ভারতে বাবাকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ছোটবেলার এক বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় চরম বিপদে পড়লেন বাংলাদেশের যশোর জেলার শারসা এলাকার বাসিন্দা মহসীন কবির (৩৫)। রীতিমতো নাটক সাজিয়ে ওই বাংলাদেশি বন্ধুকে অপহরণ করালো পশ্চিমবঙ্গ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়ার এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়ার বাসিন্দা শিবপদ চক্রবর্তীকে আটক করেছে হাবড়া থানার পুলিশ। শিবনাথের সঙ্গে আটক করা হয় আরও পাঁচজনকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রীতিমতো ছক সাজিয়ে বাংলাদেশি বন্ধুকে অপহরণের নাটক তৈরি করে হাবড়ার বাসিন্দা শিবপদ চক্রবর্তী। স্থানীয়রা জানান, ২০০২ সালে বাংলাদেশের যশোর জেলার সারসা এলাকার বাঘচোরা গ্রাম থেকে সপরিবারে ভারতে চলে আসেন শিবপদ চক্রবর্তী। ভারতে এসে তিনি হাবড়ার উত্তর হাবড়া এলাকায় আশ্রয় নেন। কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। বাংলাদেশে থাকার সুবাদে যশোরের শারসা এলাকার বাসিন্দা মহসীন কবিরের সঙ্গে শিবপদর বন্ধুত্ব ছিলো। গত ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে ভিসা নিয়ে বন্ধু শিবপদর হাবড়ার বাড়িতে আসেন মহসীন ও তার বাবা আলহাজ জাকির হোসেন (৬৬)।
বাবাকে ভারতে হৃদরোগের চিকিৎসা করানোর জন্য তিনি বন্ধু শিবপদর বাড়িতে ওঠেন। সুযোগ বুঝে বাংলাদেশের ধনী পরিবারের ছেলে মহসীন কবির ও তার বাবার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতানোর ছক ফাঁদেন শিবপদ। সেইমতো সে তার কিছু ব্যবসায়িক বন্ধু ও কয়েকজন দুস্কৃতীর মাধ্যমে ছক সাজায়। গত ১৩ ডিসেম্বর ভোর পাঁচটা নাগাদ মহসীন কবির ও তার বাবাকে নিয়ে কলকাতায় ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হন শিবপদ। বাড়ি থেকে হাবড়া ষ্টেশনে আসার জন্য একটি ভ্যানে মহসীন ও তার বাবাকে তুলে দেন তিনি। শিবপদ তাদেরকে জানান, তিনি পরবর্তী ভ্যানে করে আসছেন। ওইদিন ভোরে ভ্যানে করে শিবপদর বাড়ি থেকে হাবড়া ষ্টেশনে আসার সময় স্থানীয় হাবড়া কামিনি কুমার গার্লস স্কুলের সামনে শিবপদর সাজানো ছক অনুযায়ী একদল দুস্কৃতী ভ্যান থেকে জোর করে মহসীন কবিরকে নামিয়ে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর শিবপদ অন্য ভ্যান ধরে ঘটনাস্থলে আসেন। তারপর মহসীনের বাবা জাকির হোসেনের মুখ থেকে সব শুনে পুরো দস্তুর নাটক করে বয়স্ক জাকির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যান হাবড়া থানায়। সেখানে গিয়ে মহসীন কবিরকে অপহরণ করার অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
অভিযোগের পর ঘটনার তদন্ত শুরু করে হাবড়া থানার পুলিশ। পুলিশ অপহরণ হওয়া বাংলাদেশি যুবক মহসীন কবিরের মোবাইল ফোনের ট্রাক লোকেশন করে জানতে পারে তাকে প্রথমে বসিরহাটের বাদুড়িয়া এবং পরে বারাসতে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা মাফিক শিবপদর মোবাইলে মহসীন কবিরের জন্য মুক্তিপণ চেয়ে ১৬ লক্ষ রুপি দাবি করে অপহরণকারীরা। এদিকে পুলিশ খোঁজ পায়, বাদুড়িয়াতে শিবপদর বেশ কয়েকজন ব্যবসায়িক বন্ধু রয়েছে। এরপরেই পুলিশের সন্দেহের তীর গিয়ে পড়ে শিবপদ চক্রবর্তীর উপর।
পুলিশ শিবপদ চক্রবর্তীকে জেরা করে জানতে পারে, তার কাছে বেনামে অল্পদিন আগে তোলা একটি মোবাইলের সিম কার্ড রয়েছে। সেই সিমকার্ড ঘেঁটে পুলিশ বেশ কয়েকটি নম্বর পায়। এরপর হাবড়া থানার পক্ষ থেকে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয় শিবপদকে। তাকে বলা হয়, ৬ লক্ষ রুপিতে সে যেন অপহরণকারীদের সঙ্গে রফা বের করে। পুলিশের পাতা এই ফাঁদে পা দিয়ে শিবপদ কিছু সময় পর জানায়, অপহরণকারীরা ৬ লক্ষ রুপিতে রাজি হয়েছে। সেইমতো বুধবার রাতে হাবড়া থানার পুলিশ কর্মকর্তা মৈনাক ব্যানার্জী সাদা পোশাকের পুলিশ নিয়ে এবং শিবপদ ও ৬ লাখ রুপি সঙ্গে নিয়ে মসলন্দপুরের বেতপুলের তেতুলিয়া ব্রিজের কাছে যায়। সেখানে গাড়িতে করে মহসীন কবিরকে অপহরণকারীরা নিয়ে এলে পুলিশ অপহরণ ঘটনার মূল চক্রী শিবপদ চক্রবর্তীসহ মোট ছয় জনকে আটক করে। এরা হলেন শিবপদ চক্রবর্তী, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, ইমরান হোসেন, শাহনুর মন্ডল ও যে গাড়িতে করে মহসীন কবিরকে অপহরণ করা হয়েছিলো সেই গাড়ির চালক সাইফুল গাজী। ধৃতদের বাড়ি হাবড়া ও বাদুড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায়। সেইসঙ্গে উদ্ধার করা হয় অপহরণ করা বাংলাদেশি যুবক মহসীন কবিরকে। এই ঘটনায় হাবড়া থানার আই সি মৈনাক ব্যানার্জী জানান, গোটা কান্ডের মাষ্টার মাইন্ড ছিলো শিবপদ চক্রবর্তী। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ