পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে হবে সবার স্বার্থেই। এটা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের যা যা করা প্রয়োজন, সবই করা হবে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে শতাধিক ম্যানপাওয়ার এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
সোমবার স্পেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। সম্প্রতি সময়ে সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনে প্রবেশ করার সময় কয়েকজন বাংলাদেশির মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে ধরা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেউ যাতে এভাবে অবৈধ পথে না আসে, সেজন্য আত্মীয়-স্বজন কাউকেই আপনারা এ পন্থা গ্রহণে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করবেন না। যারা করবেন, তাদেরকেও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মো. শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, ‘ইরেগুলার মাইগ্রেশন’ এ যারা থাকবেন, তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন গুটি কয়েক বাংলাদেশিদের জন্য- সেটা কয়েক শ’ হতে পারে, হাজারো হতে পারে; তাদের জন্য এক কোটি প্রবাসীর ভবিষ্যতকে আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলতে পারি না।
এর আগে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় স্পেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের হলরুমে বিজয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি তার বক্তব্যে দলমত নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করার জন্য উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই বাংলাদেশ এখন কেবল পৃথিবীর তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর নয়, দ্বিতীয় এবং প্রথম বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের জন্য রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে অনেকে ভেবেছিল, সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের হজ পালন বোধহয় বন্ধ হয়ে গেল! কিন্তু শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় সৌদি আরবই প্রতিবছর শেখ হাসিনাকে দু’বার দেশটি ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানায়। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের কাজের আরো ব্যাপ্তি হয়েছে।
মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কাজ করেছেন ১০ বছর আগে, সেটা ইউরোপের অনেক দেশে এখনো অনেক দূরের পথ। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নিহত তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি স্পেন প্রবাসীসহ সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান।
এসময় উপস্থিত প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা প্রত্যেকেই এক একজন রাষ্ট্রদূত। স্প্যানিশদের কাছেও বাংলাদেশকে যথাযথভাবে তুলে ধরার দায়িত্বও আপনাদের। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাসবাদ দমন, কৃষি ক্ষেত্র, আইটি সেক্টরসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়া ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য সকল প্রবাসীদের অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান ও মিনিস্টার এম হারুন আল রাশিদের পরিচালনায় আয়োজিত বিজয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন দূতাবাস কর্মকর্তা এ এস এম রেজাশাহ পাহলভী। পরে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া বাণী পাঠ করেন দূতালয় প্রধান ও মিনিস্টার এম হারুণ আল রাশিদ, কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মো. রেদওয়ান আহমেদ ও ফার্স্ট সেক্রেটারি (লেবার উইং) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম।
বিজয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি তাহসিনা আফরিন শারমিন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেন এর সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, স্পেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও বাংলাদেশ দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
বিডি প্রতিদিন/শফিক