তুরস্কের বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান এনডিসি আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতার স্থপতি কামাল আতার্তুকেরর স্মৃতিসৌধ 'আনিতকবির'-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার সহধর্মিনী প্রফেসর ড. নুযহাত আমিন মান্নান, মিশন উপ-প্রধান মোঃ রইস হাসান সরোয়ার, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাশেদ ইকবাল, এসডিসি, পিএসসি, প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান সবুজ আহমেদসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও পরিবারের সদস্যবৃন্দ উক্ত পুষ্পস্তবক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া তুরস্কে বসবাসরত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী ও কমিউনিটির সদস্যগণও সেখানে উপস্থিত হন এবং রাষ্ট্রদূত সেখানে একটি ভিআইপি দর্শনার্থী বই স্বাক্ষর করেন। 'আনিতকবির' স্মৃতিসৌধের কমান্ডারের নেতৃত্বে একটি চৌকস প্যারেড দল রাষ্ট্রদূতকে তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা ও অভিবাদন জানান।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) অপরাহ্নে তুরস্কে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মস্য়ূদ মান্নান এসডিসি প্রেসিডেন্ট প্যালেসে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিজেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে তার পরিচয় পত্র হস্তান্তর করেন। তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী ও অনাড়ম্বর আয়োজনে উক্ত পরিচয় পত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর সহধর্মিনী প্রফেসর ড. নুযহাত আমিন মান্নান এবং মিশন উপ-প্রধান মোঃ রইস হাসান সরোয়ার ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাশেদ ইকবাল, এসডিসি, পিএসসি উপস্থিত ছিলেন।
পরিচয় পত্র অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূত তুরস্কের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তুর্কী রাষ্ট্রপতির জৈষ্ঠ্য উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিন, তুরস্কের যোগাযোগ অধিদপ্তরের পরিচালক ফিরহেত্তিন আলতুন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মহাপরিচালক রিজা হাকান তেকিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিজেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানান এবং রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এসময় রাষ্ট্রদূত ২০২১ সালে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তুর্কী রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরের বিষয়টি পুনরুল্লেখ করেন এবং উক্ত সময়ে ঢাকা সফরের আহ্বান জানান।
তুর্কী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনাকালে রাষ্ট্রদূত তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো গতিশীল ও উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করনে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, পর্যটন এবং সামরিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্পর্ককে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে তুরস্কের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ভ্রাতৃপ্রীতম বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করবেন মর্মে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি তুরস্কের সামরিক উৎকর্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশংসা করেন এবং সামরিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য দু’দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।
রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান গত সেপ্টেম্বর মাসে নবনির্মিত আঙ্কারাস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসের শুভ উদ্বোধন এবং সে সময় সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত তার বৈঠকের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ব্যাপক সক্ষমতা রয়েছে, যা অচিরেই ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া তুরস্কের সহায়তায় বাংলাদেশে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে দেয়া প্রস্তাবনার বিষয়টি পুনঃরুত্থিত করেন। মায়ানমার হতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রত্যাবাসন এবং উদ্ভত মানবিক এ সঙ্কট সমাধানে তুরস্কের সরকার ও নেতৃত্ব সর্বদা বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুর্কী জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত মস্য়ূদ মান্নানকে তুরস্কে স্বাগত জানান। এছাড়া ভবিষ্যতে ভ্রাতৃপ্রীতম বাংলাদেশের সরকারের ও জনগণের কল্যাণে সবধরণের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার বিস্তার এবং বাংলাদেশ ও তুরস্কে করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ