বুকিট বিনতাং-এর অলিতে গলিতে হেঁটে যাওয়ার সময় শোনা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা। কখনও নোয়াখালী, কখনও বরিশালের, কখনও বা উত্তর বঙ্গের কোনো অঞ্চলের। এ যেন বাঙালি প্রবাসীদের ছোটখাটো এক মিলন মেলা। এদের বেশিরভাগই কর্মজীবী নয়তো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শুধু বাঙালীই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের পদচারণায়ও মুখরিত থাকে বুকিট বিনতাং। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এলাকাটিকে দূর পরবাসের কোনো জায়গা বলে মনেই হয় না। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও মনে হয় এটি ঢাকার বেইলী রোড কিংবা গুলশানের কোনো এলাকা। পর্যটক হিসেবে যারাই কুয়ালালামপুরে আসেন তাদের প্রথম পছন্দ থাকে এই বুকিট বিনতাং। এ যেন কুয়ালালামপুরের প্রাণ ভোমরা। আর বর্তমানে বড়দিনকে সামনে রেখে সাজানো হচ্ছে এলাকাটিকে।
কুয়ালালামপুরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার পর্যটকদের কাছে প্রথম পছন্দ থাকে বুকিট বিনতাং। বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সিযোগে ভাড়া লাগে ৮০ থেকে ১০০ রিংগিত। এছাড়া বাসে আসতে চাইলে ১০ রিংগিত। এখানে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু হোটেল ও মোটেল। বলা যেতে পারে কুয়ালালামপুরের অন্যতম ট্যুরিস্ট এরিয়া হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বুকিট বিনতাংয়ের। সন্ধ্যার পর এখানে বাঙালিদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়।
কথা হলো নোয়াখালীর সোহাগের সঙ্গে। তিনি জানালেন, যে কোনো ছুটি বা উৎসবে এ অঞ্চলে বাঙালিদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এখানে সবাই ছুটে আসেন দেশের মানুষের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কিছু কথা ভাগাভাগি করে নিতে। একই কথা জানালেন বরিশালের জীবন এবং জামান। মোবাইল সিম বিক্রেতা চাদপুরের জাফর জানালেন, বুকিট বিনতাং-এ বাঙালিদের সরব উপস্থিতির কথা।
মালয়েশিয়ার দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই বললেই চলে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে সাজানো হয়েছে গোটা দেশ। আর রাজধানী হওয়ায় কুয়ালালামপুর যেন একটি বেশি ছোঁয়া পেয়েছে। এ ছাড়া এখানকার আবহাওয়াও পর্যটনবান্ধব। এটাও ঠিক যে, সপ্তাহে বেশীরভাগ দিনই কমবেশি বৃষ্টির ছোঁয়া লাগে এখানে। এরই মাঝে পর্যটকরা ছুটে বেড়ান পেট্টনাস টুইন টাওয়ার, সুলতানস প্যালেস, কোকো মিউজিয়াম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্ক, বাতু গুহা, জু-নিগাড়া, চায়না টাউন, শ্রী মাহা মারিয়াম্মান মন্দির ইত্যাদি। কুয়ালালামপুর আসলে টুইন টাওয়ার না দেখলে সফরটাই যেন বৃথা মনে হয় পর্যটকদের। সন্ধ্যার পর এই বিশাল বিল্ডিংয়ের অবয়ব আরও বেশি আকর্ষণীয়। কারণ এ সময় যোগ হয় আলোকসজ্জা।
পর্যটকদের বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় জায়গা হল বাতুগুহা। প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু সিঁড়ি পেয়ে গুহায় প্রবেশ করতে হয়।
আর চায়না টাউনের কথা না বললেই নয়। এখানকার সবচে' কম মূল্যে পণ্য কেনার মার্কেট এটি। বিদেশিরাই মূলত এখানকার ক্রেতা। সিঙ্গাপুরের চায়না টাউন ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। শহরের বাইরে আছে পূত্রাজায়া, গ্যানতিং হাইল্যান্ড। আরও দূরে আছে লাংকাউই, পেনাং, যহরবারু। এগুলো মালয়েশিয়াতে ভ্রমণের জন্য অন্যতম স্থান। সবচেয়ে বড় কথা পর্যটন শিল্পকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে একটি দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে তা মালয়েশিয়াকে দেখলেই বোঝা যায়।
অন্যদিকে চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হয় এমন অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া একটি। এ কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দেশটির প্রচলিত আইনে যথেষ্টই সুরক্ষা পান। চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও উদ্বেগ নেই। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মত উন্নত দেশগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা চিকিৎসকগণ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা দেন। এছাড়া চমৎকার স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া দেশটিকে দিয়েছে হেলথ ট্যুরিজমের আবহ।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা