১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মধ্য আমেরিকার নিম্নভূমির বনাঞ্চলে এক অদ্ভুত সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। সভ্যতার নাম 'মায়া'। মায়ানরা অধিকাংশ প্রাথমিক সভ্যতা নির্মাণকারীদের মতো শহুরে জীবন যাপন করতো না। বরং তাদের বসবাস ছিল ছোট ছোট কৃষি-গ্রামে। মজার ব্যাপার হলো মায়ানদের কিছু খাবার এতোকাল পরও বেশ জনপ্রিয়। কালক্রমে এ খাবারগুলোর ধরণই কেবল বদলেছে।
টরটিলা বা রুটি
হাতে বানানো আটার রুটি এবং রুটি বানানোর পদ্ধতিটি এসেছে মায়া সভ্যতা থেকে। মায়ানরা ভুট্টার আটা থেকে রুটি বানাতো। মায়া সভ্যতার ইতিহাস থেকে জানা যায়, মায়ানদের মাসা (ভুট্টার আটার খামির) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রধান স্থানে থাকতো। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত গুয়াতেমালার হাতে বানানো কর্ন টরটিলার স্বাদ মায়ান সভ্যতার স্বাদের নিদর্শন হয়ে আছে। গোল গোল খামির থেকে হাতে চেপে চেপে চ্যাপ্টা গোল রুটির আকারে গড়া হয় এই কর্ন টরটিলা।
কফি
কফির প্রথম উৎপত্তি মায়া সভ্যতাতেই। মায়ানদের ফসলের জমির একাংশে উৎপাদিত হতো কফি। তারা কফি দিয়ে তৈরি পানীয় পান করতো মনের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য। পরবর্তীতে স্প্যানিশরা মায়ানদের জমি দখল করে নিলে কফির উৎপাদন বেশ কমে যায়। ১৮০০ সালে গুয়াতেমালার ডিরেক্টর জাস্টো রুফিনো ব্যারিওস প্রথম কফির গুরুত্ব বুঝতে পারেন ও কফি রফতানির ব্যবস্থা করে গুয়াতেমালাকে অর্থনৈতিক দিক হতে সমৃদ্ধ করতে শুরু করেন।
চকলেট
মায়ানরাই সর্বপ্রথম কোকো ফল থেকে বীজ নিয়ে হট চকলেট তৈরির কাজে ব্যবহার করা শুরু করে। তারা অবশ্য চকলেট বার তৈরি করেনি বা দুধ জাতীয় কিছুই যোগ করেনি। মায়ানরা চকোলেটকে দেখতো দেবতাদের দেয়া একটি পবিত্র উপহার হিসেবে। তারা বিশ্বাস করতো কোকো ফসলের রক্ষাকর্তা ছিলেন ব্যবসা বাণিজ্যের দেবতা 'এক চুয়াহ'।
সকালের নাস্তা
সকালের নাস্তায় ডিম, একটু সবজি, এক টুকরো পনির, ফল, আটার রুটি ও এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি সহজ ও স্বাস্থ্যকর একটি নাস্তা। আর এই নাস্তার তালিকাটি মায়া সভ্যতার অবদান। মায়ানদের সকালের নাস্তায় ছিল ডিম ঝুরির সঙ্গে বিন, কলার একটি প্রজাতি প্লান্টেইন, টরটিলা (রুটি), সাদা পনির ও নিজেদের উৎপাদিত তাজা কফির বীজ থেকে তৈরি কফি।