বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও কূটনৈতিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গত ৫ দশকে নতুন উচ্চতায় স্থান পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দু'দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারণের কারণে ২০২২ অর্থ-বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেটি সামনের দিনগুলোতে আরো বৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৬ এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশের যথাক্রমে স্বল্পোন্নত ও উন্নতদেশে পরিণত হওয়ার অভিযাত্রায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবেলায় আমাদের রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি রফতানির গন্তব্যস্থলসমূহের সম্প্রসারণ করা একান্ত অপরিহার্য। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য সৌদি আরব একটি আদর্শ গন্তব্যস্থল হিসেবে আর্ভিভূত হয়েছে।
সম্প্রতি সৌদি আরবের বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী খালেদ-আল ফালেহ এর বাংলাদেশ সফর দু'দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সর্ম্পকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছার দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। বাংলাদেশে খাদ্য, জ্বালানি, লজিস্টিকস এবং পণ্য উৎপাদান খাতে সৌদির বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুসংহতকরণের প্রত্যয় পরিলক্ষিত হয়েছে। এমন বাস্তবতায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার মনে করেন, অবকাঠামো, জ্বালানী এবং উৎপাদনখাতসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতে সৌদি বিনিয়োগ প্রাপ্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশকে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নে আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
দু'দেশের মধ্যকার দ্বৈতকর চুক্তি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, যা সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্ক সমূহে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করবে। এছাড়াও, প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে পারষ্পরিক সহযোগিতা দুদেশের উদ্ভাবন ও প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক বলে বিশ্বাস করেন ডিসিসিআই সভাপতি। এছাড়াও, বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীদের জন্য সৌদি আরব সর্ববৃহৎ গন্তব্যস্থল, যেখানে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের কর্মীরা সৌদি আরবের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে নিজ দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩০% আসে সৌদি আরব এবং দেশটির উন্নয়ন কার্যক্রমের ব্যাপকতা প্রকৌশল, তথ্য-প্রযুক্তি সেবা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাংলাদেশ থেকে আরও অধিক সংখ্যক দক্ষ মানবসম্পদের প্রেরণের সুযোগ তৈরি করেছে। বিদ্যমান অবস্থার আলোকে বাংলাদেশ হতে আরও বেশি দক্ষ মানবসম্পদ নেওয়ার জন্য সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে দু'দেশের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির উপর জোরারোপ করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি। সেই সঙ্গে দু'দেশের বাণিজ্য সংগঠনসমূহের মধ্যকার যোগাযোগ আরও সুদৃঢ়করণ এবং নিয়মিত ভিত্তিতে বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণের মাধ্যমে নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা খুঁজে পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তারের বেসরকারিখাতের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য প্রতিনিধি দলে সৌদি আরব সফর করেছে। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের অভিযাত্রা অপার সম্ভাবনা দ্বার উন্মোচন করেছে, যেখানে সৌদি আরবের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আমাদের এ অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সহায়ক হবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত