দুনিয়াজুড়ে সীমিত সম্পদ নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি। বাড়ছে অপচয়, ধনী আর দরিদ্রের বৈষম্য, হিংসা, অহংকার, সহিংসতা। কিন্তু সেই দিন আর খুব দূরে নেই, যখন মানবসভ্যতাই ধ্বংস হয়ে যাবে!
ভাবছেন মার্কসবাদী কোনও তাত্ত্বিকের কথা হুবুহু বসিয়ে দিয়েছি? মোটেই না। নাসা-সমর্থিত গবেষণায় উঠে এসেছে এমন হুঁশিয়ারি। এই গবেষণা বিস্তারিতভাবে ছাপা হবে ইকোলজিক্যাল ইকনমিকস জার্নালে।
আমরা কেমন ভবিষ্যৎ রেখে যাচ্ছি আমাদের উত্তরসূরীদের জন্য? এর উত্তর খুঁজতে এগিয়ে এসেছিলেন কিছু গবেষক। তাদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে নাসা (আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা)। গবেষণা চালিয়ে তারা যা বলেছেন তা বাস্তবিক অর্থেই ভীতিপ্রদ।
সেই দলের জনৈক গবেষক সাফা মোটেসারি বলেছেন, যে কোনও সভ্যতা ধ্বংসের পেছনে ধনীদের একটা ভূমিকা থাকে। দুনিয়াজুড়ে ধনীরা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে। যথেচ্ছভাবে সম্পদ আহরণ করছে। ফেলে-ছড়িয়ে নষ্ট করছে বিপুল সম্পদ। অথচ সংযম থাকলে ওই সম্পদ বাঁচানো যেত। ভবিষ্যতে সঙ্কট তৈরি হত না।
তিনি বলেন, জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বেড়ে চলেছে। শিল্পায়ন জরুরি হয়ে পড়ছে। শিল্পায়নের নামে যথেচ্ছভাবে বনজ ও খনিজ সম্পদ আহরণ করা হচ্ছে। এর ফলে সম্পদের ভাঁড়ারে যেমন টান ধরছে, তেমনই ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। বড় বড় শিল্পপতিরা 'ওই চলে যাচ্ছে' গোছের মনোভাব নিয়ে চলছেন। পরিবেশের ক্ষতি পূরণ করতে কোনও উদ্যোগ নেই।
এই পরিস্থিতিকে তিনি বলেছেন 'স্ট্রেচিং অফ রিসোর্সেস' বা সম্পদের সঙ্কোচন।
এদিকে, শিল্পায়ন যত বাড়বে, পুঁজিপতিদের হাতে মুনাফা তত বাড়বে। মুনাফা যত বাড়বে, সমাজে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য তৈরি হবে। যত ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বাড়বে, তত সমাজে অশান্তি বাড়বে। এমন একটা দিন আসবে, যখন খুব অল্প সম্পদ অবশিষ্ট থাকবে। ধনীরা তার দখল ছাড়তে চাইবে না। গরিবরা তা ছিনিয়ে নিতে চাইবে। ফলে অশান্তির চাকা ঘুরতেই থাকবে। লাগাতার হানাহানিতে ধ্বংস হয়ে যাবে মানবসভ্যতা।
প্রতিবেদনে গবেষকরা লিখেছেন, 'এলিটস ইভেনচুয়ালি কনজিউম টু মাচ, রেজাল্টিং ইন আ ফেমিন অ্যামাং মাসেস দ্যাট ইভেনচুয়ালি কজেজ দ্য কোলাপ্স অফ সোসাইটি' বা ধনীরা সম্পদ আহরণ করে প্রচুর পরিমাণে, যার ফলে জনগণ দুর্ভিক্ষপীড়িত হয়ে পড়ে এবং সমাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
এই অবস্থা থেকে বাঁচতে অবিলম্বে সম্পদের সুষম বণ্টন করে অপচয় রোখার আর্জি জানিয়েছেন গবেষকরা।
কিছুদিন আগে একই কথা বলেছিলেন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ভিনগ্রহে মনুষ্যবসতি তৈরির উপায় বাতলান তিনি। এই পরামর্শ গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে নাসা।
ঊনবিংশ শতকে জার্মান দার্শনিক নিৎশে বলেছিলেন, 'রাতের আকাশে আমি তারা দেখি না। দেখি প্যাঁচা, বাদুড় আর উন্মাদ চাঁদ।'
মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই আলোড়নকারী উক্তি করেছিলেন তিনি। দেখা যাচ্ছে, নিৎশের সেই পর্যবেক্ষণই সত্যি হওয়ার পথে!