ভূতাত্ত্বিক ইভান স্মিথ নিউ ইয়র্ক সিটির জেমোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অফ আমেরিকার গবেষক। সেখানে তিনি এক বিরল ধরনের হীরকখণ্ড নিয়ে গবেষণা করছিলেন। যেটি ব্যতিক্রমীভাবে বড় হওয়ার কারণে বিখ্যাত ছিল। যা বিশেষভাবে খাঁটি ও ব্যয়বহুল।
ইংল্যান্ডের ক্রাউন জুয়েলের অংশ ৩ হাজার ১০৬ ক্যারেটের কুলিন্যান ডায়মন্ডসহ এই হীরকখণ্ডগুলো পৃথিবীর অন্যান্য বেশির ভাগ হীরকখণ্ডের চেয়ে সম্পূর্ণই ভিন্ন পরিবেশে গঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হতো বহুদিন ধরেই।
সম্প্রতি সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে স্মিথ এই অনুমান নিশ্চিত করেছেন। এতে তিনি প্রথম শারীরিক প্রমাণ উদঘাটন করেছেন যে, পৃথিবীর গভীর স্তরটি ধাতব পদার্থে পূর্ণ।
আমরা সাধারণত ভেবে আসছিলাম এই স্তরটি শুধু পাথুরে একটি স্তর। কিন্তু এই হীরকখণ্ডগুলো আমাদের বলছে এই স্তরে শুধু পাথরই নয় আরও অনেক কিছু আছে।
পৃথিবীর গভীর স্তরটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের জ্ঞান এখনো অনেক সীমিত। কারণ বিজ্ঞানীরা কখনোই নিজের চোখে তা দেখতে পারেননি।
বেশির ভাগ হীরকখণ্ডেরই উৎপত্তিস্থল ভূ-অভ্যন্তরের ৯০ থেকে ১২০ মাইলের মধ্যে। আরও গভীর থেকে আগ্নেয়গিরির উদগীরণের মাধ্যমে সেগুলো বেরিয়ে এসেছে। এগুলোর মূল উৎপত্তিস্থল অন্তত ২২৪ থেকে ৪৪৬ মাইল নিচে।
শুধু হীরকখণ্ড দেখেই তাদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। বরং তাদের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিটাও জানা জরুরি।
স্মিথ ৫৩টি হীরকখণ্ড বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি দেখতে পেয়েছেন, এই বিশাল হীরকখণ্ডগুলো এমন এক তরল থেকে গঠিত হয়েছে যা লৌহ, নিকেল, কার্বন এবং সালফারের যৌগ থেকে তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য উপাদানও রয়েছে।
আর যেহেতু এই পদার্থগুলো শুধু তীব্র উচ্চচাপের মধ্যেই উৎপন্ন হওয়া সম্ভব সেহেতু পৃথিবীর অনেক গভীরেই শুধু সেগুলোর উৎপত্তিস্থল হতে পারে।
এই দুটি পর্যবেক্ষণ নির্দেশ করে পৃথিবীর গভীরে ধাতব পদার্থে পরিপূর্ণ। বিষয়টি এর আগে শুধু তাত্ত্বিকভাবেই বিশ্বাস করা হতো। কিন্তু এর স্বপক্ষে এবার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেল।
কিন্তু বড় বড় হীরকখণ্ড নিয়ে স্মিথের গবেষণা এখনো শেষ হয়নি। ভবিষ্যতে তিনি যে ধাতব স্যুপ থেকে হীরকখণ্ডগুলো তৈরি হয় তাতে আর কি কি উপাদান আছে তা খতিয়ে দেখবেন। আর হীরকখণ্ডে কার্বন বা সালফারের যে রাসায়নিক ছাপ পাওয়া গেছে তা বিশ্লেষণ করে ওই ধাতব পদার্থগুলো কোথা থেকে এসেছে তা বের করারও চেষ্টা করা হবে।
সবে গবেষণার সূচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্মিথ।
বিডি প্রতিদিন/ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬/ এনায়েত করিম