বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উৎপাদক, পরিবেশক, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক এবং রফতানিকারকদের এক ছাতার নিচে নিয়ে শুরু হয়েছে ৩১তম জেদ্দা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০১৯। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো/ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো বাংলাদেশ ছাড়াও মেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের ২২টি প্রতিষ্ঠান। জেদ্দা এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশন হলে শুরু হওয়া ৩ দিনের এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেদ্দার চেম্বারের ডেপুটি চেয়ারম্যান খালাফ হোসান আল ওথাইবী।
নিজেদের সুনির্দিষ্ট চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোক্তা এবং আমদানীকারদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু হয়েছে এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০১৯। জেদ্দা এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশন হলের ৮ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে মেশিনারি, পোশাক, হস্তশিল্প, ব্যাংক, চামড়াজাত সামগ্রী, ফ্যাশন, প্লাস্টিক, গিফটওয়্যার এবং টেক্সটাইল, নিটওয়্যার খাতের দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান। এই জাতীয় আয়োজন ব্যবসা এবং বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভুমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের ইকনোমিক মিনিস্টার মোহাম্মদ আবুল হাসান।
নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ব বাজারে তুলে ধরার সুযোগ পাওয়ায় উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে অংশ গ্রহণকারীরা বলছেন এখান থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বাজার ধরা সম্ভব। বায়ারদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ তৈরিতে কাজ করছেন তারা। প্রথম দিনে বেশকিছু অর্ডার পাওয়ার কথাও জানান এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধি।
সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের কঠোর নারীনীতি কিছুটা শিথিল হওয়ায় বাংলাদেশি কয়েকজন নারী উদ্যোক্তাও অংশ নিয়েছেন আন্তর্জাতিক এই বাণিজ্য মেলায়। বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানালেন জুলিয়েট ফ্যাশনে সত্বাধীকারী রাজশাহীর নারী উদ্যোক্তা জুলিয়েট।
তিনি বলেন, খুব সুন্দর পরিবেশ দর্শনার্থীও আসছেন। আশা করছি আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে এসেছি সেটি পূরণ হবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার এই সৌদি আরবে বসবাসরত ২২ লক্ষাধিক বাংলাদেশি রেমিটেন্স প্রেরণ এবং দেশে বিনিয়োগে সুযোগের কথা জানাতে সৌদি আরবে এবারই প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের ইসলামী, সোস্যাল ইসলামী এবং এক্সিম এই তিনটি বেসরকারি ব্যাংক। এই মেলায় প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণে বিভিন্ন সমস্যা এবং সমাধানের সুযোগ রয়েছে। বলছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ডেভেলপমেন্ট উইং এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া। বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসীদের ২ শতাংশ প্রণোদনার সাথে যারা ইসলামী ব্যাংকের আউটলেট বা এম ক্যাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাবে তাদেরকে আমাদের পক্ষ থেকে আরও ১ শতাংশ মোট ৩ শতাংশ নগদ প্রদান করা হবে। যোগ করেন ইসলামী ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
এই মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিল্প ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারীরা একদিকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান, ডিজাইন, প্যাকেজিং ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিপণন করতে পারেন, অন্যদিকে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপনসহ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ লাভ করবে বলে মত বিশ্লেষকদের।
প্রথমদিন মেলা পরিদর্শন করেন জেদ্দা কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল ফয়সাল আহমেদ, কাউন্সিলর (শ্রম কল্যাণ) আমিনুল ইসলাম, কার্যালয় প্রধান মোস্তফা জামিল খান, রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকনোমিক মিনিস্টার মোহাম্মদ আবুল হাসানসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বাংলাদেশিরা।
আল হারথি কোম্পানি ফর এক্সিবিশন (এসিই) এর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত মেলায় বাংলাদেশ, সৌদি আরব, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কের রাষ্ট্রীয় এবং বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বুধবার শুরু হওয়া মেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। দর্শণার্থীদের জন্য এক্সিবিশন সেন্টারটি প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম