বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি অতিঊচ্চ-শক্তির নিউট্রিনো বা ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ শনাক্ত করেছেন, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাবিশ্বের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। গবেষণাটি ভূ-মধ্যসাগরের গভীরে অবস্থিত কিউবিক কিলোমিটার নিউট্রিনো টেলিস্কোপ (KM3NeT) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়েছে।
আবুধাবির খালিফা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। গবেষণায় শনাক্ত নিউট্রিনোর শক্তি এখন পর্যন্ত রেকর্ড হওয়া যে কোনো নিউট্রিনোর তুলনায় ৩০ গুণ বেশি। এ মাসে প্রভাবশালী বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি অন্যতম বিরল নিউট্রিনোর মধ্যে একটি, যা বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করতে পেরেছেন।
গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য এবং খালিফা ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সত্যেন্দ্র থৌদাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি প্রথমবারের মতো শনাক্ত করা হলো, যার শক্তি দৃশ্যমান আলোর শক্তির তুলনায় ১০০ মিলিয়ন বিলিয়ন গুণ বেশি।’
নিউট্রিনো কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
নিউট্রিনো হলো এমন একটি উপাদান যা মহাবিশ্বের চরম ঘটনাগুলোর সময় তৈরি হয়, যেমন সুপারনোভার বিস্ফোরণ বা কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ। এই কণাগুলোর ভর থাকে, তবে এগুলো কোনো বৈদ্যুতিক চার্জ বহন করে না। এর কারণেই এগুলোকে ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ বা ভূতুড়ে কণা বলা হয়।
নিউট্রিনো আলোর কাছাকাছি গতিতে চলতে পারে এবং এদের বৈশিষ্ট্যের কারণে এগুলো মহাশূন্যের যে কোনো কিছুর ভেতর দিয়ে অনায়াসে অতিক্রম করতে পারে। এমনকি যদি একজন মানুষের আকারের নিউট্রিনো শনাক্তকারী যন্ত্র থাকত, তাহলে একটি নিউট্রিনোর তার সঙ্গে ক্রিয়া করতে প্রায় এক শতাব্দী সময় লাগত!
মহাবিশ্ব গবেষণায় নতুন দিগন্ত
গবেষকরা বলছেন, নিউট্রিনো ব্যবহার করে দূরবর্তী মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিক ঘটনাগুলো নতুনভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। ড. থৌদাম বলেন, এই আবিষ্কার মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানার এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে। পাশাপাশি, এটি আমাদের অতিঊচ্চ-শক্তির রশ্মির উৎপত্তি ও তাদের মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া বোঝার সুযোগ দিচ্ছে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম মৌলিক সমস্যা। এখন গবেষকরা নিউট্রিনোর গতি ও আচরণ আরও বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চান, যা মহাবিশ্বের গঠন ও বিকাশ সম্পর্কে নতুন তত্ত্ব প্রস্তাবনার পথ প্রশস্ত করতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল