জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য বিএনপির ওপর ভিতর-বাইরের নানা চাপ। বেশ কিছুদিন ধরে টানাপড়েনও চলছে দুই দলের মধ্যে। বাইরে এমন একটা ধারণা আছে যে, জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের উদ্দেশ্যে শিগগিরই ২০-দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হবে। জামায়াতের সঙ্গে সখ্য গড়াকে উপলক্ষ করে লীগ সরকার এবং শাসকলীগ ও তার মিত্ররা দেশে-বিদেশে বিএনপির বিরুদ্ধে এমন একটা যুৎসই প্রচারের মওকা পেয়েছিল যে, বিএনপি শুধু জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকই নয়, দলটিই জঙ্গিবাদী দল হয়ে গেছে। সরকার কার্যকরভাবেই তা কাজে লাগাতে পেরেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো বিএনপিকে সরাসরিই বলেছে- জামায়াত ছাড়। বিএনপির আন্তর্জাতিক মিত্র বলে ইদানীং যাদের ভাবা হয়, তারাও একই চাপ দিয়েছে বলে শোনা যায়। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে স্পষ্ট করেছেন যে, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে, কিন্তু একই সঙ্গে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদেরও বিরুদ্ধে। ম্যাসেজটা যে একেবারেই পরিষ্কার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বেগম খালেদা জিয়া এবং নরেন্দ্র মোদির ওয়ান-টু-ওয়ান একান্ত আলোচনায় কি কথা হয়েছে তা জানা যায়নি। ভারতীয় একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বেগম জিয়া সে সম্পর্কে কিছু না বলে এটুকু বলেছেন, 'ওয়ান-টু-ওয়ান' আলোচনার বিষয় প্রকাশ করা হবে না। দুই নেতার একান্ত বৈঠকের পর বেগম খালেদা জিয়াকে বেশ আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়েছে, মিডিয়ায়ও বিষয়টা এভাবেই চিত্রিত হয়েছে। বৈঠকের পর উচ্ছ্বসিত বেগম জিয়া বলেছেন, আলোচনায় তিনি সন্তুষ্ট। এর ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, বিএনপি চেয়ারপারসনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রকার হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত হয়তো দিয়েছেন। বেগম জিয়ার এখনকার একমাত্র এজেন্ডা হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী বা আগাম নির্বাচন। বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে দশম সংসদ নির্বাচনটি হয়েছে তা কেমন 'নির্বাচন' ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা জানেন না এমন হতে পারে না। বাংলাদেশের ওই আদর্শহীন বিতর্কিত নির্বাচনের পরে হয়েছে ভারতের লোকসভার ঐতিহাসিক নির্বাচন। ঐতিহ্যবাহী সর্বভারতীয় কংগ্রেসকে প্রায় 'ধুয়ে মুছে' দেওয়ার মতো ফলাফল করেছে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। লোকসভায় আনুষ্ঠানিক বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার মতো ৫৫টি আসনও পায়নি কংগ্রেস। তারপরও সেই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি-কারচুপি কিংবা ভোট ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। আর আমাদের নির্বাচনে কী হয়েছে? ৩০০ আসনের সংসদে ১৫৩ আসনে কোনো প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। অথচ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের কথা বলা আছে বাংলাদেশের সংবিধানে। ভারতের মতো আদর্শ নির্বাচন ব্যবস্থার অনুসারী একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী তেমন নির্বাচন সমর্থন করেন কি করে? তিনিও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, জাতিসংঘের মতো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে চান কি না তা স্পষ্ট করে না গেলেও, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বেগম খালেদা জিয়ার 'বডি ল্যাঙ্গুয়েজ' যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় 'তিনি সন্তুষ্ট'- এ বক্তব্যকে অর্থপূর্ণ মনে করছেন। 'যে কথা যাবে না বলা'- একান্ত আলোচনার সেই 'কথাটা' বেগম খালেদা জিয়ার আকাঙ্ক্ষানুকূল না হলে গত ক'দিন তাকে এতটা উজ্জীবিত মনে হতো না। গত ১৬ জুন নোয়াখালী জেলা বার আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তার বক্তব্যে দৃঢ় একটা আশাবাদ ফুটে উঠেছে। বিএনপির নানামুখী কঠোর সমালোচনার জবাবে তিনি বলেছেন, 'বিএনপি আছে, বিএনপি থাকবে। আমরা সময়ের অপেক্ষায় আছি। নির্বাচন হবে। বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।' ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর তার এমন দৃঢ়চেতা ভাব অবশ্যই অর্থপূর্ণ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারে বাইরের দুনিয়ার অধিকাংশ দেশ বিএনপির অবস্থানের পক্ষে ছিল। যাদের মধ্যে কিছুটা রিজার্ভেশন ছিল গত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর তারাও কনভিনসড যে, সেই নির্বাচনেও একই আচরণ করত শাসক দল। এত বড় বড় দেশ এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে প্রকাশ্যে সোচ্চার থাকার পরও সরকার একতরফাভাবে নির্বাচনটি করে নিতে পেরেছে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে। নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ এবং পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের বাংলাদেশে আগমন ও তৎপরতা সম্পর্কে সবারই জানা আছে। ২০১৪ সালের জুন মাসের শেষে ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরকালে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে একটি একান্ত বৈঠক হয়েছিল। ২০১৪ সালের ২ জুলাই দৈনিক ইনকিলাব 'নির্বাচনে অংশ নিতে কংগ্রেস চাপ দিয়েছিল' প্রধান শিরোনামে লিখেছিল, 'নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, কীভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার পাশ কাটিয়ে জনসমর্থনহীন একটি নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ দিয়েছিল। ওই বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়েরও কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সফরে এলে আমরা সুজাতা সিংকে জানিয়েছি কেন বিএনপিসহ ১৯ দলীয় জোট (তখনো ২০ দলীয় জোট হয়নি) নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। আমরা এটাও বলেছি, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল কোনো গোপন সংগঠন নয়। নির্বাচন স্বচ্ছ না হলে তাতে অংশ নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তবুও উনি চাপ সৃষ্টি করেছিলেন ভোটারবিহীন একটি নির্বাচনে অংশ নিতে। একই সঙ্গে তিনি তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের সমালোচনা করে সুষমার কাছে প্রশ্ন রাখেন, এটা কি কোনো গণতান্ত্রিক দেশের আচরণ?' প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৬ ও ৭ জুন ভারতের বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে একান্ত বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া কি তার এক বছর আগের সেই প্রশ্নের জবাব পেয়েছেন? গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আচরণ পাওয়ার কোনো আশ্বাস কি পেয়েছেন? হয়তো পেয়েছেন; হয়তো পাননি। আমরা জানি না, কেউই জানেন না তারা দুজন ছাড়া। তবে বেগম খালেদা জিয়ার শান্ত অথচ দৃঢ় মনোভাব বলে, আলোচনাটা তার জন্য হতাশ হওয়ার মতো নয়। এবার তিনি দল গোছানোর প্রত্যয় এবং বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ এবং নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে দলে নতুন প্রাণ সঞ্চারের যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি বলেই মনে হয়। লীগ সরকার এবং শাসক লীগের মন্ত্রী-মিনিস্টার এবং নেতা-উপনেতারা ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না বলে যতই প্রকাশ্যে হাঁকডাক ছাড়ুন না কেন, ভিতরে ভিতরে তাদের মধ্যেও নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী এমপিদের স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার এবং নির্দিষ্ট সময় এলাকায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এলাকায় যাদের ভাবমূর্তি খারাপ তাদের পৃথক তালিকা করা হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। তরুণ, পরিশ্রমী ও ক্লিন ইমেজের যারা দলে আছেন তাদের এলাকায় গিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। সাড়ে তিন বছর পর নির্বাচন হলে এখন থেকে এমন নির্বাচনকেন্দ্রিক সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করার কথা নয়। একটি সর্বজনস্বীকৃত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের মর্যাদা বহির্বিশ্বে কেমন হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই অভিজ্ঞতা আছে। তার আগের দুই সরকার নিয়ে তেমন বিতর্ক ছিল না। সংসদে প্রকৃত বিরোধী দলও ছিল। এখন বর্তমান সরকারের অবস্থান নিশ্চয়ই সুখকর নয় তেমন। বাস্তবতা এবং বাইরের, বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়ার মনোভাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে কে আর বেশি জানে? তিনি এ-ও জানেন, ভারতের মুক্তমনা গণতন্ত্রীরা তাদের প্রধানমন্ত্রীর ৬ ও ৭ জুনের বাংলাদেশ সফরকে তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে দেখছেন এবং বলাবলিও শুরু করেছেন, ভারতীয় গণতন্ত্রের সুউচ্চ মর্যাদার সঙ্গে এই সফরটা মানানসই হয়নি। ভারতের প্রবীণ এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারের এই ইস্যুতে একটি সুচিন্তিত লেখা গত ১৬ জুন বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছে। তাতে তিনি লিখেছেন, 'ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরটি হয়েছে অসময়ে। দেখে মনে হয়েছিল, তিনি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পড়তি ইমেজ ঠেকাতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। ভারতের দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় তিনি বিশ্লেষণ করেছেন নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর। কুলদীপ নায়ার লিখেছেন, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরটি হয়েছে অসময়ে। তিনি সেখানে কেবল ভারত-বিরোধী অনুভূতিকেই আরও তীব্রতর করে তুলেছেন। কেননা, নয়া দিল্লিকে নিরপেক্ষ হিসেবে মনে হয়নি। কুলদীপ নায়ার লিখেছেন : আমি জানি না কেন, এবং কতদিন ধরে আমাদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনকে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে।' তার মতামতটি বাংলাদেশ প্রতিদিন ছাড়া বাংলাদেশের আরও কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয় একই দিনে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওপর দেশের অভ্যন্তরে এ ধরনের প্রবল চাপ বাংলাদেশের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতে পারে। তার সঙ্গে যে একান্ত আলোচনাকে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী বেগম জিয়া 'ফলপ্রসূ' বলছেন, এতে তার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হতে পারে। এদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিলেতে ব্যক্তিগত সফরকালেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে এক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ব্রিটিশ এমপিরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে ক্ষমতার পালাবদল ব্যবস্থা প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক ভারতের অবস্থানও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ও সুশাসনের অনুকূল হবে বলে যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে অনেকেই অনুমান করছেন যে, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি কিংবা একই বছরের প্রথম কোয়ার্টারেই বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন হতে পারে- যে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি এখন কি করবে? পুনর্গঠনের কথা বলছেন পার্টির চেয়ারপারসন। কিন্তু কাদের নিয়ে, কাদের দিয়ে সম্পন্ন করবেন এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া? যে কোনো রাজনৈতিক দলে সময়ের দাবি অনুযায়ী সংস্কার ও পুনর্গঠন একটি স্বীকৃত ও চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া সফল হয় তখন, যখন সঠিক জায়গায় হাত দিয়ে সঠিক কাজটি করা হয়। বিএনপিতে এখন প্রয়োজনটা কী? দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগঠনের অভিজ্ঞতায় বেগম খালেদা জিয়ার দলের দুর্বলতাগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকার কথা। দলের উপরের নেতৃত্ব কাঠামোয় যাদের তিনি 'গদিনসীন' করেছেন, তাদের ভূমিকা তার চেয়ে আর বেশি কে জানে? দল ক্ষমতায় আসার আগে কার বিত্তবৈভব কি ছিল এখন কি হয়েছে এবং কোন পথে হয়েছে দলের ও দেশের সাধারণরা যেমন জানেন, বেগম জিয়াও নিশ্চয়ই জানেন। দলে রাজনীতি-আদর্শ বাদ দিয়ে কখন থেকে, কিভাবে 'লুটেরা সংস্কৃতি' চালু করে দলকে দুর্বৃত্তায়িত বা জাতীয় রাজনীতিকেও দুর্বৃত্তকবলিত ও কলুষিত করা হয়েছে তাও স্ফটিকের মতো পরিষ্কার। এসব আবর্জনা সাফ না করে কীভাবে দল পুনর্গঠন করবেন বেগম খালেদা জিয়া? দলের ওপরই নেতৃত্ব কাঠামোয় কতজন আছেন যাদের সম্পর্কে পাবলিক পারসেপশন খুবই খারাপ নয়? দলে কি গণতন্ত্রের চর্চা আছে? নেতৃত্বে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কি অবসান হবে? যিনি আছেন তো আছেনই। তার পরে তার স্ত্রী কিংবা সন্তান অথবা নাতি-পুুতি! অন্যদের কী কোনো প্রত্যাশা থাকতে নেই? ব্যক্তি বা পরিবারবিশেষের 'কামলা খাটার' জন্যই অন্যরা দল করবে? দলে জিয়ার প্রকৃত অনুসারীরা কোথায়? আদর্শবাদীরা কই? জিয়াবিরোধী ও জেনারেল ওসমানীর ভাবশিষ্য, অন্যরাজনীতির অন্য সংগঠনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট ফুট-ফরমায়েশ খেটে, তোষামোদি করে মন জয় করা কর্মচারীদের দ্বারা কি কোনো রাজনৈতিক দল চালানো যায়? সিইও-স্টাফ অফিসার দিয়ে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, করপোরেট হাউস চালানো যায়, রাজনৈতিক দল নয়। দুবারের বেশি দলের নেতা বা সরকারের নেতা হওয়ার রীতি রদ না করলে কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট মনোবৃত্তির জন্ম হয় ও প্রকাশ ঘটে। এসব রদ করে রাজনীতি ও আদর্শের ঝাণ্ডা উঁচিয়ে দলে ও সরকারে প্রকৃত গণতন্ত্র চর্চার জন্য ২০০৭ সালে দলের সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। পরিণতি সবার জানা। নির্বাচন বা আন্দোলনকে সামনে রেখে দল পুনর্গঠন বলুন আর সংস্কার বলুন, এ কাজগুলোই করতে হবে ম্যাডাম জিয়াকে। আমূল সংস্কার করতে হবে দলে। তিনি কি এই কাজে শহীদ জিয়ার সঙ্গে কাজ করা সারা দেশের কোণাঠাসা অথবা বিতাড়িত বা বিরক্ত কিংবা পথ আগলে রাখা বিএনপির সাচ্চা সৈনিকদের কাজে লাগাবেন? কষ্ট করে, উদ্যোগ নিয়ে খুঁজে বের করবেন তাদের? এই দায়িত্ব আবার গুলশান অফিসের কর্মচারীদের ওপর অর্পিত হবে না তো! জামায়াত ছেড়ে 'রাজনৈতিক পাপ' স্খলনের সিদ্ধান্তটা নেবেন অতি দ্রুত? ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানের বিষয়টি কি মাথায় রাখবেন? এ ব্যাপারে তিনি আগে সিদ্ধান্ত না নিলে জামায়াত তাকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে। ইতিমধ্যে তারা দলে দলে আওয়ামী লীগে যোগদান শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ-জামায়াতের সংগঠনিক সিদ্ধান্তের বাইরে এসব যোগদানের হিড়িক পড়েছে ভাবার কারণ নেই।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
ই-মেইল : [email protected]