বিজয় দিবস উপলক্ষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৪ শিল্পীর মুক্তিযুদ্ধকালীন সঙ্গীতানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের নতুন স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদানের পর ৪ শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, মঞ্জুর আহমেদ, কাদেরি কিবরিয়া এবং শহীদ হাসান, অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আরেক কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দির সাথে ফটো সেশনে মিলিত হন। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এমন বিশেষ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন রিয়্যাল এস্টেট ইনভেস্টর এবং বাংলাদেশী সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্টপোষক মো. আনোয়ার হোসেন। তিনিও ছিলেন ফটো সেশনে। সাথে যোগ দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান। এরপর শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করতে থাকেন।
অনুষ্ঠানে মাঝপথে আসেন বিএনপি নেতা ও ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। আয়োজকরা খোকাকে সামনের লাইনে বসা রাষ্ট্রদূত মোমেনের পাশের খালি চেয়ারের দিকে আনছেন দেখেই মুহূর্তের মধ্যে সে স্থান ত্যাগ করলেন রাষ্ট্রদূত মোমেন। তাকে অনুসরণ করলেন কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান এবং তাদের পত্নি ও সন্তানেরাও।
এরপর বিএনপি নেতা খোকা রাষ্ট্রদূতের পাশের চেয়ারে বসেন, যেটি আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের জন্য। ড. সিদ্দিক তখনও আসেনি। কয়েক মিনিট পর ড. সিদ্দিক এসে সস্ত্রীক বসেন একটু দূরে অতিথিদের জন্যে সংরক্ষিত আসনে। খোকা ৪ শিল্পীর পুরো সঙ্গীতানুষ্ঠান উপভোগ করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া গানে ডুবে ছিলেন খোকা। তার সাথে এসেছিলেন ‘একাত্তরের ঘাতকেরা কে কোথায়’ গ্রন্থের প্রকাশনা-সম্পাদক মুসা আহমেদ।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে চিকিৎসারত খোকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণী বই লিখছেন। এ অনুষ্ঠানে আসার অন্যতম কারণ ছিল সেটি। অনুষ্ঠানের আয়োজক আনোয়ার হোসেন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ঢাকার মেয়র থাকাকালে তার আমলেই ৬টি সড়কের নামকরণ হয়েছে ৬ সেক্টর কমান্ডারের স্মরণে। তাছাড়া খোকা হচ্ছেন গেরিলা যোদ্ধা। তাকে আমন্ত্রণ জানালে দোষের কিছু থাকবে বলে বিন্দুমাত্র ভাবেননি বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমি কোন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নই। মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় দিবসের চেতনা থেকে এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’ যদিও প্রথম সারিতে সংরক্ষিত কোন চেয়ার ছিল না তার জন্য। ১৩ ডিসেম্বর রাতে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স প্যালেসে বিশেষ ব্যতিক্রমী এ সঙ্গীতানুষ্ঠানে কমিউনিটির বিপুলসংখ্যক সুধীজনের সমাগম ঘটেছিল।
বিএনপি নেতা খোকার আগমণের সাথে সাথে রাষ্ট্রদূতের প্রস্থান করার ব্যাপারটি সচেতন সকল প্রবাসীর দৃষ্টিগোচর হয়। এ নিয়ে কথা বলতে মঞ্চে উঠেছিলেন আরেক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এ বি এম ওসমান গনি। কিন্তু দর্শকদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তা বলতে সক্ষম হননি। তবে, পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে অনুষ্ঠানের হোস্ট মাইকে গিয়ে দু:খ প্রকাশ করে বলেন যে, কমিউনিটির বিশিষ্ট কয়েকজনের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু সে সব আর হবে না। এরপর কণ্ঠযোদ্ধারাই একাত্তরের স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীতে সকলকে মাতিয়ে রাখেন।
বিডি-প্রতিদিন/১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব