মেট্রোরেলের রাস্তা হচ্ছে ৫১ কিলোমিটার। ৫১ কিলোমিটার শেষ করার সময় এ সরকারের কাছে নাই তাই তাড়াহুড়া করে ১০ থেকে ১১ কিলোমিটার মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন-এর আয়োজনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় দুদু বলেন, এই সরকার বুঝতে পেরেছে যে তাদের হাতে আর সময় বেশি নাই তাই দ্রুত মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হয়েছে। যে মেট্রোরেলের রাস্তা হচ্ছে ৫১ কিলোমিটার। ৫১ কিলোমিটার এর কাজ শেষ করার পর উদ্বোধন করার কথা স্বাভাবিক। কিন্তু ১০ থেকে ১১ কিলোমিটার হওয়ার পরে উদ্বোধন করা হয়েছে। তাহলে কি আমরা বুঝে নেব ৫১ কিলোমিটার এর কাজ শেষ করার সময় এই সরকারের নাই। এইজন্য কি তাড়াহুড়া করে মেট্রোরেল উদ্বোধন করছেন?
সরকার প্রধানের উদ্দেশে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আমরা ১০ তারিখে ১০ দফা উত্থাপন করেছি। সেই দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭টি পয়েন্টের কথা বলেছি সেগুলো বাস্তবায়ন করব। আমরা ২৪ তারিখে প্রোগ্রাম করতে চেয়েছিলাম আপনাদের অনুরোধে ৩০ তারিখ করেছি। এরইমধ্যে আপনারা নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে একজন মারা গেছে। এইভাবে আপনি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এটা মুক্তিযুদ্ধের জাতি।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী খুব শক্তিশালী ছিল তারা কিন্তু টিকতে পারে নাই। জনগণের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন বিদ্রোহ করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। একাত্তরের দিকে তাকালে পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। যত অন্যায়কারী জুলুমবাজ গত দুইশ বছরে বাঙালিদের উত্ত্যক্ত করেছে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। এখনো সময় আছে গণতন্ত্র ফেরত দেন, পদত্যাগ করুন তা না হলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনাকে বিদায় করা হবে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, পাকিস্তান আমলে যখনই গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে তখনই অত্যাচার করেছে তারা। শেখ সাহেব ৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করার পরে তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। যার কারণে পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে গেছে। এটা বাঙালিদের দোষ না। এটা পাকিস্তানিদের দোষ। এখনো যদি গণতন্ত্র ফেরত দেওয়া না হয়। স্বাধীনতা ফেরত দেওয়া না হয়। আন্দোলনের গর্জনে আপনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।
কৃষক দলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, আর ৩-৪ দিন পরে নতুন বছর আসছে আমি নিশ্চিত নতুন বছর হবে নতুন সরকারের বিজয় বার্তা।
তিনি বলেন, এই সরকারের ভাত দেওয়ার ক্ষমতা নাই, চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নাই, কিল দেওয়ার গোসাই। এই সরকারের লোকজন সব ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা বানিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ এ সরকারের বিপক্ষে। আমেরিকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের বিপক্ষে। কোন দেশের রাষ্ট্রদূত কারো বাড়িতে গেলে অপমান অপদস্থ হতে হয়। এ কেমন দেশে বাস করছি আমরা।
সরকারের উদ্দেশে দুদু বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন, তারেক রহমানকে দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ রাজবন্দীদের মুক্তি দেন। যদি মুক্তি না দেন তাহলে আমরা জেল গেট ভেঙে বের করে নিয়ে আসব। যেভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের জেলখানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলাম সেইভাবে রাজবন্দীদের বের করে নিয়ে আনবো।
নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের আগে পরে প্রায় ৪৫০ নেতাকর্মীকে আটক রেখেছে। আমরা তাদের মুক্তি দাবি করছি। সারাদেশের প্রায় ১ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফর জামান বাবরসহ যাদেরকে মিথ্যা মামলার নামে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে আমরা এইসব ফরমায়েসি রায় প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।
সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তামান্না, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি আসাদুর রহমান খান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত