কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির ৪ দিন পর বুধবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ৭ কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়েই তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এতে অবশ্য বহিষ্কার হওয়া সেক্রেটারি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ ছিলেন না। সাজ্জাদ গত ৬ ও ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা আহবান এবং সে সভা থেকে সংগঠনের সভাপতিসহ কয়েক কর্মকর্তাকে বহিষ্কার এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ মিডিয়ায় প্রকাশের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানসহ ৭ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে ‘কেন সংগঠন থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হবে না সে মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।
৭ দিনের মধ্যে জনসমক্ষে এই নোটিশের জবাব প্রদানের দাবি করা হয়। একই নোটিশের বিবরণী ১৫ ডিসেম্বর আবারো ই-মেইলে সকলের কাছে প্রেরণ করা হয়। নোটিশ প্রদান করা হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আইরিন পারভিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান এবং আবুল হাসিব মামুন, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম এবং উপ-প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি। জবাব প্রদানের এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না আইরিন পারভিন। হাজী এনাম বিশেষ একটি কাজে ব্যস্ত থাকায় টেলিফোনে তার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের সাথে।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী। এ সময় তিনি জানান, সেক্রেটারি সাজ্জাদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে ভিন্ন একটি কারণে। সাজ্জাদের ছেলে লুৎফর রহমান সুইট ‘নবীন লীগ’ নামক একটি সংগঠন ঘোষণা করেন এবং সেটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ছিল। সদর দফতর করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসের ঠিকানায়। এ সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ যায় শেখ হাসিনা এবং জয়ের কানে। যদিও এ সংগঠনের ব্যাপারে জয়ের কোনই ধারণা ছিল না। এমনকি তাকে না জানিয়ে কিংবা বিনা অনুমতিতেই তার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্যেই সাজ্জাদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কার্যকরী কমিটির সভায় আমরা উপস্থিত ছিলাম। সেক্রেটারির নোটিশ পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। সে সভায় সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া দূরের কথা, এ ব্যাপারে কোন আলোচনাও হয়নি।’
লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘সভাপতির অনুমতিক্রমেই আহবান করেছেন বলে সেক্রেটারি সাজ্জাদ আমাদেরকে ২/৩ সপ্তাহ আগেই অবহিত করেছেন। এমনকি ৬ ডিসেম্বর সভা শুরুর ১৪ ঘণ্টা আগেও সেক্রেটারি সাজ্জাদ আমাদেরকে নিশ্চিত করেন যে, সভাপতির সাথে তার কথা হয়েছে।’ ওই সভা আয়োজনের সাথে আমাদের জড়িত থাকার যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলেও দাবি করা হয় লিখিত বক্তব্যে।
উল্লেখ করা হয়, ‘বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের যে সংবাদ পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, এর সাথে আমাদের এই ৮ জনের কোন প্রকার যোগসূত্র বা সম্পর্ক নেই। আমাদের স্বাক্ষরিত কোন প্রেস বিজ্ঞপ্তি বা সভাপতির বহিষ্কার সম্পর্কিত কোন প্রকার সংবাদ প্রচার অথবা প্রকাশ হয়নি।’
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৮ ডিসেম্বর যে সভার কথা কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি সঠিক নয়। ৮ ডিসেম্বর আমরা ৮ জন কোন সভা করিনি অথবা এ ধরনের কোন সভা সম্পর্কে অবহিত নই। সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে একটি সভা করেছেন, সেটির আমন্ত্রণ টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে সেক্রেটারি সাজ্জাদ পেয়েছেন বলে ইতিপূর্বে আমাদের অবহিত করেছিলেন। সভাপতির ডাকা ওই সভায় যোগ দেয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মীসহ সেক্রেটারি সাজ্জাদ সেখানে যান। কিন্তু সিকিউরিটি গার্ড কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসেন।’
‘আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ ও ২১৪১ এর একনিষ্ট কর্মী। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে চলমান ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশীদার। রাজনৈতিক জীবনে চলার পথে আমরা কোন ভুল করিনি অথবা আরো ভুল ভবিষ্যতে করবো না-তা হলফ করে বলতে পারবো না। অনেক সাময়িক ভুল বুঝাবুঝি আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। সেটাই হবে আজকের দিনে আমাদের প্রত্যাশা।’
সংবাদ সম্মেলনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে নিজাম চৌধুরী ঘোষণা করেন, ‘সভাপতিকে বহিষ্কারের কোন এখতিয়ার কার্যকরী কমিটির কিংবা আমাদের নেই। আমরা সে ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা কল্পনাও করতে পারি না। তাই ভবিষ্যতে আমরা বর্তমান সভাপতি ড. সিদ্দিকের নেতৃত্বে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে আরো বেগবান ও শক্তিশালী করার সংকল্প ব্যক্ত করছি।’
সভাপতি এবং তার স্ত্রীসহ ৪ কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি সেক্রেটারি সাজ্জাদ বিতরণ করেছিলেন সে ব্যাপারে এই ৭ জন কিছুই জানেন না বলেও উল্লেখ করা হয়। শুধু তাই নয়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের মত কোন কাজেই তারা কখনো জড়িত ছিলেন না বলেও দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী ওলেমা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতে সকলকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা এবং বিজয়ের চেতনায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি দিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান কার্যক্রমের সমর্থনে আন্তর্জাতিক জনমত জোরদারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কথা ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দ।
বিডি-প্রতিদিন/১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব