'চাকরির আগে আমাদের আগে কখনো দেখা হয়নি। অফিসেই সহকর্মী হিসেবে আমাদের পরিচয় ঘটে। টানা ১১ মাস ডেটিং করি আমরা। নিজেদের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছি। কিন্তু কেউ বোঝেনি আমরা সম্পর্কে জড়িয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমরা স্থায়ী বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি'। এভাবেই নিজের অফিস রোমান্সের সফল পরিণতির কথা তুলে ধরলেন জ্যাকুলিন স্মিথ। সাধারণত অফিস রোমান্সকে কেউ ভালো চোখে দেখেন না। কিন্তু জ্যাকুলিনের মতে, অফিসের এমন কোনো সহকর্মীর দেখা পেতেই পারেন যিনি আপনার জীবনের সত্যিকার সঙ্গী বা সঙ্গিনী হতে পারেন। এ মানুষের সন্ধান যেকোনো স্থানেই মিলতে পারে। তবে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে হলে কিছু নিয়ম পালন করতে হবে। কারণ আপনারা একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আর তা প্রেমের জায়গা নয়। ক্যারিয়ার বিল্ডার তাদের এক জরিপে জানায়, ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। এদের এক-তৃতীয়াংশের সম্পর্কে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। নিচে সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করা হলো :
ধীর গতিতে এগোন : পরিচয় এবং এক সঙ্গে কাজ করা থেকে ভালো লাগার বিষয়টি ঘটে। মন দেয়া-নেয়ার পর সম্পর্কে ধীর গতিতে এগিয়ে নিতে হবে। এমনিতেই সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে তাকে অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে নিতে হয়। কিন্তু অনেকেই ভুল করেন। এ মানুষটি আপনার ক্যারিয়ারের জন্যে ক্ষতিকর হবেন কিনা তা ভালো মতো বুঝতে ছুটির দিনটি ডেটিংয়ের দিন হতে পারে।
চুপচাপ থাকুন : প্রাথমিক অবস্থায় দুজনকেই বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ থাকতে হবে। কারণ অন্যরা বুঝে ফেললেই খবরটি অফিসের মুখরোচক গসিপ হিসেবে ছড়িয়ে পড়বে। কাছের সহকর্মীদের কাছে বিষয়টি প্রকাশ করা নিয়েও দুজন আলাদাভাবে আলোচনা করে নিন। তবে যত বিলম্ব করে সম্ভব কাজটি করতে হয়।
নিয়মে আবদ্ধ হোন : প্রথমেই কিছু মৌলিক নিয়ম চালু করে তা দুজন মেনে চলবেন বলে ঠিক করুন। যেমন দুজনের আচার-আচরণে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাবে না, কাজের মাঝখানে কখনো এ সম্পর্ক নিয়ে ব্যস্ত হবেন না, পেশাদার থাকতে হবে। তা ছাড়া সমস্যা হয়ে গেলে আপনাদের দ্বিতীয় পরিকল্পনা কি হবে তাও ঠিক করে রাখুন।
সব সময় পেশাদার থাকুন : এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনারা দুজনই সেখানে কাজ করছেন। কাজেই এই বিষয়টি থেকে বেরিয়ে আসা চলবে না। পেশাদার থাকতে হবে, এর বাইরে রোমান্স চলতে পারে।
শ্রদ্ধাবোধ রাখুন : এমন সহকর্মী থাকতে পারে যাকে আপনি বলে দিলেন। কিন্তু তাকে বলার কারণে সঙ্গী-সঙ্গিনীর সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে আপনার। তার সমস্যা হয় এমন কাজ আপনি করতে পারেন না। সম্পর্কের কথা বলে বেড়ানো ওই সহকর্মীর জন্যে অস্বস্তির কারণ হলে তা এড়িয়ে যেতে হবে।
ভালোবাসার ঝগড়া হবে বাইরে : প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে। এগুলো আসলে ভালোবাসা মিশ্রিত বিতণ্ডা। কিন্তু এসব আচরণ অন্যান্য সহকর্মীর সঙ্গে নিশ্চয়ই করেন না। কাজেই একজনের সঙ্গে করলে বিষয়টি অন্যের নজরে পড়বে। তাই এসব ঝগড়া সব সময় অফিসের বাইরে।
মনের অমিল কাজে প্রভাব ফেলবে না : দুজনের মধ্যে টানাপড়েন চলতে পারে। মন খারাপ হলে বা মেজাজ বিগড়ে গেলে তার প্রভাব কাজে পড়তে দেবেন না। এতে শুধু আপনিই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সবার আগে কাজ : মনে রাখবেন, যত গভীর প্রেমেই জড়ান না কেন, সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ অফিসের কাজ। তাই অফিসে অফিসে ওটা নিয়েই পড়ে থাকুন। সেখানে ভালোবাসা লেনদেনে কোনো প্রয়োজন নেই।
ফাঁদ না তো? : এ বিষয়েও সাবধান থাকতে হবে। সাধারণত অফিসে কেউ যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন কি না, তা জানতে চায় কর্তৃপক্ষ। বিপদে ফেলতে কেউ ভালোবাসার অভিনয় করছে কিনা তাও যাচাই করে নেয়া জরুরি। কারণ সামান্য ভুলে যৌন নিপীড়ক হিসেবে নাম হয়ে যেতে পারে।
অফিস সংস্কৃতি কি দৃষ্টিতে দেখে? : অফিস রোমান্সের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কি কোনো নিয়ম লিপিবদ্ধ রয়েছে? এটা জানার চেষ্টা করুন। অলিখিত নিয়ম থাকলেও তা জেনে নিতে হবে। অফিস সংস্কৃতি কি এর সঙ্গে খাপ খায়? উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন ইত্যাদি জেনে নেয়া আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
মাধ্যম যখন মোবাইল : সবার দৃষ্টি এড়াতে মোবাইল মেসেজ বা ইমেইল অনেকের ভালোবাসা লেনদেনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। যদি মোবাইল ব্যবহার করেই থাকেন, তবে অবশ্যই সাবধান থাকবেন। অন্যের দৃষ্টিগোচর হলে কিছুই চাপা থাকবে না। আবার নিপীড়নের অভিযোগের ক্ষেত্রেও এগুলো প্রমাণ হিসেবে থাকবে।
লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক করে নিন : আপনি কি স্রেফ সময় কাটানোর জন্যে সম্পর্কে জড়াচ্ছেন? তাহলে বিষয়টি অনৈতিক। কারণ সম্পর্ক কতদূর গড়াবে তা বলা যায় না। তা ছাড়া যার সঙ্গে জড়িয়েছেন তিনি হয়তো স্থায়ী বন্ধনের স্বপ্ন দেখছেন। এ ক্ষেত্রে আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার থাকতে হবে। যদি স্থায়ী সম্পর্কের কথা না ভেবে থাকেন, তবে অপরজনকে তা আগেই জানিয়ে রাখুন। প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কের বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে। কারণ অফিসে সম্পর্কে যত জড়াবেন, কাজ থেকে তত বেশি দূরে যেতে থাকবেন। প্রতিষ্ঠান এ ধরনের বিষয়ে কঠোর হলে আপনাকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার
বিডি-প্রতিদিন/১০ আগস্ট ২০১৫/শরীফ