শিল্পের ইতিহাসের ভয়াবহতম এক ট্রাজেডি সাভারে রানা প্লাজা ধস। অসংখ্য শ্রমিক পরিবার আজও বয়ে বেড়াচ্ছে সেই অভিশাপের চিহ্ন। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। অনেকে হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে। কেউ হারিয়েছেন সন্তানকে, কেউ বোনকে, কেউবা স্বামী বা স্ত্রীকে। ক্ষতিগ্রস্থরা সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু কিছু অর্থ সহায়তা পেলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সাহায্যে এ পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রাইমার্ক সহ জার্মানি, সুইস, নেদারল্যান্ডস, আমেরিকার ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমান ফান্ড ঘোষণা করেছে, তথাপি তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে খোদ আইএলও সেক্রেটারি গার্ডিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেছেন। ব্র্যান্ড রিটেইলরদের উদ্যোগে ৪০ মিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ড গঠনের কথা বলা হলেও সেই টার্গেট পূরণে অগ্রগতি খুবই সামান্য বলে আইএলও গত সপ্তাহে জানিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সাহায্যে ব্রিটেন ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা “রানা প্লাজা ভিক্টিম সাপোর্ট গ্রুপ” নামের একটি সংগঠন বিশ্বব্যাপী প্রচারণা ও স্বাক্ষর অভিযানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।
রানা প্লাজা ভিক্টিম সাপোর্ট গ্রুপ এর অন্যতম এক উদ্যোক্তা ও কো-অর্ডিনেটর বাংলাদেশী আরশ আলী রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর থেকেই এ ব্যাপারে বৃটেনের পার্লামেন্ট মেম্বারসহ ঊর্ধ্বতন গ্রুপের বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আরশ আলীর এই উদ্যোগের সাথে এগিয়ে আসেন বৃটিশ নাগরিক ও চ্যারিটি ক্যাম্পেইন'র জনা ফস্টার। তাদের ডাকে এগিয়ে আসে বৃটেনের গ্লোস্টারের নিউজ গ্রুপ গ্লোস্টার একো। এই সাপোর্ট গ্রুপের উপর গ্লোস্টারের এক সাড়া জাগানো প্রতিবেদন প্রকাশের পর বৃটিশ নাগরিক ও পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যেও এর গুরুত্ব বেড়ে যায়।
জনা ফস্টারের সূত্রে জানা গেছে, তাদের লক্ষ্য অনলাইন প্রচারণার মাধ্যমে এক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ক্যাম্পেইন শুরু করা, যা আগামী ২৪ এপ্রিল ব্রিটেন থেকে শুরুর টার্গেট নিয়ে তারা কাজ করছেন।
আরশ আলী জানান, তিনটি লক্ষ্য সামনে রেখে তারা ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন, আর তা হলো- ০১) অ্যাক্ট অব গড এবং কর্পোরেট ম্যানস্লটার অ্যাক্টের আধুনিকায়ন ও পরিবর্তন, ০২) শ্রমিকদের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, ০৩) ওয়ান স্টপ ভিক্টিম সাপোর্ট সার্ভিস স্থাপন। এই লক্ষ্যগুলো সামনে রেখে তারা স্বাক্ষর সংগ্রহের ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছেন। এই গ্রুপের মতে রানা প্লাজাসহ গার্মেন্টস কারখানায় একের পর দুর্ঘটনা ও শ্রমিকদের অমানবিকভাবে নিহত হওয়া এটা কেবল দুর্ঘটনা নয়, এই সব নিরাপত্তার মতো ঝুঁকি হ্রাসে সরকারের উদ্যোগও খুব একটা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের নেই। সেদিক থেকে সরকারও মানব সৃষ্ট এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারেন না।
ভিক্টিম সাপোর্ট গ্রুপ ইউকের সূত্রে জানা গেছে তাদের এই ক্যাম্পেইনে বৃটেনের পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন এমপি সহ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রায় ত্রিশ জন এমপির সহযোগিতার আশ্বাস রয়েছে। তারা এই ক্যাম্পেইনের হয়ে স্ব স্ব দেশের পার্লামেন্টে মোশন ও বিল উত্থাপন করবেন। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতরের ডিরেক্টর, সাবেক হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য রোশনারা আলী এমপি, টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমানকেও এই ক্যাম্পেইন টিমে সরাসরি যুক্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
আরশ আলী, জনা ফষ্টার সহ ভিক্টিম সাপোর্ট গ্রুপ ইউকের সদস্যরা ব্রিটেন প্রবাসী জনগণকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।