কলম্বিয়ার উপকূলের কাছে ক্যারিবিয়ান সাগরের তলায় ‘লুকিয়ে’ বিপুল স্বর্ণ, রূপা আর পান্না! এমনটাই জানিয়েছে কলম্বিয়া। সমুদ্রের তলা থেকে সেই গুপ্তধন উদ্ধার করে আনতে ইতোমধ্যেই তৎপর হয়েছে সে দেশের সরকার।
শুধু তাই নয়, সমুদ্রের তলা থেকে স্বর্ণ-রূপা উদ্ধার করে আনার প্রচেষ্টাকে ‘জাতীয় অভিযান’ বলেও ঘোষণা করা হয়েছে কলম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকে।
কলম্বিয়া সরকারের দাবি, যে সম্পদ খোঁজার চেষ্টা চলছে, সেখানে সব মিলিয়ে ২০০ টন অর্থাৎ, প্রায় দু’লাখ কিলোগ্রাম স্বর্ণ, রূপা ও পান্না থাকতে পারে।
কলম্বিয়া সরকার মনে করছে, একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে সমুদ্রের নীচে সমাধিস্থ রয়েছে ওই বিপুল ধনরত্ন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাহাজে থাকা গুপ্তধনের বর্তমান মূল্য প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কিন্তু কলম্বিয়া সরকার যে গুপ্তধন উদ্ধারের কথা বলছে, তা ক্যারিবিয়ান সাগরের তলায় কোথা থেকে এল? কোন বিশ্বাসে সমুদ্রের তলায় পাড়ি দিচ্ছেন ডুবুরিরা?
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেইল’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭০৮ সালে স্পেনের একটি জাহাজ কলম্বিয়ার বন্দর কার্টেজেনার কাছে ডুবে যায়। ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় জাহাজে জমা বারুদে আগুন ধরে যাওয়ার কারণে বিস্ফোরণ হয়ে জাহাজটির সলিলসমাধি হয়।
মনে করা হয়, জাহাজটি যখন ডোবে তখন সেটির মধ্যে বিপুল স্বর্ণ-রূপা মজুত ছিল। জাহাজের সঙ্গে সেগুলোও সমুদ্রে তলিয়ে যায়।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭০৮ সালে পানামার পোর্টোবেলো থেকে ১৪টি বাণিজ্য জাহাজ এবং তিনটি যুদ্ধজাহাজের একটি বহর যাত্রা শুরু করে। বারুর কাছে ব্রিটিশ বাহিনীর মুখোমুখি হয় তারা।
দুইপক্ষের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ চলাকালীন সেই বিপুল স্বর্ণ-রূপা থাকা স্পেনীয় জাহাজটি ডুবে যায়।
এরপর ২০১৫ সালে কলম্বিয়ার নৌসেনার ডুবুরিদের দল সমুদ্রের প্রায় তিন হাজার ফুট নীচে ডুবে থাকা ওই জাহাজটি আবিষ্কার করে।
২০২২ সালে জাহাজের গুপ্তধনের কয়েকটি ছবিও নাকি তুলে আনা হয়েছিল। তারপর থেকে আরও জোরকদমে গুপ্তধন খোঁজার কাজ চলছে।
সমুদ্রের তলার সেই গুপ্তধন নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। বলিভিয়ার ‘কাহারা কাহারা’ নামে এক আদিবাসী গোষ্ঠী বহু দিন ধরে দাবি করে আসছে যে, এই সম্পত্তির উপর তাদের অধিকার রয়েছে।
‘কাহারা কাহারা’ গোষ্ঠীর দাবি, স্পেন তাদের পূর্বপুরুষদের স্বর্ণ-রূপা খনন করতে বাধ্য করেছিল, যা ওই গুপ্তধনের অংশ।
অন্যদিকে, আমেরিকার এক সংস্থা সমুদ্রে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন নিজেদের বলে দাবি করেছে। ওই সংস্থার দাবি, ১৯৮১ সালে তারা ওই জাহাজের অবস্থান খুঁজে বের করেছিল। সংস্থাটির অভিযোগ, অর্ধেক সম্পত্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৎকালীন কলম্বিয়া সরকার তাদের কাছ থেকে সেই তথ্য হাতিয়ে নেয়।
তবে সেইসব বিতর্কে কর্ণপাত না করে কলম্বিয়া সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই সমুদ্র থেকে সম্পদ তুলে আনার এই অভিযান শেষ করা হবে। কলম্বিয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রী জুয়ান ডেভিড কোরেয়া জানিয়েছেন, শিগগিরই গুপ্তধন উদ্ধার করা হবে। সূত্র: ডেইলি মেইল
বিডি প্রতিদিন/আজাদ