সম্ভবত ১০ জানুয়ারির ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের পরে জনাকীর্ণ পরিবেশে (জাতীয় অধ্যাপক নূরুল ইসলাম সাহেবের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও) পিজি হাসপাতালে প্রথম রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতির জনকের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে ডাক্তারদের প্রতি ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ দিয়ে প্রথমেই বললেন, 'আপনারা শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী, আপনারা দেশের মানুষ, আপনারা জানেন দেশের অবস্থা কি। স্বাধীনতা সংগ্রামে বিভিন্ন স্তরের লোক যেমন জীবন দিয়েছে, ডাক্তাররাও তেমনি দিয়েছে। এ পর্যন্ত যে নাম আমরা পেয়েছি, তাতে দেখা যায় ৫০ জন ডাক্তারকে শহীদ হতে হয়েছে। ৫০ জন ডাক্তার তৈরি করতে কি লাগে তা আপনারা জানেন। দুনিয়ার ইতিহাসে দেখা যায় এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও ডাক্তারদের হত্যা করা হয় না। দুই পক্ষে যখন যুদ্ধ হয়, দুই দেশে যখন যুদ্ধ হয় এতে ডাক্তাররা যুদ্ধবন্দী হয়ে পড়লে তাদের হত্যা করা হয় না, এমনকি খারাপ ব্যবহারও করা হয় না। কিন্তু পাকিস্তানি নরপশুরা এতবড় পশু যে, তারা আমার ডাক্তারদের ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। ৫০ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। ডাক্তার ইসলামকে আমি বলেছি পিজি হাসপাতালের দেয়ালের কাছে পাথরে এই ডাক্তারদের নাম ও ইতিহাস লিখে রাখুন। যাতে প্রত্যেক ডাক্তার দেখে যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের দান কতখানি। এর ফলে বোধ হয় দেশের জনগণের প্রতি তাদের দরদ বাড়বে।'
আসলে বর্তমানে হিসাব-নিকাশ করে দেখা যায় শতাধিক ডাক্তার এ দেশে শহীদ হয়েছেন স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। আমি অবশ্যই আমার প্রশাসনের সহায়তায় শ্বেত পাথরে খোদাই করে তাদের নাম লিখেছি। লাইট এলার্ট করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য এখনো ‘Light & sound’ করতে পারিনি। আমার দ্বিতীয় পরিকল্পনা আছে, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বেতারের যে কক্ষে বসে ভাষণ দিয়েছিলেন এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক মাস্টার পিস ভাষণটি যে রুম থেকে বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল সেই রুমটা, বেতার ভবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত হলে তাকে ‘Light & sound’ এ রূপ দেব। যেখানে হঠাৎ করে Light জ্বলে উঠবে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটা লাইন উচ্চারিত হবে।
বুদ্ধিজীবী যারা তারা কিন্তু কখনো পরজীবী হন না। বরং পৃথিবীর সব বুদ্ধিজীবী শ্রেণির মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শ্রমজীবী হিসেবেই বেঁচে থাকেন এবং দেশকে বাঁচান। পয়সা, সেবা, মানবতাবোধ একটি অপরটির পরিপূরক নয়। পয়সা দিয়ে মানবতাবোধ কেনা যায় না বা সৃষ্টি করা যায় না। সেবার মনোভাব না থাকলে যত পয়সা দেওয়া হয় না কেন প্রকৃত সেবা আপনি দিতে পারবেন না। বঙ্গবন্ধু সেখানেও বলেছিলেন 'কিন্তু পয়সা দিয়ে যে সব কিছু হয় না, সেটা আপনারা বুঝেন, পয়সার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা জিনিসের দরকার, সেটা হলো মানবতাবোধ। আমার মনে হচ্ছে, আপনারা বেয়াদবি মাফ করবেন, আমরা যেন মানবতাবোধ হারিয়ে ফেলেছি। পয়সা কোনো জায়গায় কম দেওয়া হচ্ছে না। ভিক্ষা করে হোক, বন্ধুরাষ্ট্রদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে হোক, ব্যাংকের থেকে সাহায্য নিয়ে হোক, গ্র্যান্ট নিয়ে হোক, পয়সা এনে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় চরিত্র আমাদের নষ্ট হয়ে গেছে। আমি কুমিল্লার সভায় বলেছিলাম যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে বেটে খাওয়া যাবে, বাংলাদেশ সোনার বাংলা করতে পারবেন না যদি সোনার মানুষ গড়তে না পারেন। আপনাদের কাছে বলতে গেলে বলতে হয়, আমি যেন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমি যেদিকে চাই সেদিকে 'মানুষ' খুব কম দেখি। মানুষ এত নীচ হয় কী করে? মানুষ মানুষের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে পয়সা নেয় কী করে? মানুষ গরিব-দুঃখীর কাছ থেকে কী করে লুট করে, আমি বুঝতে পারি না।'
জাতির পিতা শুধু এ-বলে ক্ষান্ত হননি, তিনি হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও দৃষ্টি দিতে বলেন, এমনকি তিনি এটুকু বলতে ভুল করেননি, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সামরিক শাসনে ডাণ্ডার ভয়ে আপনারা কী করে পরিষ্কার রাখতেন। দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার জন্য সেপটিক হয়। রোগীর প্রচুর কষ্ট হয়, এটুকুও তিনি অনুভব করেছিলেন। ডাক্তারদের ঘনঘন ছুটি ভোগ, গ্রামে না যাওয়া- এ নিয়েও বঙ্গবন্ধু আমাদের যথেষ্ট উপদেশ দিতেন। তিনি এ কথাও বলতে ভুলেননি, 'সাদা কাপড়-চোপড় দেখলেই কেন তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেন? আর দুঃখী মানুষ এলেই কেন তাকে রাস্তার বাইর করে দেন, ভয় বলে চিৎকার করেন? এই মনোভাবের পরিবর্তন কবে আপনাদের হবে? আমি শুধু আপনাদের ডাক্তার সাহেবদের বলছি না। এটা যেন আমাদের জাতীয় চরিত্রের মধ্যে এসে গেছে। এ জাতীয় চরিত্রের প্রতি চরম আঘাতের প্রয়োজন আছে। একবার আমাকে কোনো খবরের কাগজের বা টেলিভিশন কোম্পানির একজন জিজ্ঞাসা করেছিল যে, আপনার কোয়ালিফিকেশন কী? আমি হাসতে হাসতে বলেছি, 'আমি লাভ মাই পিপল। What is your disqualification? I love them too much. বোধ হয় সেটা অনেকে দুর্বলতা মনে করে নিয়েছিল।' এখনো আমরা ডাক্তাররা গ্রামে যাই না। কিন্তু বেতন নেই। চাকরি করি। অনেকেই বলেন, গ্রামে থাকার মতো পরিবেশ নেই। একবার ভেবে দেখুন আপনি, আমি কোথায় জন্ম নিয়েছিলাম।
তিনি আরও বললেন, 'সততা ফিরে না এলে কোনো জাতি বড় হতে পারে না। আপনাদের প্রতি অভিশাপ পড়বে। ৩০ লাখ লোকের আত্মা আপনাদের অভিশাপ করবে। আপনারা দেখেছেন মুসলিম লীগের বড় বড় লিডাররা যারা বড় বড় বাড়ি করে আরামে ছিল একদিন, অভিশাপে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছে, আমাদের এই দেশে আমরা যারা আছি তারা যদি চরিত্রের পরিবর্তন না করি, তাহলে এমন দিন আসবে, এমন ঝড় আসবে, যে ঝড়ে আপনারা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবেন।' জাতির জনকের সেই দর্শন, যা এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, যা এ জাতির প্রত্যাশার অতীত ছিল। তাই আমরা জনকের প্রত্যাশার মূল্য দিতে পারিনি। শুধু তাই নয়, সেই রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ডাক্তারদের মানবতা, মনুষ্যত্ব ও সততা সম্পর্কে যা বলেছিলেন, 'আপনাদের কাছে আমি সেই জন্য আবেদন করব যে, আপনাদের মানবতাবোধ থাকা দরকার, মনুষ্যত্ব থাকা দরকার, সততা থাকা দরকার, না হলে কোনো জাতি কোনোদিন বড় হতে পারে না। আপনারা শুধু নিজেকে অপমান করছেন না, আপনারা সাড়ে সাত কোটি মানুষকে অপমান করছেন। এবং আপনারা অপমান করছেন, যারা মারা গেছে সেই শহীদদের আত্মাকে।'
বঙ্গবন্ধু এ কথা বলতেও ভুল করেননি- "বেয়াদবি মাফ করবেন, মানুষ আমার কাছে অভিযোগ করে, হাসপাতালে ভর্তি হতে পারি না বাড়িতে গিয়ে পয়সা না দিলে, পয়সা দিয়ে যদি বাড়িতে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করি সার্টিফিকেট নিয়ে এসে ভর্তি হতে পারি। একটু মেহেরবানি করুন। সাত-আট মাস চলে গেছে আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি, আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি, নৌকায় ঘুরেছি, সাইকেলে ঘুরেছি, পায়ে হেঁটে বেড়িয়েছি, আমি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সমস্যার সঙ্গে জড়িত আছি, আমি সব খবর রাখি।"
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মতো বঙ্গবন্ধুও নার্সদের সম্মানের চোখে দেখতেন। তাদের মর্যাদার প্রতি তিনি ছিলেন সদা সচেতন। রাজনীতির এই দার্শনিক বেশিদিন সময় পাননি, যদি আর পনেরটি বছর তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে আজকে ২০২১ সালে যেই মধ্যম আয়ের দেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি তা ১৯৮০ সালের মধ্যেই হয়ে যেত। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এ দেশ এবং জাতিকে ৩৫ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৫ বছর একটা জাতির ইতিহাসে এক বিরাট সময়। নার্স এবং ডাক্তারদের বিভিন্ন দেশের একই পেশার লোকদের সঙ্গে তুলনা করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- "আর একটা জিনিস আমি দেখেছি, দেখে আশ্চর্য হয়েছি। আমি নিজে রোগী হয়ে দেখেছি, ঘুরে দেখেছি। আমাদের নার্সিং যেন আমাদের সমাজের জন্য একটা অসম্মানজনক পেশা। আমি বুঝতে পারি না এ সমাজ কী করে বাঁচবে। একটা মেয়ে দেশের খাতিরে নার্সের কাজ করছে, তার সম্মান হবে না আর ভালো কাপড়চোপড় পরে যারা ঘুরে বেড়াবে তার সম্মান হবে অনেক উচ্চে! চেয়ারখানা তাকেই দেওয়া হবে। এ জন্য আজকে নার্সিং শিক্ষায় ও নার্সিং ট্রেনিং দানে আপনাদের যে কাজগুলো আছে একে একটু উচ্চ পর্যায়ে নিতে হবে। এরও একটা মান থাকতে হবে। আমি ডাক্তার সাহেবদের সঙ্গে পরামর্শ করেছিলাম যে, আপনারা আমাকে একটা প্ল্যান দেন যাতে গ্র্যাজুয়েট মেয়েরা এখানে আসতে পারে। কত বেতন দিলে তারা এখানে আসতে পারে। আই এ পাস মেয়েরা কীভাবে আসতে পারে। ম্যাট্রিক পাস মেয়েরা কীভাবে আসতে পারে। তাদের আসতে হবে সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে এবং শিক্ষার কোর্স হবে, ট্রেনিং হবে, তারপর তাদের চাকরির একটা সিস্টেম থাকবে। আমরা ঠাট্টা করে বলি- একটা রোগী পায়খানা করে ফেলেছে। রোগী পায়খানা করে পড়ে আছে, যে পর্যন্ত সুইপার না আসবে আমরা বেডপ্যান সরিয়ে দেব না। ওটা সুইপারেরই কাজ। এই যে মেন্টালিটি-রোগী অসুস্থ, মরে যাচ্ছে, তার পাশে বেডপ্যান পড়ে রয়েছে, আমি কেন হাত দিয়ে সে বেডপ্যান সরিয়ে নিব না। সুইপারদের দরকার কেন? আমি লন্ডনে অনেক সময় দেখেছি, আমাকে চিকিৎসা করত যে নার্স, ঠিক সময় সে এসে বেডপ্যানটা নিয়ে চলে গেল। কেন আমাদের এখানে তা হবে না? কেন ডাক্তাররা নার্সদের সরিয়ে রাখছে দূরে। কেন আমাদের মানসিক পরিবর্তন হবে না, আমাকে বুঝিয়ে বলেন। সেবার মনোবৃত্তি না থাকলে কোনো কিছু হবে না। এটা যেন ওয়াটার-টাইট কম্পোর্টমেন্ট। ডাক্তার সাহেব যাবেন, হাত দেখবেন, বুক দেখবেন, প্রেসক্রিপশন করবেন, চলে আসবেন, নার্সরা যাবেন ইঞ্জেকশন দিবেন। রোগী পায়খানা করে পড়ে থাকবে, সুইপার যখন আসবে তখন পরিষ্কার হবে। যদি সে না থাকে? ওয়ার্ড বয় যখন আসবে! ওয়ার্ড বয় বা কী? সুইপার বা কী? ডাক্তার বা কী? নার্স বা কী? সবাই সেবক। সবাই বাংলার মানুষ। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করত হবে এবং এসব ভেদাভেদ ভুলতে হবে। তা না হলে এ দেশের মঙ্গল আসতে পারে না। আপনাদের সবাইকে আমি জানি। আমাদের ডাক্তার যারা আছেন, তাদের অনেকেই তো বিদেশ ঘুরে এসেছেন। তারা নার্সের কাজ দেখে এসেছেন। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে কে কি কাজ করে তারা দেখেছেন। ইউকে কী করে? ইউএসএ, ইউএসএসআর কী করে? জামার্নি কী করে? ফ্রান্স বা অন্যান্য দেশ কী করে? সেসব দেশের ডাক্তাররা যে হাসপাতালে কাজ করে আপনারা দেখেছেন। আপনাদের পয়সা খরচ করে সেসব দেখিয়ে শিখিয়ে আনা হয়েছে। সেসব কেন এখানে চালু করেন না? এখানে আসলে আপনারা মনে করেন যে, আপনারা বড় ডাক্তার সাহেব হয়ে গেছেন ও নার্সরা কিছুই না। কিন্তু ওখানে ডাক্তার নার্সের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সমীহ করে কথা বলে। ইজ্জতের সঙ্গে কথা বলে। ওখানে ঘরটি পরিষ্কার করে দিয়ে যায় যে সে সুইপার, তার সঙ্গেও সমীহ করে কথা বলে। এর মানে ওরা অমানুষ নয়। ওরা ওই দেশের সমান নাগরিক। সমান অধিকার আছে ওদের। যে কাজই করুক না কেন সে কাজের জন্য তার সম্মান আছে। সে সমাজের প্রয়োজনে কাজ করে। তার নিজের পেটের তাগিদে যেমন কাজ করে, সমাজের প্রয়োজনেও সেটা করে।"
১৯৭২-এর ৮ অক্টোবরের পরে আজ ৪৩ বছর পার হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু যা বলেছিলেন আজও যেন তাই দেখা যাচ্ছে। তিনি চেয়েছিলেন আমাদের পরিবর্তন হওয়া দরকার। মানবিক পরিবর্তন। তার আহ্বান ছিল মানবতাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মানবতাবোধ আপনাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে এবং মানুষকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আপনারা দেখতে পাবেন যে, আপনাদের দেশের চেহারা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সশস্ত্র যুদ্ধের পরে, গৃহযুদ্ধ চলে, দুর্ভিক্ষ আসে। লাখ লাখ লোক গৃহযুদ্ধে এবং দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারায়। বঙ্গবন্ধু তা হতে দেননি। তার ব্যক্তিগত ইমেজ, দূরদর্শিতা, বন্ধুরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্য- সবই আমরা পেয়েছিলাম তাঁর জন্যই।
চিকিৎসক হিসেবে আমার কাছে মনে হচ্ছে ৭ মার্চের ভাষণ ছিল স্বাধীনতার মন্ত্র, স্বাধীনতার ঘোষণা, সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক। ৮ অক্টোবরের ভাষণ ছিল চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সবার প্রতি মনুষ্যত্বের গুণাবলি নিয়ে মানবতাবোধ জাগ্রত করে, রোগাক্রান্ত মানুষের প্রতি দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ভাষণে কবিগুরুকে চ্যালেঞ্জ করেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- 'কবিগুরু তোমার বাঙ্গালী সম্পর্কে উক্তি মিথ্যা হয়ে গেছে। জনকের বাঙ্গালী মানুষ হয়ে গেছে।' আসলে বঙ্গবন্ধুর এই চ্যালেঞ্জের আত্দবিশ্বাসের মূলে আমরাই কুঠারাঘাত করেছি। তার পরেও বলব, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবই সম্ভব হবে। আমাদের চিকিৎসকদের আরও বেশি মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে হবে। চিকিৎসা যেহেতু একটি মৌলিক অধিকার ও সেবা, তাই চিকিৎসককে হতে হবে সেবক বা পূজারি। তাদের মনে রাখতে হবে রোগী হলো অতিথি বা দেবতা।
চিকিৎসক সমাজের একজন ক্ষুদ্রতম সদস্য হিসেবে আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের অক্টোবরে যা বলেছিলেন, আজও আমরা একই জায়গায় রয়েছি। মাঝে ৪৩টি বছর পেরিয়ে গেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে একজন মানব সন্তান জন্মের পরে যখন বড় হতে শুরু করে তখন আমরা আশীর্বাদ করি এই বলে- ভালো মানুষ হও, এটা থেকে বোঝা যায় মানুষের মনুষ্যত্বকে সংশোধন করা যায় আমৃত্যু এবং মানবিক গুণাবলির অর্জনের শেষ নেই। ডাক্তারদের তাই হওয়া উচিত, অতি মানব। লক্ষ্য করে থাকবেন আমরা কিন্তু কখনো একটা গরু বা ছাগলকে বলি না, হে গরু/ছাগল, তুমি ভালো গরু বা ভালো ছাগল হও।
লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।