যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ লন্ডনের কেনটে প্রতিদিনই বাড়ছে বাংলাদেশিদের সংখ্যা। তবে এখানে বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া তুলনামূলক কম। ভালো কাজ এবং সন্তানদের ভালো স্কুলে লেখাপড়া করালেও কোথাও যেন একটা অতৃপ্তি থেকেই যায়। এজন্য নিজেদের সংস্কৃতির বলয়ে সন্তানদের ধরে রাখতে সবাই প্রাণের টানে ছুটে যান বাঙালি অধ্যুষিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। দিন বদলের পালায় কেনটেও সচেতন অভিভাবকদের সহযোগিতায় ডাটর্ফোর্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ডার্টফোর্ড বাংলা স্কুল এবং বাংলা মিউজিক স্কুল 'সপ্তসুর'। এক বছর আগে জিল্লুর রহমান মুন্নার নেতৃত্বে, আবদুর রউফ, শরিফুল ইসলাম, সুলতানা রাজিয়া, ফাহমিদা আহমেদ বিথী, জাহিদ শৈবাল, মুশতারি সুলতানা, রাশেদা রহমান শিখার সহযোগিতায় গড়ে তোলা হয় এই ডার্টফোর্ড বাংলা স্কুল। প্রথমে নিজেদের এবং বন্ধু-বান্ধবদের সন্তানদের নিয়ে স্কুলের যাত্রা শুরু হলেও এখন এর পরিধি অনেক বেড়েছে, প্রায় ৩৫ জন ছাত্রছাত্রী এখানে নিয়মিত বাংলা শিখছে। আগামী জিসিএসি পরীক্ষায় এই স্কুলের চারজন ছাত্র-ছাত্রী বাংলা বিষয়ে অংশ নিতে যাচ্ছে, যা এই স্কুলের অনেক বড় একটি সাফল্য।
এদিকে, বিলেতের বিভিন্ন বাংলা মাধ্যমে কাজ করা অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ রুপি আমিন এর পরিচালনায় প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা মিউজিক স্কুল সপ্তসুর। এই মিউজিক স্কুলটির যাত্রা মাত্র কয়েক মাস। ডার্টফোর্ড বাংলা স্কুলের নিবার্হী জিল্লুর রহমান মুন্নার উৎসাহেই এ দুটি প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন করল। লাল সবুজের রঙে উপস্থিত হয়ে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকসহ আগত সবাই প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশকে কতটা ভালোবাসেন তারা।
ডার্টফোর্ডের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি হলে প্রথমবারের মতো উদযাপিত বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ১০টায়। এদিন বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই আসতে শুরু করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলা স্কুলের নির্বাহী জিল্লুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি স্কুলের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও আগত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। পরে সপ্তসুর বাংলা মিউজিক ইস্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে। এতে তবলায় সহযোগিতা করেন গৌতম শিকদার। দেশাত্মবোধক গানের পর বাংলা স্কুলের অন্যতম সংগঠক আবদুর রউফের রচনা ও নির্দেশনায় একটি শিক্ষনীয় নাটিকা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো এই নাটকে অংশগ্রহণ করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এবং তাদের পরিবেশনা সকলকে মুগ্ধ করে।
দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে অহনা, রেইনা ও তেহজিব। গীতির নজরুল সংগীত এবং ওয়াসিফের রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশনা ছিল প্রাণবন্ত। মাঝে বাংলা স্কুলের তিনজন ছাত্র-ছাত্রী তাদের বাংলা লেখা ও শেখার দক্ষতা উপস্থিত সবার সামনে তুলে ধরে। স্কুলের ছোট বড় প্রায় সব ছাত্র-ছাত্রী কবিতা ও ছড়া পাঠ করে। বাংলা স্কুলের পক্ষ থেকে সকল ছাত্র-ছাত্রীকে ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করা হয়। সেই সঙ্গে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এবং শিক্ষকদেরও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তানভীর ও তানিয়ার প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবং ডার্টফোর্ড বাংলা স্কুলের অন্যতম অভিভাবক এমদাদুল হক চৌধুরী, বিশিষ্ট টিভি উপস্থাপিকা উর্মি মজহার, বি সি এ সভাপতি এমএ মুনিম, ডাক্তার মঞ্জুর শওকত, সাবেক বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) চট্টগ্রাম, ডাক্তার আব্দুর রশিদ ও তালেহা বেগমসহ আরো অনেকে। সবশেষে সপ্তসুরের ছাত্র-ছাত্রীরা ইংরেজি এবং বাংলায় মিশেল, আমরা করব জয় এই গানটি দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের বাংলাদেশ পেয়েছি সেই সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শিকড়ের কাছাকাছি রাখতে সবার সম্মিলিত ভূমিকা রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন জাকির হোসেন, আব্দুর রউফ, নাহিদ ও জামান।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব