মঙ্গলে প্রাণ রয়েছে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলেছে বহুদিন ধরেই। সেখানে আদৌ মানুষের বা কোনও প্রাণীর বসবাসের যোগ্য পরিবেশ আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সির মার্স এক্সপ্রেস মঙ্গল গ্রহের একটি অংশের ছবি তুলে পাঠিয়েছে। জানা গেছে, ওই স্থানটি আসলে মঙ্গল গ্রহের ভূমির একটি অংশ।
উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধের সীমান্তের ওই অংশ পাথুরে এবং এবড়োথেবড়ো বলে জানা গেছে। এই মার্শিয়ান ল্যান্ডস্কেপের সাহায্যেই এক সময় মঙ্গল গ্রহে ফ্লাড প্লেইনস তৈরি হয়েছিল।
উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের ঠিক সীমান্তের পাথুরে অঞ্চলটিকে নীল ফসি সাইট হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। এই ফ্লাড প্লেইনসই ব্যাপক ইঙ্গিতবাহী বাঁক এই বিশেষ বিতর্কটিতে যে, মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না। তবে এর ফলে একটা ব্যাপার সহজে জানা যেতে পারে যে, বাতাস, পানি ও বরফের এই লাল গ্রহের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে চলে যাওয়ার চিহ্নগুলো কী কী।
এই মুহূর্তে মঙ্গলের বড় পরিচয় হলো এটি অত্যন্ত শুকনো গ্রহ। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষয়ের ফলে যে ফ্লাড প্লেইনসের মতো ভূমির নির্দিষ্ট আকার তৈরি হচ্ছে নীল ফসি সাইটে তাকে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে, সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে বেশ কিছু প্রাণঘাতী বিষের উপস্থিতি রয়েছে। ফলে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেখানে ৬৮ দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে যে কোনও প্রাণীকে।
তাছাড়াও মঙ্গল গ্রহের মাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে ধুলোকণার সঙ্গে কিছু রাসায়নিক পদার্থ বিক্রিয়া করে বিভিন্ন যৌগিক কণার জন্ম দিচ্ছে, যা কোনও প্রাণের বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল নয়। আরও একটি বিষয় জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব মঙ্গল গ্রহে অত্যন্ত বেশি।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ বিষয়ক জীববিজ্ঞানী জেনিফার ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতে, এখনই মঙ্গল গ্রহের মাটি কোনও প্রাণীর বেঁচে থাকার পক্ষে আদর্শ নয়। তবে মাটির দু-তিন মিটার নীচে, যেখানে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৌঁছায় না, বা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নেই, সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা অস্বাভাবিক নয়। এই বিষয় নিয়েই চলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা। তবে বায়ুমন্ডলে থাকা আয়রন অক্সাইড ও হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মতো রাসায়নিকের উপস্থিতি আণুবিক্ষণিক জীবকেও বাঁচতে দেবে না বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার