যুক্তরাজ্যের আর দশটা সাধারণ নারীর মতই একজন সারা রিওবাক। গত বছর তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে আসেন একটি ইন্টার্নশিপের জন্য। গত বছর একটি নাইটক্লাবের ভেতরে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। একটি বদ্ধ কামরায় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন এক ব্যক্তি। প্রায় এক বছর পর তাকে যে ব্যক্তি ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিলেন সেই ব্যক্তিকেই আবেগঘন চিঠি লিখেছেন তিনি। খবর ডেইলি মেইল এর।
নিজের সেই খোলা চিঠি সম্পর্কে সারা রিওবাক বলেন, নিজেকে ধর্ষণের বিষাক্ত ও সহিংস বাস্তবতা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে তিনি এটি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন কীভাবে আদালত কক্ষে নিজের হামলাকারীর মুখোমুখি হয়েছিলেন সে সম্পর্কেও।
সারার এই চিঠি পড়ে যে কেউ শিউর উঠতে পারেন। কারণ যেভাবে তিনি তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন তা সত্যিই ভয়ানক। চিঠিতে সারা বলেন, ‘প্রিয় ব্যক্তি, আমি আপনাকে এই ডিসেম্বরের ঠান্ডা বিকেলে লিখছি, আমাকে ধর্ষণচেষ্টার প্রায় এক বছর পর। কারণ এত দিনে প্রথমবারের মতো কাগজ-কলম নিয়ে বসার মতো যথেষ্ট শক্তি অর্জন করেছি আমি। আমি আপনাকে লিখছি কারণ আজ বিকেলে আমাদের আবার দেখা হলো। তবে আশপাশের পরিবেশ আগের মতো ছিল না। আপনার হাত পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল, সে দুটি আমার শরীরকে আঁকড়ে ধরার মতো অবস্থায় ছিল না।’
তিনি লিখেছেন, ‘আপনি বলেছেন যে আপনি যা করেছেন তা খুব অল্প সময়ের জন্য ছিল। আপনি আমাকে ২০ মিনিটের জন্য একটি ঘরে বন্দি করেননি, আমার পোশাক খুলে ফেলার চেষ্টা করেননি। আপনি আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেননি। আপনি বলেছেন মেঝেতে আমার শরীরের ওপর আপনার শরীর ছিল কারণ অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য পা হড়কে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলাম আমি।আপনি আমাকে জোর করে মাটিতে ফেলে আমার ওপর চেপে বসেছিলেন। এরপর আমি আপনাকে আমার দুই পায়ের মাঝখান থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলতে পেরেছিলাম। কারণ আপনি সিদ্ধান্ত নেননি যে আপনি থেমে যাবেন। আমি আপনাকে থামতে বাধ্য করেছিলাম। আপনার চোখগুলো ছিল কালো এবং আপনি সরাসরি আমার আত্মার ভেতর তাকিয়ে ছিলেন। এ সময় আপনি বললেন, আপনি আমাকে ছাড়তে চান না। আমি না বলেছিলাম, জানিয়েছিলাম যে আমি ট্যাম্পুন পরে আছি। এরপর আমি আপনাকে লাথি মারলাম, ভয়ে চিৎকার করলাম এবং কাঁদতে শুরু করলাম। আপনি আমাকে ধরে শরীরজুড়ে ব্যথা দিতে লাগলেন। অথচ আমি আপনাকে আমাকে ছোঁয়ার অধিকার দেইনি।’
চিঠিতে সারা তার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আদালতে আমি আমার মতো প্রতিটি নারী যারা আপনার মতো পুরুষদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন তাদের পক্ষে কথা বলব। প্রতিটি ধর্ষিত, নির্যাতিত, আক্রান্ত, ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্পর্শ হওয়া নারীর পক্ষে কথা বলব।’
এক বছর ধরে এসব কথা তার মনে বোঝা হয়ে রয়েছে বলে ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন সারা। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আমার সাথে কী হচ্ছে। ঠিক সেই সময়ে আদালত থেকে আমার কাছে চিঠি আসে। এর পরই আমি বুঝতে পারি যে বিষয়টি সারা বছর এড়ানোর চেষ্টা করেছি সেটির মুখোমুখি হতে হবে। যাতে আমার অবস্থান অন্যকেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে উৎসাহিত করে।’
চিঠির শেষে সারা লিখেছেন, ‘আমি চাই এটা পুরুষরাও পড়ুক। যাতে একজন আক্রান্ত নারীর মতো তাঁরাও অনুভূতিটা বুঝতে পারে। আমি চাই এসবের পরিবর্তন হোক।’
বিডি-প্রতিদিন/ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬/ তাফসীর-১৫