সাংগঠনিক অনিয়মের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার স্ত্রী, একজন সহ-সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদককে ৬ ডিসেম্বর সংগঠনের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
৭২ সদস্যের কমিটির ৪৮ জনের উপস্থিতিতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং তার স্ত্রী নির্বাহী সদস্য শাহানা রহমান, সহ-সভাপতি আবুল কাশেম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুককে বহিষ্কার করা হয়। একই অভিযোগে কেন বহিষ্কার করা হবে না, সাত দিনের মধ্যে তা ব্যাখ্যা করার জন্য নোটিস দেওয়া হয় সহ-সভাপতি সৈয়দ বসারত আলী, যুগ্ম-সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ এবং দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে।
এ বৈঠকের বিরুদ্ধে ৮ ডিসেম্বর কার্যকরী কমিটির পাল্টা জরুরি বৈঠক ডাকেন সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদসহ ৩৯ সদস্য-কর্মকর্তাকে। নিরাপত্তা বেষ্টিত মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক থেকেও পাল্টা বহিষ্কার এবং কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ড. সিদ্দিকের ডাকা (৮ ডিসেম্বর) বৈঠকে নিজেদের পছন্দের সদস্য-কর্মকর্তা ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ বৈঠক হয় জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে। এ নিয়ে মারদাঙ্গা পরিস্থিতির উদ্ভব হলে জুইশ সেন্টারে পুলিশ ডাকা হয়। এ অবস্থায় মিলনায়তনের বাইরে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংগঠনের সভাপতির স্বৈরাচারী ও অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।
এ সময় সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ অভিযোগ করেন, কার্যকরী কমিটির সদস্য-কর্মকর্তাদের বেছে বেছে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ড. সিদ্দিকুর রহমানের অনিয়মের সহযোগীরাই ঢুকছেন। এমন কিছু লোক ঢুকানো হয়েছে যারা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য নন। অর্থাৎ ভাড়াটে লোক এনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সাজ্জাদ। তিনি বলেন, সভাপতির এমন আচরণের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। সাধারণ কর্মীরা নিশ্চয়ই এর জবাব চাইবেন। তবে কার্যকরী কমিটির সভায় যারা ঢুকতে পারেননি তারা জ্যাকসন হাইটসে বিক্ষোভ করেছেন।
জানা যায়, ড. সিদ্দিকের ডাকা পাল্টা এ সভা হওয়ার কথা জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে ৮ ডিসেম্বর। কিন্তু আকস্মিকভাবে সে স্থান পরিবর্তন করে জুইশ সেন্টারে নেওয়া হয়েছিল। সেখানেও সন্ধ্যা ৭টার পর আর কেউই থাকতে পারেননি বিশৃঙ্খলার কারণে। পুলিশ এসে সবাইকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এবার বহিষ্কার করার আগে সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদকে আরও দু'বার সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তৃতীয় দফায় মুচলেকা দিয়ে দলে ফিরেছেন। জানা যায়, তবুও তিনি অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। দলের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছেন। এখানেই শেষ নয়, তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ভোট ডাকাতির অভিযোগ করে সিলেটে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।
গত ৬ ডিসেম্বর কার্যকরী কমিটির সভায় উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদষ্টো সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ভাঙিয়ে ড. সিদ্দিকুর রহমান গত তিন বছরে লাগাতারভাবে অসাংগঠনিক কাজ করেছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তার স্ত্রী শাহানা রহমান বহুবার সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করেছেন বলেও কার্যকরী কমিটির সভায় জানানো হয়। আঞ্চলিক একটি বৈঠকে একান্ত আলাপ-চারিতায় মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্যগুলো ভিডিও করে তা নিউইয়র্কের চিহ্নিত জামায়াতি সাংবাদিকের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচার করেন এই শাহানা রহমান। যা আওয়ামী লীগকে জনসমক্ষে বিব্রত করে।
ড. সিদ্দিক এবং সাজ্জাদের নেতৃত্বাধীন কমিটির মাধ্যমে নিউইয়র্কে গত চার বছরে চারটি সমাবেশ হয়। এ সমাবেশগুলোতে উপস্থিত ছিলেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ খাতে কত ডলার আয় এবং ব্যয় হয়েছে সে ব্যাপারেও কথা বলেন উপস্থিত কর্মকর্তারা। চার লাখ ডলারের মতো তহবিল গঠিত হয়েছিল বলে সভায় জানানো হয়। কিন্তু কীভাবে তা ব্যয় হয়েছে সে হিসাব এখন পর্যন্ত সভাপতির কাছে থেকে পাওয়া যায়নি বলে অনেকে অভিযোগ করেন।
বিডি-প্রতিদিন/১০ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব