বিষয়গুলো আমার নজরে পড়েছে শৈশবকাল থেকেই। আজ থেকে ৩০/৪০ বছর আগে আবহমান বাংলার প্রায় সব কিছুই ছিল প্রকৃতিনির্ভর। কোন বছরটি ঠিক কেমনভাবে যাবে সে কথা কেউ বলতে পারত না। এক বছর ভালো ফসল হলো তো পরের বছর কিছুই হলো না। বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টিতে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ত। এর বাইরে রোগবালাই, কীট-পতঙ্গের আক্রমণ এবং সাপের কামড়ে মৃত্যবরণ করার ঘটনা ছিল অহরহ। নবজাতকের মৃত্যু- প্রসব বেদনায় নারীর মৃত্যু, কলেরা, গুটিবসন্ত এবং কালা জ্বরের আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা ছিল অহরহ। আমাদের ছোট্ট গ্রামটিতে তাই সারা বছরই হাহাকার লেগে থাকত। মানুষজন যখন দৈব দুর্বিপাকে ক্ষতিগ্রস্ত হতো তখন দুনিয়ার কোনো মানুষ বা রাজ-রাজাকে দায়ী না করে সরাসরি আল্লাহকে দায়ী করত। সন্তান হারানো মা বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলত- ইয়া আল্লাহ! তোমার কি চোখ নেই, এইটা তোমার কেমন বিচার- তুমি এই অবোধ শিশুটাকে নিয়া গ্যালা!
সময়ের বিবর্তনে আমাদের জীবনযাত্রা পাল্টে গেছে- আগেকার সেই দিন এখন আর নেই। ফলে আল্লাহকে দায়ী করার প্রাচীন পদ্ধতিতে বেশ খানিকটা পরিবর্তন এসেছে। ইদানীংকালের মানুষজনের বেশির ভাগ অংশ সব সফলতার জন্য নিজের শক্তি সামর্থ্যকে ধন্যবাদ জানায় এবং তারই মতো অপর মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নোয়ায়। অপরদিকে সব সর্বনাশ এবং মন্দ পরিণতির জন্য আল্লাহকে দোষারোপ করে। একশ্রেণির মধ্যপন্থি মানুষ আছে যারা কাজকর্ম করার চেয়ে অলস থাকতে পছন্দ করে, নিজের চিন্তা-চেতনা এবং বোধ শক্তিকে সিন্দুকে ভরে ভাবনাহীন জীবন কাটাতে গর্ববোধ করে। এই শ্রেণির মানুষ নিজেদের সব দায়-দায়িত্ব আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে এবং বলে- আল্লাহ যা করেন তা সবই মঙ্গলের জন্য করেন। আমার পরিচিত এক লোক সারাদিন ঘুমায়, আর সারা রাত জেগে টিভি দেখে। ফলে তার শরীর-মনে সব সময় এক ধরনের অবসন্নতা কাজ করে। হাত থেকে হুটহাট নানা জিনিসপত্র পড়ে যায়। কখনো পানির গ্লাস, কখনোবা চায়ের কাপ কিংবা অন্য কিছু। মাঝে মধ্যে এমনও হয় যে, প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল কিন্তু ঢোকানোর সময় পকেটে না ঢুকিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে বীরদর্পে বাসায় ফিরে এলো। তারপর স্ত্রীর বকুনি খেয়ে বলল- আল্লাহ যা করেন তা বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন।
লোকটি একবার ভারি মসিবতে পড়ল। সে সাধারণত বাথরুমে দীর্ঘ সময় কাটায় এবং ওখানে বসেই ফোনে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। ঘটনার দিন কথা বলার সময় তার হাত থেকে মোবাইল সেটটি কী করে যেন কমোডের মধ্যে পড়ে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় তার মাথা খারাপ হয়ে গেল। মাত্র কয়েক দিন আগে কেনা অতি আদরের দামি মোবাইল আইফোন সিক্স-এর পতন দৃশ্য সে সহ্য করতে পারছিল না। সে কি কমোডের ময়লার ভিতর থেকে ফোনটি তুলবে নাকি ফ্লাশ করবে এসব চিন্তা করতে করতে তার শরীর ঘামতে লাগল। সে কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। অন্যদিকে তার স্ত্রী এসে দরজায় আঘাত করতে করতে বলল- এই কি করছ? কী সমস্যা! তুমি কি কমোডের মধ্যে মোবাইল ফেলে দিয়েছ নাকি? পরের ঘটনাগুলো খুবই বিব্রতকর এবং প্রকাশের অযোগ্য। লোকটি তার স্ত্রীকে প্রবোধ দেওয়ার জন্য বলল- আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।
স্বামীর কথা শুনে স্ত্রীর মাথায় আগুন ধরে গেল। বলল- মিনসে কোথাকার! আল্লাহ কি তোমার বাথরুমে মোবাইল নিয়ে যেতে বলেছেন। ঘুম ঘুম শরীরের জড়তা নিয়ে কথা বলার সময় হাত থেকে ফসকে মোবাইলটি কমোডের মধ্যে পড়ে যাওয়ার মধ্যে কি এমন মঙ্গল থাকতে পারে। যত্তসব গরু মার্কা কথাবার্তা। লোকটি আর কথা বাড়াল না বটে কিন্তু মনের দুঃখে কয়েকদিন ঘুমাল না। এ তো গেল ব্যক্তির কথা। আমরা যদি সমাজের দিকে তাকাই কিংবা রাষ্ট্রের দিকে তাহলে কী দেখতে পাব! দেখব প্রায় সবাই যার যার দায়িত্বে ভয়ানকভাবে অবহেলা করছে এবং কৃত অবহেলার কারণে সৃষ্টি হওয়া ফ্যাতনা-ফেসাদের দিকে তাকিয়ে বলছে- আল্লাহ যা করেন তা মঙ্গলের জন্যই করেন। সমাজের আলেম ওলামারা এমনভাবে ওয়াজ নসিহত করেন, যাতে করে সবাই মনে করেন যে আমাদের জীবনের সবকিছু পূর্ব নির্ধারিত। কেউ কেউ বলেন, আমাদের জন্ম নেওয়ার আগেই আল্লাহ সবকিছু কপালে লিখে দিয়েছেন। অনেকের কপালে রাজটিকা এঁকে দিয়েছেন যাতে সে রাজা হতে পারে। মানুষের লেখা গল্প কবিতা উপন্যাসেও এমনতর ভাবধারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমরা শৈশবকালে শুনতাম গরিবের ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলেটির কপালে রাজটিকা ছিল। এক সময় সে জীবিকার প্রয়োজনে রাজধানীতে যায়। সে যেদিন শহরে পৌঁছল সেদিনই রাজা মারা গেলেন। প্রজারা সব মসিবতে পড়ে গেল। কারণ সিংহাসনে বসার মতো যুবক রাজার কোনো উত্তরাধিকারী ছিল না। মন্ত্রীরা অনেক ভেবেচিন্তে অবশেষে রাজার হাতির ওপর দায়িত্ব দিল নতুন রাজা খুঁজে বের করার জন্য। হাতিটি ফুলের মালা নিয়ে রাজপথে বের হলো এবং রাজটিকাসংবলিত দরিদ্র যুবকটির গলায় মালা পরিয়ে দিল। ফলে হতভাগ্য ছেলেটি রাতারাতি ফকির থেকে বাদশাহ হয়ে গেল, সঙ্গে পেল রানী এবং রাজকোষের বিপুল ধনরাশি।
শিশুকালে শোনা গল্পের কারণে আমি অনেক দিন আয়না নিয়ে চলে গেছি পাটক্ষেতে কিংবা চড়ে বসে ছিলাম বড় কোনো গাছের মগডালে। তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে দেখার চেষ্টা করেছি আমার কপালের রাজটিকাটির অবস্থান কোথায়। এ তো গেল গল্পের কথা। এবার বলছি কিছু গানের কথামালা। গীতি কবিরা লিখেছেন- এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া, গড়াইয়াছেন সাঁই! তারপর বলেন, তুমি হাকিম হয়ে হুকুম কর, পুলিশ হইয়া ধর, সর্প হইয়া দংশন কর, ওঝা হইয়া ঝাড়! অন্য জায়গায় বলেন, তুমি য্যামনে নাচাও তেমনি নাচি-পুতুলের কী দোষ? এখানে কবিরা সব কাজের দায়দায়িত্ব আল্লার ওপর ছেড়ে দিয়ে মানুষকে নির্দোষ বানানোর চেষ্টা করেছেন এবং প্রত্যক্ষভাবে সব অনাসৃষ্টির জন্য আল্লাকে দায়ী করেছেন। তারা অভিযোগ করেন যে, নিছক খেলাধুলা এবং ক্রীড়া কৌতুকের জন্য আল্লাহ দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে খেলার উপকরণ বানিয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ)।
বিষয়টি নিয়ে যদি আমরা কোরআন হাদিসের আলোকে সত্যনিষ্ঠ আলোচনা করি তবে দেখব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন একটি সুনির্দিষ্ট ইচ্ছা এবং পরিকল্পনা নিয়ে তামাম মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। আসমান, জমিন, গ্রহ নক্ষত্র, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, নদী-সমুদ্র সবকিছুই চলছে নির্দিষ্ট নিয়ম মোতাবেক। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির পর যখন পৃথিবীতে মানুষের বিস্তার ঘটালেন তখন সৃষ্টি জগতের সবকিছুই কিছু প্রাকৃতিক শর্ত সাপেক্ষে মানুষের অধীন করে দিলেন। মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি প্রজ্ঞা এবং কর্মকুশলের কারণে তাদের সব সৃষ্টির ওপর প্রাধান্য এবং সৃষ্টিত্ব দান করলেন। মানুষ এখন আকাশে ওড়ে, চাঁদে যায়। হিমালয়ে আরোহণ করে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের অতলান্তে চলে যায় নতুন কিছু খোঁজার উদ্দেশ্যে।
আমাদের আজকের আলোচনার ব্যাপ্তিকে বৃহৎ পরিসরে না নিয়ে কেবল মানুষের নিয়তি এবং কর্মফলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখব ইনশাআল্লাহ। আমি মনে করি, মানুষের নিয়তির বিরাট অংশ মানুষই নিয়ন্ত্রণ করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কেবল তার জ্ঞানবলে মানুষের সবকিছু সম্পর্কে অবহিত থাকেন। পৃথিবীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থান কাল পাত্র ভেদে একজন মানুষের জন্য একটি গন্তব্য রেখা তৈরি হয়ে যায় প্রাকৃতিক নিয়মে। একটি মানুষ তার কর্ম, চেষ্টা এবং তদবির দ্বারা সেই গন্তব্য রেখার শেষ প্রান্তে যেমন পৌঁছতে পারে তেমনি অলসতা করে আটকে থাকতে পারে একটি নির্দিষ্ট স্থানে। মানুষের কর্ম, ইচ্ছাশক্তি এবং উদ্দীপনা যেমন তাকে সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে তেমনি তার কুকর্ম তাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে ধ্বংসের অতল গহ্বরে। একটি ব্যক্তিগত উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরা সাতটি ভাই। বড় হয়ে আমরা যে যার সাধ্যমতো নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করেছি, আমাদের পরিশ্রম, দক্ষতা এবং ইচ্ছাশক্তির সুবাদে আমরা একই মায়ের গর্ভজাত এবং একই বিছানায় ঘুমিয়ে শৈশব-কৈশোর পার করার পরও কর্মজীবনে এসে একই অবস্থানে থাকতে পারিনি। আমাদের পছন্দ, রুচিবোধ এবং লেখাপড়ার ধরনেও ছিল ভিন্নতা, যা কিনা পরবর্তী জীবনের প্রতিটি পর্বে ফুটে উঠছে। আমি মনে করি, আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান বুদ্ধি এবং প্রজ্ঞা দিয়ে পৃথিবীর তাবৎ সম্ভাবনার মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। আর মানুষ তার সাধ-সাধ্য এবং রুচি অনুযায়ী কর্ম করবে এবং সেই কর্মের ফল দুনিয়া এবং আখেরাতে ভোগ করবে। মানুষ ইচ্ছা করলে নিজেকে যেমন খোদায়ী হুকুমাতের মধ্যে আবদ্ধ রেখে মুমিন মুত্তাকীর মতো জীবনযাপন করতে পারে তদ্রূপ খোদাদ্রোহী হয়ে নাফরমানি করতে পারে। উভয় কর্মেই মানুষ তার যোগ্য সাহায্যকারী এবং মদদদাতাদের পেয়ে যায়। যারা সত্যপথে থাকেন তাদের বলা হয় আসহাবুল ইয়ামিন বা ডানপন্থি। অন্যদিকে বাতেল ফেকরার অভিশপ্তদের বলা হয় আসহাবুল সিমাল বা বামপন্থি- আর এই বামপন্থিদের জন্যই জাহান্নামের আগুন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ডানপন্থি মানুষেরা সাধ্যমতো সব কর্ম করেন এবং ফলাফলের জন্য সবর সহকারে আল্লাহর ওপর নির্ভর করেন। তারা সব ব্যর্থতার জন্য নিজেদের দুর্বলতা ও অক্ষমতাকে দায়ী করেন এবং নিজেদের প্রতিনিয়ত সংশোধন করার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে বামপন্থিরা সবকিছুতেই নিজেদের দাম্ভিকতা প্রকাশ করেন- আল্লাহর দয়া এবং করুণাকে অস্বীকার করেন, সব সফলতার জন্য নিজেকে অথবা তারই মতো অন্য মানুষকে ধন্যবাদ প্রদান করেন। তারা আল্লাহ-খোদার অস্তিত্ব স্বীকার করে নিজেদের সুবিধামতো। মহাকবি ইকবাল বলেন, এদের কাছে খোদা হলো এদের ওয়াতান অর্থাৎ দেশ বা ভূখণ্ড। জমির ওপর দখল লাভের জন্য এরা পারে না এহেন কর্ম নেই। এদের কাছে দ্বিতীয় খোদা হলো দেশের জনগণ। তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে দেশের জনগণের তুষ্টির জন্য কাজ করে। এ ব্যাপারে হজরত আমির মাবিয়া এবং উম্মুহুল মুমেনিন মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর একটি পত্রালাপ উল্লেখ করা যেতে পারে। হজরত মোয়াবিয়া (রা.) একবার হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)কে লিখলেন- আমার জন্য সংক্ষিপ্ত উপদেশ সংবলিত একখানা পত্র লিপিবদ্ধ করুন। উত্তরে হজরত আয়েশা লিখলেন- আমি রসুল (সা.)কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টির পরোয়া না করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, আল্লাহ স্বয়ং তাকে মানুষের কোপানল থেকে রক্ষা করেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টির পরোয়া না করে মানুষের সন্তুষ্টি চায়, আল্লাহ তাকে মানুষের কাছে সঁপে দেন। মানুষ দুটো কারণে আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানি করে। প্রথম কারণ অজ্ঞতা এবং দ্বিতীয় কারণ অহংকার। সাধারণত মানুষ অজ্ঞতার কারণে আল্লাহর নাফরমানি শুরু করে অন্যদিক শাসক শ্রেণি করে মূলত অহংকারের বশবর্তী হয়ে। মুতারিক ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) জনৈক প্রভাবশালী শাসক মুহাল্লাবকে রেশমি জুব্বা পরিধান করে গর্ব করতে দেখে বললেন- হে আল্লাহর বান্দা। তোমার এই চলন-বলন আল্লাহ ও তার রসুল (সা.) পছন্দ করেন না। মুহাল্লাব বলল- আপনি জানেন আমি কে? মুতারিক বললেন হ্যাঁ, জানি। প্রথমে তুমি নাপাক বীর্য ছিলে এবং পরিণামে নাপাক মাটি হয়ে যাবে। বর্তমানে পেটের মধ্যে নাপাক ময়লা বহন করে চলছ। মুহাল্লাব এ কথা শুনে চলে গেল এবং গর্ব পরিত্যাগ করল।
আমরা আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই উপসংহারে চলে যাব। কাজেই আলোচনার শুরুর অংশটা নিয়ে কিছু বলে আজকের লেখা শেষ করব। আমার শৈশবকালের দেখা প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর প্রায় সবই বলতে গেলে উধাও হয়ে গেছে। মানুষের চেষ্টা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতার জন্য রোগবালাইয়ের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে। মানুষের সচেতনতার জন্য রোগবালাইয়ের আক্রমণ অনেক কমে গেছে। প্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ এবং সেচব্যবস্থা গড়ে তোলার কারণে বন্যা ও খরা মোকাবিলা করা যাচ্ছে। কাজেই অতীতকালের লোকজন যে তাদের দুর্ভোগের জন্য আল্লাহকে দায়ী করত তাতে কেবল অজ্ঞতামূলক নাফরমানিই প্রকাশ পেত।
বর্তমানে কালের সভ্যতার উন্নয়ন নিঃসন্দেহে মানুষের ঐকান্তিক চেষ্টার ফসল। মানুষ যদি একবার চিন্তা করে যে আল্লাহ প্রদত্ত মস্তিষ্ক, শক্তি ও সামর্থ্য ব্যবহার করে সে এসব করতে পেরেছে তাহলে তার হৃদয় অহংকারে আক্রান্ত না হয়ে বিনায়াবত হয়ে পড়বে। সমাজ-সংসার এবং রাষ্ট্রের অনাসৃষ্টি বন্ধ হবে। সমাজের ঊর্ধ্বস্তরে অহংকার বন্ধ হলে নিম্নস্তরের অজ্ঞতা দূর হয়ে যাবে। তখন কিন্তু কেউ আল্লাহকে উদ্দেশ করে বলবে না- এইটা তোমার কেমন বিচার!
লেখক : কলামিস্ট