বিজয় দিবসে রণাঙ্গনের সঙ্গীদের কাছে পেয়ে আপ্লুত সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্তরঞ্জন দত্ত তথা সি আর দত্ত। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ডেন্টিস্ট পুত্র রাজা দত্তের বাসায় অবস্থানরত এই সেক্টর কমান্ডারের সান্নিধ্যে প্রবাসের একদল মুক্তিযোদ্ধা বিজয় দিবস উদযাপন করেন।
সোমবার রাজা দত্তের বাড়ির অডিটোরিয়ামে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয় এবং সি আর দত্তকে সাথে নিয়ে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে পুরো পরিবেশকে একাত্তরের আমেজে পরিপূর্ণ করেন উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সহায়তায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের উদ্যোগে প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধা এবং হোস্ট সংগঠনদ্বয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সময় একাত্তরের স্মৃতিচারণ করেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ। সঞ্চালনা করেন ফোরামের নির্বাহী সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক লাবলু আনসার।
এসময় সি আর দত্ত বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর হলেও রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের ঘটনাটি সত্যি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এর মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মাও শান্তি পাবে।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার জেনারেল দত্ত উল্লেখ করেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু করে শেখ হাসিনা যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে রাজাকারের তালিকা প্রকাশের ঘটনাটিও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে সহায়ক হবে।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং বাংলাদেশের সকল মানুষকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে সি আর দত্ত বলেন, ‘জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় তিনি (শেখ হাসিনা) নিরলসভাবে কাজ করছেন। এজন্য তাকেও ইতিহাস অবশ্যই সম্মানিত করবে।’
সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন বীর প্রতিক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মঞ্জুর আহমেদ, কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় এবং শহীদ হাসান, মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, ফোরামের সেক্রেটারি মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, ভাইস প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু, মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সানাউল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা এম এ আওয়াল, মুক্তিযোদ্ধা মলয় সাহা, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম সরকার, মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, মুক্তিযোদ্ধা দেবেন্দ্র দাস, মুক্তিযোদ্ধা মলিন চন্দ্র সাহা, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া, কোষাধ্যক্ষ আলিম খান, যুব বিষয়ক সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোস্তফা কামাল পাশা মানিক প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতার পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসবের জন্যে বোনাস চালু এবং চিকিৎসায় নানা সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের জন্যে সকলেই গভীর কৃতজ্ঞতা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি। একইসাথে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া করা হয়।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের যে অঙ্গিকার করা হয়েছে তা যেন বাস্তবায়িত হয় সে অনুরোধ জানান মুক্তিযোদ্ধারা।
বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে দিপ্ত প্রত্যয়ে-এই ধারার সমর্থনে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং মুজিব বর্ষকে সর্বাত্মকভাবে সাফল্যমণ্ডিত করার আহ্বান জানান। এছাড়াও বিজয় সমাবেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রবাস প্রজন্মে বিস্তৃত করার পরিক্রমায় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার অঙ্গিকার করেন।
বিজয় দিবসের আমেজে প্রাণের সাথে প্রাণ মিলিয়ে সেক্টর কমান্ডারের সাথে সকলেই মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন এবং জয়-বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে পুরো কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।
উল্লেখ্য, জেনারেল দত্তের এক পুত্র ও এক কন্যা বাস করেন নিউইয়র্কে। আরেক কন্যা ফ্লোরিডায় এবং চতুর্থ কন্যা থাকেন কানাডায়। এই ৪ সন্তানের বাসায় অবসর জীবন কাটাচ্ছেন সি আর দত্ত। নিউইয়র্কে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। তাই সামনের সপ্তাহে তিনি ফ্লোরিডায় যাবেন। জানুয়ারির ১ তারিখে ৯৩ বছর পূর্ণ হবে এই মুক্তিযোদ্ধার।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন