বউ দিন, ভোট নিন! ভারতের হরিয়ানার যুবকদের দাবি একটাই। কোন অবৈধ যৌনতার প্রস্তাব নয়, ন্যায্য দাবি নিয়েই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের ঘিরে ধরছেন অবিবাহিত যুবকরা। তাদের এ দাবির মুখে লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে ভোট চাইতে গিয়ে মহাবিপাকে পড়ছেন প্রার্থীরা। বউ পাবেন কোথায়? আর ঝাকে ঝাকে অবিবাহিত যুবককে শান্তনাই বা দেবেন কি করে? কন্যাভ্রূন হত্যার কারণে গত কয়েক দশকে এখানে যে নারী-পুরুষের সংখ্যার পার্থক্যটা বিস্তর বেড়ে গেছে। বিবাহযোগ্য মেয়ে খুঁজে পাওয়াই এখন দুস্কর।
যে কোনও রাজনীতিক দলের প্রার্থী গ্রামেগঞ্জে প্রচারে গেলেই ঘিরে ধরছে অবিবাহিত যুবকরা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছে, ভোট আপনাকেই দেব। কিন্তু বিবাহযোগ্যা সুলক্ষণা মেয়ে খুঁজে দিতে হবে, যাকে সংসারে আনা যায়!
হরিয়ানা, পাঞ্জাবে লিঙ্গানুপাত খুবই করুণ। হরিয়ানায় প্রতি এক হাজার পুরুষে মেয়ের সংখ্যা হল ৮৭৭ জন। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে, অনেক গ্রামে ছেলেরা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছে, কবে বিয়ে হবে! কিন্তু বিবাহযোগ্যা মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাড়ছে হতাশা। এখন তাই অবিবাহিত যুবকরা এটাকে ইস্যু করে মুখ খুলছে রাজনীতিক দলগুলির কাছে।
২০০৯ সালে অবিবাহিত যুবক পবন কুমার প্রতিষ্ঠা করেন এই কুঁওয়ারা ইউনিয়ন বা কুমারদের সভা। এখন তিনি এর চেয়ারম্যান। বললেন, "হরিয়ানার অল্পবয়সী ছেলেদের অবস্থা খুবই খারাপ। একে তো চাকরি-বাকরির সুযোগ নেই। তার ওপর গাদাগাদা ছেলে বছরের পর বছর বসে আছে বিয়ের অপেক্ষায়। সমবয়সী মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। বাইরের রাজ্যে আমাদের বয়সী ছেলেরা কত ভালো আছে। বয়স হলেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কংগ্রেস, বিজেপি, যারাই আমাদের কাছে আসছে, তাদের বলছি, আমাদের বউ চাই। যদি জুটিয়ে দিয়ে পারেন, ভোট পাবেন।"
হিসার লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী সম্পৎ সিং বললেন, "এর জন্য দায়ী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌতালা। উনি ভোটের সময় অল্পবয়সী ছেলেদের কাছে গিয়ে বলতেন, আমাকে ভোট দাও। তোমার জন্য সুন্দরী বউ এনে দেব। এই ইস্যু লোকের মাথায় ঢুকিয়ে উনি সব গড়বড় করে দিয়েছেন। আমি মানছি, দিনের পর দিন কন্যাভ্রূণ হত্যার কারণে আজ এই সঙ্কট। কিন্তু অবিবাহিত ছেলেদের মাথায় এ সব ঢুকিয়ে দেওয়া কি ঠিক?"
যমুনানগরের রেড ক্রস সোসাইটির সম্পাদক শ্যামসুন্দর বলেন, হরিয়ানায় এটা একটা জটিল সমস্যা। শহরের পয়সাওয়ালারা উত্তরপ্রদেশ, বিহার এমনকী পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিয়ে করে বউ আনছে। কিন্তু সাধারণ ঘরের ছেলেদের পক্ষে তো সেটা সম্ভব নয়। সারা রাজ্যে সাত হাজার গ্রাম রয়েছে। প্রতিটি গ্রামে অন্তত ১৫০-২০০ জন ছেলে আছে, যাদের বিয়ের বয়স হয়েছে অথচ বিয়ে হয়নি। কন্যাভ্রূণ বাঁচাতে সর্বস্তরে প্রচার চালানো হলেও অবস্থা পাল্টায়নি। এমন চলতে থাকলে রাজ্যে খুব শিগগির বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে বলে তাঁর আশঙ্কা। দিল্লির মতো এখন হরিয়ানাতেও ইভ টিজিং, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।