অস্ট্রেলিয়া গমন, সেখানে স্থায়ী হওয়া এবং অস্ট্রেলিয়াকেই নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করা এখন এতটাই সহজ যে, এর জন্যে আপনাকে শুধু একটি আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ এখন সারা বিশ্ব থেকেই ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা এবং তাদের অসাধারণ দক্ষতাকে নিজ দেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে, যারা আসলে অস্ট্রেলিয়ার সুযোগ সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে সেখানে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ইচ্ছা পোষণ করেন। এই লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ান সরকার ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী এবং বিনিয়োগ ভিসা চালু করেছে। ব্যবসায়িক দক্ষতা সংক্রান্ত এই অভিবাসন নীতিমালাটি মূলত অস্ট্রেলিয়ান মাইগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৮ এবং মাইগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৯৪-এর আলোকে তৈরি করা।
বর্তমানে এই রেগুলেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী চারটি প্রধান শাখার আলোকে ১৮৮ উপশ্রেণির ভিসা আবেদন করা যেতে পারে।
• ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী শাখা
• বিনিয়োগ শাখা
• উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ শাখা
• প্রিমিয়াম বিনিয়োগ শাখা
এগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক উদ্ভাবণী শাখাটিই বাংলাদশেী এবং non-citizen- দের জন্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক হতে পারে।
অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ভিসা আবেদনের ন্যূনতম শর্ত পুরণের জন্যে ‘ব্যবসায়িক উদ্ভাবণী’ শাখাটিই সর্বাধিক মানানসই। এই শাখাটির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যেসব ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে চার বছরের ব্যবসায়িক ও ব্যবস্থাপনাগত অভিজ্ঞতা প্রমাণিত হবে, তারাই সুযোগ পাবেন। ব্যবসায়িক উদ্ভাবণী শাখায় ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ অস্ট্রেলিয়ায় মানসম্পন্ন ব্যবসা স্থাপন অথবা চলমান ব্যবসা ক্রয় করার সুবিধা পাবেন।
আবেদন করার শর্তাবলী:
নিজ দেশে যাদের চলমান ব্যবসা রয়েছে, যার বার্ষিক Turnover ন্যুনতম পাঁচ লক্ষ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (আনুমানিক তিন কোটি টাকা ) এবং যাদের সাকুল্য সম্পদের পরিমাণ (ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক এবং স্বামী বা স্ত্রীর সম্পদসহ) আট লক্ষ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (আনুমানকি পাঁচ কোটি টাকা ) তারা এই শাখায় ভিসা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। এই সম্পদের পরিমাণ পূর্ববর্তী চার অর্থ বছরের মধ্যে যে কোনো দুই বছর স্থিতিশীল থাকা প্রয়োজন। সংবিধিবদ্ধ নীতিমালা আইএমএমআই ১২/০৪১ অনুযায়ী সন্তোষজনক যোগ্যতার পয়েন্ট হচ্ছে ৬৫। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বা শিক্ষাগত যোগ্যতা এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়।
আবেদন করার পদ্ধতির সার সংক্ষেপ নিম্নরূপ:
• ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত হওয়ার জন্যে এবং আবেদন জমা দেওয়ার আমন্ত্রণ পাওয়ার জন্যে আবেদনকারীকে অবশ্যই যথাযথ দক্ষতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার আলোকে তার আগ্রহ ব্যক্ত করতে হবে।
• আবেদনকারীকে কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক উভয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনয়নের জন্যে তিনি আসলে কেন্দ্রীয় না-কি প্রান্তিক অঞ্চলে বসবাস ও ব্যবসা করতে আগ্রহী বিষয়টির উল্লেখ সহ আবেদন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ মিলে সিদ্ধান্ত নিবেন যে তাকে কোথায় মনোনয়ন প্রদান করা যায়।
• অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আবেদনকারী অভিবাসনের জন্যে আবেদন করবেন কি-না তা নির্ধারণ করবেন। আবেদনের জন্যে আমন্ত্রণ পেলে আবেদনপত্রে উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই ভিসার জন্যে আবেদন করতে হবে।
• আবেদনপত্র গৃহীত হলে আবেদনকার কে অস্ট্রেলিয়া গমনের জন্যে একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এই ভিসাটি হবে প্রাথমিকভাবে চার বছরের জন্যে হবে এবং যে কোন প্রবেশ পথে তিনি অস্ট্রেলিয়া যেতে পারবেন। এই ভিসার মেয়াদ পরবর্তীকালে ব্যবসায়িক উদ্ভাবণী শাখা কর্তৃক বর্ধিত হতে পাওে এবং শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পরবর্তীতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে ।
এই শ্রেণির ভিসার আওতায় অস্ট্রেলিয়াতে পূর্ণকালীন কাজ করা যাবে এবং পরিবারের সদস্যরাও অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন পড়াশোনার সুযোগ পাবে। ভিসার প্রাথমিক মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন এবং আঞ্চলিক বা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যথেষ্ঠ পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন। এ পর্যায়টি সন্তোষজনক হলে তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর পরিবারের সদস্যরাও দ্বিতীয় পর্যায়ে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। ব্যবসায়িক ব্যস্তার কারণে যাদেও পক্ষে নিজ দেশ ত্যাগ করা সবসময় সম্ভব হয় না, তাদের জন্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। এই শ্রেণির ভিসাটি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার সবরকম শর্তই পূর্ণ করে।
অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কিত কিছু বিষয়:
অস্ট্রেলিয়া ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে চতুর্থ অবস্থান অর্জন করে। দেশটির বিচার ব্যবস্থার মান সূচকের দিক থেকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ। চুক্তি অগ্রায়ণ এবং ঋণ প্রাপ্তির সূচকেও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ঈর্ষনীয় (১৮৯ টি দেশের মধ্যে যথাক্রমে ৪র্থ এবং ৫ম)। ব্যাংকিং, আইনগত অধিকার এবং কর্পোরেট চুক্তির ক্ষেত্রেও দেশটি সূচক উচ্চ। তা ছাড়াও বিশ্বের সর্বাধিক দক্ষ স্টক এক্সচেঞ্জ, পুরোমাত্রায় শক্তিশালী অর্থনীতি, ব্যাংকিং রেগুলেশন এবং এন্টি ট্রাস্ট ল-এর ক্ষেত্রেও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান গৌরবজনক।
অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি গত পঁচিশ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধির ধারায় অগ্রগামী এবং আগামী দিনের বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও কৃষি বাণিজ্য, শিক্ষা, পর্যটন, খনিজ আহরণ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা-এই পাঁচটি দিকে শীর্ষস্থানীয় অবদান রেখে চলেছে।
যে সব ব্যবসায়ী অস্ট্রেলিয়ায় উপরোক্ত র্শতসমূহ পূরণরে মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বসবাসরে জন্য আগ্রহী, তারা নিজের অথবা অস্ট্রেলীয় সরকার র্কতৃক নিবন্ধভুক্ত অভিবাসন প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
অস্ট্রেলীয় আইন অনুযায়ী, শুধুমাত্র নিবন্ধভুক্ত অভিবাসন প্রতিনিধিরাই এই বিষয়ে আইনগত পরার্মশ দিতে পারেন।
বিস্তারিত তথ্যরে জন্য http://eduaid.net/business/ এই লিঙ্কটিতে প্রবেশ করে ফর্মপূরণ করলে অস্ট্রেলিয়ান সরকার কর্তৃক নিবন্ধভুক্ত অভিবাসন প্রতিনিধি প্রাথমিক আলোচনার জন্য সরাসরি যোগাযোগ করবেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ নভেম্বর, ২০১৬/ জনি/ আফরোজ-০৯