাখাই যায়।
কে এস ভরত
ভারতে অন্ধ্রপ্রদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে বেশ নাম করেছেন কে এস ভরত। ভারতীয় জাতীয় দলের টেস্ট দলেও সম্প্রতি ঋদ্ধিমান সাহার পরিবর্তে তার নাম উঠে আসে। রঞ্জি, দলীপ সর্বত্রই তার রেকর্ড বেশ ভাল। কাজেই এই একাদশে উইকেটের পেছন দিকটি সামলানোর সঙ্গে ব্যাটিংয়েও কিছু রান যোগ করে দিতেই পারেন তিনি।
স্টুয়ার্ট বিনি
স্টুয়ার্ট বিনি ভারতের হয়ে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার ঝুলিতে। দলে মূলত একজন অলরাউন্ডার। ঘরোয়া ক্রিকেটে রঞ্জি ট্রফি প্রতিযোগিতায় কর্নাটকের প্রতিনিধিত্ব করছেন। রঞ্জিতে তার রেকর্ডও ভাল। অলরাউন্ডারে ঠাঁসা কোনো দল বাছতে গেলে এই সময়ে ভারতীয় এই খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়াটা ভুল হবে।
মুস্তাফিজুর রহমান
আইপিএলের ২০২০ আসরের নিলামে বাংলাদেশি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানকে দলে নেয়নি কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি। যদিও ২০১৬ মৌসুমে মুস্তাফিজুর রহমান হায়দ্ররাবাদের হয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন। ওই মৌসুমে তার দল হায়দ্ররাবাদও প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়। এখনও তার বোলিংয়ের সেই ধার কমেনি, বোলিংয়ে একটু বাড়তি নজর দিলে ভালোই করবে। তাই বোলিং ব্রিগেডকে শক্তিশালী করতে মুস্তাফিজুর রহমানকে এই একাদশে রাখা যায়।
বিনয় কুমার
ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার হিসেবে বিনয় কুমার এই একাদশে অবশ্যই জায়গা পাবেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি টেস্ট ম্যাচ, একদিনের আন্তর্জাতিক এবং টি-২০ সব স্তরেই খেলেছেন। কেকেআর-এর হয়ে খেলার সময় সব ম্যাচে জায়গা না পেলেও সময় মতো নিজের কাজটা ভালই উতরেছেন। তাই বিনয় কুমারও থাকলেন বোলিং স্কোয়াডে।
অ্যাডাম জাম্পা
টি-২০-তে তার ইকনমি রেট ৭.৫৫। ১১টি ম্যাচে ১৯টি উইকেট পকেটে। তবু অবিক্রিত রয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। আমাদের এই একাদশে বোলিং ব্রিগেডকে শক্তিশালী করতে জাম্পার উপর অনেকটা দায়িত্ব স্বচ্ছ্বন্দে দেওয়াই যায়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন