ঘুমের ঘোরে কথা বলা অর্থাৎ স্লিপ টকিং বা সোমনিলোকি (somniloquy) আসলে ঘুমের এক ধরনের বিভ্রাট যার ফলে মানুষ ঘুমিয়ে থাকলেও নিজের অজান্তেই কথা বলতে থাকে। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখতে দেখতে নিজে থেকেই কথা বলে। আবার অনেক সময়ে দেখা যায়, ঘুমন্ত মানুষটির সঙ্গে জাগ্রত কেউ কথা বললে তিনি তার উত্তর দিচ্ছেন ঘুমের মাঝেই। এই কথা হতে পারে একেবারেই দুর্বোধ্য আজেবাজে শব্দ, বিভ্রান্তিকর কথা এবং নালিশ, আপত্তি, কখনো আবার এই কথা হতে পারে সম্পূর্ণভাবে বোধগম্য এবং গোছানো।
কারা ঘুমের ঘোরে কথা বলেন?
ঘুমের ঘোরে কথা বলার ঘটনা যে কারোই হতে পারে। তবে বংশগতির সঙ্গে এর কিছুটা সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায় এবং নারীদের চাইতে পুরুষ এবং বাচ্চাদের মাঝে বেশি দেখা যায়। তবে এটা বেশি হতে দেখা যায় তখনই যখন ব্যক্তিটি ভুগতে থাকেন ঘুমের অভাবে। অ্যালকোহল এবং ড্রাগ গ্রহণ, জ্বর, বিষণ্ণতা এসব কারণেও দেখা যায় স্লিপ টকিং। এছাড়া স্লিপ ওয়াকিং, স্লিপ অ্যাপনিয়া ইত্যাদি সমস্যার সঙ্গেও এর সংযোগ থাকতে দেখা যায়।
স্লিপ টকিং কখন হয়?
রাত্রের যে কোনও সময়ে এবং ঘুমের যে কোনও পর্যায়ে স্লিপ টকিং হতে দেখা যায়। রাত্রির প্রথম পর্যায়ে মানুষ থাকে গভীর ঘুমে এবং তাদের মস্তিষ্ক তখন 'অফ' থাকে, সারাদিনের ক্ষতি মেরামত করতে থাকে। এই সময়ে স্লিপ টকিং সাধারণত অর্থহীন কথাবার্তা হয়ে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম হালকা হয়ে আসে আর ঘুমন্ত মস্তিষ্ক হয়ে ওঠে ভীষণ সক্রিয়। সে তখন বিভিন্ন আবেগ, অনুভূতি এবং স্মৃতি নাড়াচাড়া করতে থাকে। এমন সময়ে কেউ ঘুমের ঘোরে কথা বললে তা হয়ে থাকে অর্থপূর্ণ। এমনকি এ সময়ে তার সঙ্গে কথোপকথন করাও সম্ভব হয়।
ঘুমের ঘোরে কথা বলা কি ক্ষতিকর?
শারীরিকভাবে কোনো ক্ষতি না হলেও ঘুমের ঘোরে কথা বলার ব্যাপারটা নিয়ে লজ্জায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ ঘুমের ঘোরে অনেক সময়েই গোপন কথা বলে কেউ কেউ। আবার কথা বলার কারণে তার শয্যাসঙ্গী বা রুমমেট বিরক্ত হতে পারে।
চিকিৎসা
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ঘুমের ঘোরে কথা বলা একটা ক্ষণস্থায়ী অবস্থা। এটা কিছুদিনের মাঝে ঠিক হয়ে যায় এবং কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। কিন্তু এটা যদি সপ্তাহে বেশ কয়েকবার হতে দেখা যায়, শয্যাসঙ্গীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়, অন্যদের সামনে ঘুমাতে সেই ব্যক্তির সমস্যা হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটাই উত্তম।
স্লিপ টকিং এড়াতে যা করবেন
ঠিক সময়ে ঘুমাতে যান এবং যথাসময়ে উঠে পড়ুন। রাতে ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। সন্ধ্যার পর চা বা কফি জাতীয় পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। ঠিকমতো ঘুম হলে, দুশ্চিন্তা কম থাকলে স্লিপ টকিং কমে আসে। আর সমস্যা বেশি প্রকট আকার ধারণ করলে সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য নিতে পারেন।