হয়রানির শিকার মানুষদের পক্ষে আইনগত সহায়তাকারী হিসেবে খ্যাতি অর্জনকারী বাংলাদেশী আমেরিকান এটর্নী সমতলী হক (৪২) নিজেই নিউইয়র্ক পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করলেন।
অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার এবং লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত ম্যানহাটান ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত এ মামলায় তাকে অহেতুক দৈহিক, মানসিকভাবে নির্যাতন এবং নিদারুণ কষ্ট প্রদানের জন্যে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, পুলিশের এহেন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে সমতলী হককে জনসমক্ষে বিব্রত হতে হয়েছে এবং এখনও তাকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থার আইনজীবী হিসেবে কাজের পর সর্বশেষ তিনি নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক এডভোকেট জেমস লেটিসিয়ার প্রধান আইনজীবী (A former top lawyer for Public Advocate Letitia James) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর শ্রমিকদের অবস্থার ওপর প্রকৃত একটি চিত্র উপস্থাপনের ফেলোশিপ পান। ৯ মাসের এ ফেলোশিপে অংশ নিতে ১৮ জুলাই পাবলিক এডভোকেটের অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন। বাংলাদেশে রওয়ানা দেয়ার আগের দিন অর্থাৎ ১৯ জুলাই তিনি নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কোয়ারে এক সমাবেশে অংশ নেন।
গাজায় ইসরায়েলিদের হামলার প্রতিবাদে ঐ সমাবেশে যোগদানকালেই তার সাথে থাকা ১০ ও ৬ বছর বয়েসী দুই সন্তান এবং স্বামী টয়লেটে নিকটস্থ 'রুবি টুইসডে' রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেন। সমতলী হক দাঁড়িয়েছিলেন ঐ রেস্টুরেন্টের সামনে। সেটি পথচারিদের চলাচলের জায়গা। এ সময় পুলিশ তাকে ঐ স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এটর্নী সমতলী উত্তরে কর্তব্যরত পুলিশকে জানান যে, তিনি তো পথচারির চলার পথ আগলে রাখেননি। যথেষ্ঠ জায়গা খালি রয়েছে লোকজনের চলার জন্যে। কিন্তু পুলিশ অফিসার তার কথায় কর্ণপাত করেননি।
পুলিশ অফিসারের ধারণা হয়েছিল যে, সমতলী হক ঐ বিক্ষোভের একজন হিসেবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লোকজনের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন। সে সময় এটর্নী সমতলী পুলিশকে অবহিত করেন যে, তিনি তার দুই শিশু সন্তান এবং স্বামীর অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলেই তিনি ঐ স্থান ত্যাগ করবেন। এ জবাবে সন্তুষ্ট না হলে পুলিশ অফিসার সমতলী হককে গ্রেফতারে উদ্যত হন এবং তাকে মুখ ঘুরিয়ে রেস্টুরেন্টের দেয়ালের দিকে তাকাতে বলেন। ঐ সময়েই তাকে হাতকড়ি পরানো হয় এবং নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে নেয়া হয়। সে সময় পুলিশ অফিসার তার পরিচয়পত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে, তার নামের শেষে স্বামীর নাম যুক্ত নেই। এতে আরো ক্ষেপে যান পুলিশ অফিসার। রাগত: স্বরে বলেন যে, আমেরিকার স্ত্রীরা নামের শেষে স্বামীর শেষ নাম ব্যবহার করেন। এ সময় এটর্নী সমতলী কিছু বলতে চাইলে তাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলা হয়।
মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়েছে যে, গ্রেফতারের সময় তার হাতে ব্যাথা দেয়া হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।
এটর্নী সমতলী হককে টানা ৯ ঘন্টা পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখা হয়। এরপর কোর্টে প্রেরণ করার পর মাননীয় আদালত তাকে মুক্তি প্রদান করেন। তবে মুচলেকা দিতে হয় যে, ৬ মাসের মধ্যে তিনি যদি অন্য কোন অভিযোগে গ্রেফতার হন তাহলে এ অভিযোগটি গুরুতর হিসেবে বিবেচিত হবে।
এটর্নী সমতলী হক এরপর বাংলাদেশে চলে গেছেন। তবে তিনি নিয়োগ করেন একজন আইনজীবী। তার নাম এটর্নী রেবেকা হেইনেজ ( Rebecca Heinegg)| এই এটর্নী দায়ের করেছেন মামলাটি। মামলায় নিউইয়র্ক পুলিশের বিরুদ্ধে হরদম বেআইনী আচরনের তথ্য উল্ল্যেখ করে বলা হয়েছে যে, এটর্নী সমতলী হক বাংলাদেশী ইমিগেরান্ট এবং তিনি ঐসময় মুসলিম পোশাক পরেছিলেন। সেটি তার জন্যে কাল হয়ে দেখা দেয়। এভাবেই নিউইয়র্ক সিটিতে ধর্ম-বর্ণ এবং জাতীয়তার কারণে নীরিহ মানুষেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়েছে যে, নিউইয়র্ক পুলিশ প্রতিনিয়ত মানুষের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লংঘনের মত আচরণ করে চলেছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ মিথ্যার আশ্রয়ও নিচ্ছে।