যথাযথ মর্যাদায় ৫১তম মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে জাপানের টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। বিদ্যমান কোভিড-২০১৯ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী, জাপানিজ সুধীজন এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
শুক্রবার সকালে জাতীয় সংগীতের মূর্ছনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দূতাবাস প্রাঙ্গনে দিনের কার্যক্রম শুরু করেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ। পরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চার জাতীয় নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে, দেশ ও দেশের জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ।
পরে অনুষ্ঠিত আলোচনায় রাষ্ট্রদূত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নিহত তাঁর পরিবারের সদস্যদের, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং সম্ভ্রম হারানো সকল বীর মা-বোনদের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জাপানি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য রাষ্ট্রদূত জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই জাপান বাংলাদেশের পরিক্ষিত বন্ধু রাস্ট্র। রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশে-জাপান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি সূচিত হয়েছিল যা ক্রমশই সুদৃঢ় হয়েছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে জাপান সফরের মাধ্যমে বিগত ১৩ বছরে আরও ব্যাপক ও বহুমাত্রিক সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। ২০১৪ সালে এ সম্পর্ক “Comprehensive partnership” এ উন্নিত হয়েছে যা আরও নতুন উচ্চতায় পৌছে দিতে দু’দেশ একত্রে কাজ করে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জাপান সর্বদা বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। দু’দেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক সম্প্রসারণের আরও সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মেট্রো রেল প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, এল.এন.জি টার্মিনাল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ৩য় টার্মিনাল নির্মাণ, যমুনা নদীর উপর রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মত বড় প্রকল্পসমূহ জাপানের সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি বলেন “বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রুপ বেল্ট (বিগ-বি)”-এর আওতায় জাপানের এসকল কারিগরি এবং আর্থিক বিনিয়োগ যোগাযোগ অবকাঠামো, বিদুৎ ও জ্বালানি ইত্যাদি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টার সম্পুরক ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, সরকার জাপানি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে স্বতন্ত্রভাবে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ নির্মাণ করেছে, যা গত ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। এর মাধ্যমে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি পাবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি দলমত নির্বিশেষে সামগ্রিক অর্থনৈতিক মুক্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কাজে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার এবং বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আহ্বান জানান।
আলোচনা পর্বে সাবেক রাষ্ট্রদূত মাতসুহিরু হরিগুচি, জাপান বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে, সাবেক রাষ্ট্রদূত কিইয়কাজু ওটা এবং টোকিওস্থ দূতাবাসে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যের শিল্পী ড. ওতসুবো ওসামু প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান ও বাংলাদেশের সাথে তাঁদের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন